নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ মার্চ, ২০২৩

রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার খুঁজতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশি পণ্যের নতুন বৈশি^ক বাজার খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে এখন চলমান অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে টেকসই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জনে পদক্ষেপ নিতে হবে। রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে এবং স্থানীয় বাজারকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি এসব পণ্যের জন্যে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। সোমবার (২০ মার্চ) তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে রপ্তানিবিষয়ক ১১তম বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক দেশে চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশি পণ্যের জন্যে নতুন বাজার খোঁজার সুযোগ বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে। আমাদের নতুন বাজার অন্বেষণ করতে হবে এবং রপ্তানি পণ্যের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। চার থেকে পাঁচটি রপ্তানি পণ্য ঠিক করতে হবে। অনেক দেশ আমাদের পণ্য আমদানি করতে চায়, তাই কোন দেশের কোন পণ্য দরকার, সেটি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সাল নাগাদ মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া বিদ্যমান রপ্তানি নীতিমালার সংশোধন, পরিবর্তন ও উন্নয়ন করে আরো ৪ কিংবা ৫ বছরের জন্যে নতুন রপ্তানি নীতিমালা প্রণয়নেরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, চলমান বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশে যে সব চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ তৈরি হতে পারে, তা বিশ্লেষণ করে নতুন রপ্তানি নীতি গ্রহণ করা উচিত।

শেখ হাসিনা বলেন, রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন, এ ছাড়া কিছুই অর্জন করা যাবে না। তিনি বলেন, একটি দেশের অর্থনীতি মূলত রপ্তানির ওপর নির্ভর করায় আমরা রপ্তানি বাড়াতে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে নিয়ে ভাবছি। কাজেই, আমরা এর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী রপ্তানি বাড়াতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার তাদের সব ধরনের সহায়তা দেবে। তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আমরা বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি এবং এর জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে রপ্তানি খাতের বিকাশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বেসরকারি খাতের জন্য সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য তাঁর সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৩৭.০৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ৩৩.৮৪ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, আমরা কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় রপ্তানি থেকে আয় ছিল ১৬.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এখন ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৬০.৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। শেখ হাসিনা রপ্তানির জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করতে এবং পোশাক, ওষুধ ও ডিজিটাল ডিভাইসসহ রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে, তাই একে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বৃদ্ধিকে বিবেচনায় রেখে প্রধানমন্ত্রী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

প্রধানমন্ত্রী খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীতা উল্লেখ করে বলেন, ‘অনেক দেশ আমাদের খাদ্য আমদানি করতে ইচ্ছে প্রকাশ করছে। এ জন্য আমাদের খাদ্যসামগ্রী রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে। এ ছাড়া গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নবনির্মিত ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ সাবমেরিন ঘাঁটির কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজারের পেকুয়ায় নবনির্মিত ঘাঁটির সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে এমনভাবে গড়ে তুলছে যাতে বাংলাদেশ কোনোভাবে আক্রান্ত হলে তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করবো না। তবে, যদি কখনো তেমন পরিবেশ-পরিস্থিতি হয়, তাহলে যেন আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি সেইভাবে আমাদেরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং সেইভাবেই আমরা আমাদের বাহিনীগুলোকে তৈরি করে দিচ্ছি।’ জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ এর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমর সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি, আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। তবে, আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক, তারা সব ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করুক সেটাই আমরা চাই। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের সশস্র বাহিনী বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সেখানে কর্তব্য পালনে তারা যেন কোনোভাবেই পিছিয়ে না থাকে সেভাবেই আমরা এই বাহিনীগুলোকে প্রস্তুত করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্য পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন- সেই ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, এই সমুদ্র সীমায় আমাদের যে বিশাল সম্পদ রয়েছে, সেই সমুদ্র সম্পদ যাতে আমাদের অর্থনীতিতে কাজে লাগে সে জন্য ‘ব্লু ইকোনমি’ নীতি বাস্তবায়ন করছে সরকার। তাছাড়া, এক্ষেত্রে আমাদের পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা থেকে শুরু করে অনেক সুযোগ রয়েছে কাজ করার।

সরকারপ্রধান বলেন, বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা আরো জোরাল হবে। অনুষ্ঠানে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি থেকে নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত একটি চৌকষ দল প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটির প্রধান কমোডর এম. আতিকুর রহমানের কাছে কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করেন। এরপরই ঘাঁটিতে প্রথমবারের মত পতাকা উত্তলন করা হয়। অনুষ্ঠানে সাবমেরিন ঘাঁটির ওপর একটি সংক্ষিপ্ত অডিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন প্রদর্শিত হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close