নিজস্ব প্রতিবেদক
পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা
আরাভ খানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে বাদীর সাক্ষ্য
পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম খানের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ঢাকা প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল আতিক বিন কাদেরের আদালতে জেরার মধ্য দিয়ে তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। এ নিয়ে মামলাটিতে ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্য দিয়ে একজনের শেষ হলো। এ মামলার অন্য আসামিরা হলো সুরাইয়া আক্তার কেয়া, রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হাসান ও দিদার পাঠান। তাদের মধ্যে আরাভ ও কেয়া পলাতক রয়েছে। এদিন কারাগারে আটক ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের উপস্থিতিতে মামলার বাদীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। জেরা শেষে আদালত পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৪ জুন ধার্য করেন।
২০২২ সালের ২৮ জুলাই এই মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলমের জবানবন্দি রেকর্ড করে আদালত। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই বনানীতে খুন হন পুলিশ পরিদর্শক মামুন। এ ঘটনার তিন দিন পর তার ভাই বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় রহমত উল্লাহ, রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় ওরফে হৃদিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর আদালত এ মামলার অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
যা আছে মামলার অভিযোগপত্রে : বনানীর ২ নম্বর সড়কের ৫ নম্বরের এক বাসায় নিয়ে আসামি দিদার, স্বপন, রহমত উল্লাহ পুলিশ কর্মকর্তা মামুনের হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে ওই তিন আসামির সঙ্গে মিজান, আতিক ও ছারোয়ার যুক্ত হয়ে মামুনকে নির্দয়ভাবে মারতে থাকে। এতে মামুন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। রাত ১০টার দিকে আসামি কেয়া (রবিউলের স্ত্রী), আফরিন ও মীম বাসা থেকে চলে যায়।
রাতের কোনো এক সময় সেখান থেকে চলে যায় রবিউলও। গভীর রাতে আসামি আতিক আসামি স্বপনকে ডেকে বলে, ‘দাদা, দেখেন তো পুলিশ কর্মকর্তার হাত-পা কেমন শক্ত মনে হচ্ছে।’ ভোরবেলায় তারা নিশ্চিত হয় যে মামুন মারা গেছেন। এরপর রহমত উল্লাহ সবাইকে বলে, লাশ গুম না করলে তারা সবাই বিপদে পড়ে যাবে। কারণ মামুন তার বন্ধু। সে-ই মামুনকে ফোন করে ডেকে এনেছে। রহমত উল্লাহর মুঠোফোনের শেষ কলটিও মামুনের। তখন স্বপন মুঠোফোনে রবিউলকে মামুনের মৃত্যুর বিষয়টি জানায়। স্বপন বলে, ‘এখন আমরা কী করব? আপনি সকালে এখানে আসেন।’
অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, দুটি বস্তা ও একটি সাদা কাপড় নিয়ে বাসার নিচে আসে রবিউল। তার কাছ থেকে বস্তা নিয়ে বাসার ওপরে যায় দিদার। এ সময় রহমত উল্লাহ, আতিক ও মিজানকে সঙ্গে নিয়ে বাসার নিচে গিয়ে তার ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি লিফটের দরজার কাছে নিয়ে রাখে। সকাল ৭টার দিকে স্বপন, দিদার ও আতিক মিলে মামুনের লাশ লিফটে করে নিচে নামায়। সবাই মিলে গাড়ির পেছনের অংশে লাশ তোলে। পরে রহমত উল্লাহ ওই গাড়ি চালিয়ে বনানীর রোডে যায়। তখন গাড়িতে ছিল দিদার, স্বপন ও আতিক। সেখানে রবিউল, তার স্ত্রী আসামি কেয়া, মেহেরুন্নেছা ও মীমকে সঙ্গে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলসহ অপেক্ষায় ছিল। পরে সেখান থেকে রবিউলের মোটরসাইকেল অনুসরণ করে রহমত উল্লাহ গাড়ি চালাতে থাকে।
খিলক্ষেতের একটি পাম্পে গিয়ে মোটরসাইকেলে তেল নিয়ে রবিউল ফিরে আসে। আর গাড়ি নিয়ে রহমত উল্লাহ যায় গাজীপুরের দিকে। এ সময় রবিউলের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে কথা বলে দিদার ও স্বপন। গাজীপুরের শিমুলতলীতে দিদার, স্বপন ও আতিক একটি দোকান থেকে সাত লিটার পেট্রোল কেনে। রবিউল আসামি স্বপনের মুঠোফোনে তেলের টাকা পাঠায়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে উলুখোলা থেকে আবদুল্লাহপুর যাওয়ার পথে একটি বাঁশবাগানে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে মামুনের লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর গাড়ি নিয়ে সবাই ঢাকায় ফিরে আসে।
"