প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ মার্চ, ২০২৩

পুতিনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে মূল্যহীন বলল রাশিয়া

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের শিশুদের জোরপূর্বক রাশিয়ায় নিয়ে গেছেন এবং এর মাধ্যমে তিনি যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই অভিযোগে শুক্রবার (১৭ মার্চ) তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। তবে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে মূল্যহীন হিসেবে অভিহিত করেছে রাশিয়া।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা শনিবার এ ব্যাপারে বলেছেন, রোম সংবিধির আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য রাশিয়ান এবং এই আদালতের নির্দেশ মানার জন্য বাধ্য নয়। রাশিয়া এ আদালতকে কোনো সহযোগিতা করে না। আন্তর্জাতিক আদালত থেকে আসা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইনগতভাবে আমাদের কাছে ভিত্তিহীন। খবর বিবিসি, সিএনএন ও আল জাজিরার।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত অবস্থিত নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে। এটি ১৯৯৮ সালে রোম সংবিধি নামক একটি চুক্তির মাধ্যমে স্থাপন করা হয়। এ আদালত স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য। আর সদস্য দেশগুলোর যেকোনো ব্যক্তির বিচার করার এখতিয়ার আছে এই আদালতের। তবে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করা হয় ব্যক্তির, কোনো দেশের নয়। যেসব ব্যক্তি অপরাধের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি জড়িত তাদের ওপরই বেশি নজর রাখা হয়। বড় বিষয় হলো রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন কোনো দেশই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সদস্য নয়। অবশ্য সদস্য না হয়েও অতীতে এ আদালতের দেওয়া রায় মেনে নিয়েছে ইউক্রেন।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কারো অনুপস্থিতিতে বিচার করে না। ফলে পুতিনকে যদি বিচারের মুখোমুখি করতে হয় তাহলে রুশ কর্তৃপক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে এবং পুতিনকে আদালতে হাজির করতে হবে অথবা অন্য কোনো দেশে পুতিনকে আটক করে আদালতের হাজির করতে হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে যেতে এখন পুতিন ভয় পাবেন কি না- এ প্রশ্ন করা হয় রুশ প্রেসিডেন্ট দপ্তরের মুখপাত্র দিমিত্রো পেসকোভের কাছে। এর জবাবে তিনি বলেন, আমরা আইসিসির সদস্য নই। আইসিসি যে রায় দিয়েছে তা রাশিয়ার কাছে ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে এর বেশি কিছু বলার নেই আমার।

পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউক্রেন। দেশটির প্রসিকিউটর জেনারেল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব একটি সংকেত পেয়েছে যে, রাশিয়া হলো একটি অপরাধী দেশ এবং এর নেতারা ওএই নেতাদের যারা সহায়তা করছেন তাদের সংঘটিত অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এটি ইউক্রেন এবং আন্তর্জাতিক আইনের জন্য একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।’

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা করার পর থেকেই দেশটিতে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ছাড়াও তার দপ্তরের শিশু অধিকারবিষয়ক কমিশনার মারিয়া আলেক্সেভনা লোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আদালত এদিনএক বিবৃতিতে বলেছে, রুশ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের অঞ্চল থেকে জোরপূর্বক নাগরিকদের বিশেষ করে শিশুদের রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার মতো যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে পুতিনের বিরুদ্ধে।

জাতিসংঘের সহযোগিতায় তৈরি করা একটি তদন্ত প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার দাবি করা হয়, ইউক্রেনে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে রাশিয়া, যার মধ্যে রয়েছে জোরপূর্ব শিশুদের দেশান্তর করা। এ প্রতিবেদন প্রকাশের এক দিন পরই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close