শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

  ১৪ মার্চ, ২০২৩

বান্দরবানে জঙ্গি কমান্ডার দিদারসহ আটক ৯

অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ * র‌্যাবের প্রেস ব্রিফিং

বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী থেকে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন ওরফে চম্পাইসহ ৯ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়। আটকরা হলো- নারায়ণগঞ্জের ইউনুস সর্দারের ছেলে আল আমিন সর্দার ওরফে আবদুল্লাহ বাহাই (২৯), ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের আবুল কালামের ছেলে সাইনুন রায়হান ওরফে হুজাইফা (২১), সিলেট বিয়ানীবাজারের কামাল আহম্মেদের ছেলে তাহিয়াত চৌধুরীন ওরফে পাভেল ওরফে হাফিজুল্লাহ রিতেং (১৯), সিলেট শাহপরানের আবদুল কাদিরের ছেলে মো. লোকমান মিয়া (২৩), কুমিল্লার লাকসামের আবদুল আজিজের ছেলে মো. ইমরান হোসেন ওরফে সাইতোয়াল ওরফে শান্ত (৩৫), ঝিনাইদহ কোর্টচাদপুরের আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো. আমির হোসেন (২১), বরিশাল সদরের ফারুক হাওলাদারের ছেলে মো. আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেং (২৮) এবং ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুরের মো. গেয়াস উদ্দিনের ছেলে শামিম মিয়া ওরফে রমজান ওরফে বাকলাই (২৪)।

সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে বান্দরবান জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মইন এ তথ্য দেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তাররা নিকটাত্মীয়, স্থানীয় পরিচিত বা বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই সংগঠনে যোগদান করে। তারা বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের ভিডিও দেখানো, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে এবং পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার গোপন নেতা ও সংগঠকরা। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন সময়ে তাদের সমতল হতে পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। পার্বত্য অঞ্চলে তারা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র চালনা, অন্যান্য সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা তৈরিবিষয়ক প্রশিক্ষণ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।

পাহাড়ে দিদার হোসেন ওরফে চম্পাই এই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিত। তিনি নেতা ও কমান্ডার। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সময় অভিযানে গত ২০ অক্টোবর রাঙামাটির বিলাইছড়ি ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের ৭ জন এবং কেএনএফের ৩ জন, ১১ জানুয়ারি বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত ৫ জন জঙ্গি সদস্য, ২৩ জানুয়ারি কক্সজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে ২ জন, ৭ ফেব্রুয়ারি জঙ্গি সংগঠনের ১৭ জন এবং পাহাড়ি সংগঠনের ৩ এবং ১ মার্চ চট্টগ্রামের গহীনে সশস্ত্র প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ৪ জঙ্গিকে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১২ মার্চ ৯ জঙ্গি সদস্যকে আটক করা হয়। এ পর্যন্ত জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ মোট ৫৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

জানা যায়, সম্প্রতি উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় হিজরতের নামে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয় ১৯ জেলার ৫৫ তরুণ। এ তরুণদের অনেকেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে নতুন করে কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়ে জামাতুল আনসারের হয়ে পাহাড়ি এলাকার আস্তানায় আশ্রয় নেয়। এসব আস্তানায় হিজরত করা তরুণদের ভারী অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকদের কেএনএফ নামের একটি পাহাড়ি সন্ত্রাসী দল। নতুন এ জঙ্গি সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম ‘কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। বিষয়টি জানার পর গত ১৭ অক্টোবর থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূল করতে অভিযানে নামে র‌্যাব ও সেনাবাহিনী। এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close