নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ মার্চ, ২০২৩

ভোক্তা অধিদপ্তরে জনবল সংকট

১২ বছরে ৮৩ হাজার অভিযোগ নিষ্পত্তি

৮৩২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৮ হাজার ৮০৮ টাকা জরিমানা করা হয়েছে

ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর ১২ বছরে প্রায় ১৬৭৫৩০ (ফোনে ও লিখিত) অভিযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে লিখিত অভিযোগ ৮৮ হাজার ৯১৮। নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৩ হাজার ৭৯৮টি। ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৫৬৮৮টি লিখিত অভিযোগ করা হয়। ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গত ১২ বছরে ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ৮ হাজার ৩২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৮ হাজার ৮০৮ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই জরিমানা থেকে ২৫ শতাংশ হিসাবে ৮ হাজার ১৯৭ জন ভোক্তা পেয়েছেন ১ কোটি ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার ৫৭৭ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার জানায়, সারা দেশে ভোক্তা অধিকারের কার্যক্রম পরিচালনায় ৪৫০ জন জনবলের বিপরীতে ২১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। ১৬১২১ নামে ২০২১ সালে একটি হটলাইন চালু করা হয়। ২০২১-২২ এবং ২০২৩ এই তিন বছরে হটলাইনে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৩০টি অভিযোগ আসে।

ভোক্তা অধিকারে ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ২০০ লিখিত অভিযোগ আসে। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালে ৩০০, ২০১৫-২০১৬ সালে ৬৬২টি, ২০১৬-২০১৭ সালে ৬১৪০টি, ২০১৭-১৮-তে ৯০১৯টি, ২০১৮-১৯-এ ৭০০০, ২০১৯-২০ সালে ৯০০০, ২০২০-২১ সালে ১৪৯১০টি, ২০২১-২২ সালে ২৫৩৪৬টি এবং ২০২২-২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৫৬৮৮টি লিখিত অভিযোগ আসে।

চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোক্তার অধিকার আদায়ে কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিসিএমএস) সফটওয়্যার এবং ওয়েব পোর্টাল চালু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তাদের অভিযোগ সহজ উপায়ে অনলাইনে জানানোসহ দ্রুত সেই অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সিসিএমএস ওয়েব পোর্টাল চালু করা হয়। পোর্টালটি চালুর পর ১৩ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত ৪ হাজার অভিযোগ এসেছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে ৮টি বিভাগের ৬৪টি জেলা পর্যায়ে জেলা অফিসগুলোতে একজন সহকারী পরিচালক এবং কম্পিউটার অপারেটর, একজন অফিস সহকারী নিয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, সারা দেশে আমাদের ২১৬ জন জনবল রয়েছে। সদর দপ্তরসহ ৮টি বিভাগের পাশাপাশি ৬৪টি জেলায় অফিস রয়েছে। অনেক জেলায় খালি রাখা হয়েছে। সেখানে ১০ থেকে ১২টি উপজেলায় অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করা কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। ৪৬৫ জন জনবল বৃদ্ধির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের জনবল সংকট আছে। তবে অধিদপ্তরের জনবল বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আশা করি, দ্রুত এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে। জনবল সংকট থাকলেও আমরা বসে নেই। দেশের মানুষ দেখছে, এখন সারা দেশের বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তর প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে। এর সুফল অবশ্যই পাচ্ছে ভোক্তারা।

ভোক্তা অধিদপ্তরের জনবল সংকটের বিষয়ে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশের জনগণের সরাসরি দেখভাল করার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ খুবই ভোক্তাবান্ধব। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে এই আইনের সুফল পাচ্ছে না ভোক্তা। তাই প্রতিষ্ঠানটির জনবল বাড়াতে হবে। শুধু জনবল বাড়ালেই হবে না, ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় সারা দেশে আরো জোরালোভাবে অধিদপ্তরের কার্যক্রম চালাতে হবে।

ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু জনবল বাড়ালেই হবে না, কর্মকর্তাদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন রয়েছে। যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় এক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়। ই-কমার্স নিয়ে সংকটের সময় উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে কর্মকর্তাদের।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অনেক কাজ এগিয়েছে, দ্রুত ভোক্তা অধিদপ্তরে জনবল বাড়ানো হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close