নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ মার্চ, ২০২৩

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে দুই গ্রুপ মুখোমুখি

সাংবাদিকদের কাছে ডিএমপি কমিশনারের দুঃখপ্রকাশ

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) মুখোমুখি অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। বিকাল ৪টার দিকে তারা এই মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন।

এর আগে এ নির্বাচনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। ওই সময়ও দুই দলের সমর্থক আইনজীবীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দ্বিতীয় দিনের ভোট সকাল ১০টার পর শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের ভোটকেন্দ্রে দুই দলের আইনজীবীরা এসে জড়ো হন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জোরে জোরে স্লোগান দিতে থাকেন। একদল ‘ভোট চোর, ভোট চোর’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। অন্য পক্ষ আবার এর উত্তর দিতে থাকে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ সময় তুমুল উত্তেজনা শুরু হয়। পুলিশও মাঝে দাঁড়িয়ে সতর্ক অবস্থায় থাকে। তবে এ সময় ভোট গ্রহণ চলছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনের দ্বিতীয় দিনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নেন।

বুধবার আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের (২০২৩-২৪) প্রথম দিনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। দিনের শুরুতেই দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়।

প্রধান বিচারপতির কাছে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের নালিশ : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের বিষয়টি সুরাহা এবং আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, নির্যাতন ও সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।

বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির কক্ষে প্রবেশ করেন বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদিন ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের জানান, প্রধান বিচারপতি বুধবার ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো শুনেছেন। আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলাসহ সবকিছু শুনেছেন। প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের বলেন, তিনি এই বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর ওনার কিছু করণীয় থাকলে তা জানাবেন।

ব্যারিস্টার খোকন জানান, আমি প্রধান বিচারপতিকে বলেছি, তিনি উদ্যোগ না নিলে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহ্য নষ্ট হবে। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। দেশবাসীর কাছে বিচার বিভাগের মর্যাদা নষ্ট হবে। পুরো দেশ-জাতি সুপ্রিম কোর্টের এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। এর আগে একই দিন সকাল সোয়া ৯টায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৮ বিচারপতির এজলাসে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী বুধবারের (১৫ মার্চ) পুলিশের হামলা ও মামলার কথা তুলে ধরেন এবং আইনজীবীদের নিরাপত্তা চান।

ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতিকে সম্বোধন করে বলেন, ‘আমরা আপনার আদালতের আইনজীবী। আপনি আমাদের অভিভাবক। আমরা কী এমন অপরাধ করেছি? পুলিশ আইনজীবীদের নির্যাতন করল। নারী আইনজীবীরাও রেহাই পাননি। আমি পুলিশকে বলেছি, আমি সম্পাদক প্রার্থী। তারপরও আমাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেওয়া হয়। আমাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। বার ভবনে আমাদের রুমগুলো লক করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা আপনাদের কাছে এসেছি।’

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আমি নিজেও পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আজও আমি ভালো করে হাঁটতে পারছি না। বুধবার মিলনায়তনের ভেতরে পুলিশ আইনজীবীদের পায়ের নিচে ফেলে নির্যাতন করেছে। সাংবাদিক ও নারী আইনজীবীদেরও লাঠিচার্জ করেছে।’

সমিতির নির্বাচন নিয়ে প্রধান বিচারপতির কিছু করণীয় নেই, বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল : অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির করণীয় কিছুই নেই। সমিতির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে সমিতির নির্বাচনের বিষয়টির সমাধান করতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতির কাছে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের নালিশ জানানোর পর বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রধান বিচারপতি বলেছেন এটা আমাদের বিষয় না। এটা বারের (আইনজীবী সমিতির) বিষয়। এখানে প্রধান বিচারপতির করণীয় কিছু নেই। আপনারা বারের সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে বসে আলাপ করে সমস্যার সমাধান করেন। সবাই মিলে পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার চেষ্টা করেন।

তিনি আরো বলেন, আমি বিচারপতিদের ডেইলি স্টার পত্রিকার একটি ছবি দেখিয়ে বলেছি বাঁশ হাতে ভাঙচুরে জড়িত আইনজীবী বিএনপিপন্থি। সে আওয়ামী লীগপন্থি না।

উভয়পক্ষই যখন এমন করে তখন কী করণীয় জানতে চাইলে আমি বলেছি, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও আবদুন নূর দুলাল যখন নির্বাচন করতে গেল তখন বাধা দিচ্ছিল। সেই পর্যায়ে সেখানে পুলিশ প্রবেশ করে। আগের দিনই বারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। কারণ আগের দিন রাতেই বিএনপি সমর্থক লোকজন ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়েছিল।

পরিবেশ সুষ্ঠু আছে কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে হলে দুপক্ষকেই সমানভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। একপক্ষ ব্যালট ছিঁড়ে নিয়ে যাবে, অপর পক্ষ বাধা দেবে, তাহলে পরিবেশ ঠিক থাকবে কী করে? কাকে দোষ দেবেন? বিএনপি তো প্রথম থেকেই নির্বাচন করতে চাচ্ছিল না। আগের দিন রাতে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি সমর্থকরা পুনরায় নির্বাচন দাবি করতেই পারে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে এবং শত শত আইনজীবী লাইন ধরে ভোট দিচ্ছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সাংবাদিকদের কাছে ডিএমপি কমিশনারের দুঃখপ্রকাশ : গত ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের ল’ রিপোর্টার্স ফোরামে আসেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশিদ। এ সময় হারুন অর রশিদের ফোনে কল দিয়ে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।

ডিবি প্রধানও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা পুরোপুরি অনিচ্ছাকৃত। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য পুলিশ সচেষ্ট থাকবে বলে জানান হারুন অর রশিদ।

তার বক্তব্যের পর টেলিফোনে ডিএমপি কমিশনার ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশুতোষ সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। টেলিফোনে সভাপতির কাছে খন্দকার গোলাম ফারুক দুঃখ প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়টি দেখা হবে বলেও ডিএমপি কমিশনার জানান।

আলোচনায় সাংবাদিক নেতারা রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশীদকে ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্যবহারে আরো সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান। তারা অভিযোগ করেন, এডিসি হারুনের নেতৃত্বে পুলিশি অভিযানে সাংবাদিকদের হেনস্তা করার ঘটনা ঘটেছে। তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার অনুরোধ জানান। বিষয়টি দেখবেন বলে জানান ডিবি প্রধান। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close