নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ মার্চ, ২০২৩

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে উন্মুখ হয়ে আছে অনেকে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে অনেক আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এজেন্সি উন্মুখ হয়ে আছে। ৪০ জনের নামে ওয়াশিংটন পোস্টের বিজ্ঞাপনে যেটা এসেছে, ওটার পেছনেও কিছু অ্যাম্বিশন আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

কাতারে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর নিয়ে সোমবার (১৩ মার্চ) গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি এবং জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে গত ৪ থেকে ৮ মার্চ এই সফর করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন যাতে অবাধ-সুষ্ঠু হয়, তার জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংশোধনী বা সংস্কার আনা হয়েছে। তবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই যাদের কাজ তাদের সঙ্গে সংলাপ করার কিছু নেই।

পাল্টা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সংলাপ কার সঙ্গে করব? ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি সংলাপ করেছি, তার রেজাল্টটা কী? নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি তারা।

১৪ বছর আগের বাংলাদেশের অবস্থা চিন্তা করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের পর যে সন্ত্রাস, সংঘাত, মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হয়ে তা ভেবে দেখেন। ২০০৬ সালের পর ভোটারবিহীন ভোটার তালিকা, ২০০৭-এর নির্বাচন- এই ঘটনাগুলোর যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার জন্যই আমরা এই সংস্কারগুলো করে দিয়েছি। এখন জনগণের ওপর নির্ভর করে তারা কীভাবে চায়? জনগণ যেন ভোট দিতে পারে সেজন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের সবসময়ই আছে।

সাম্প্রতিক উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরেছে। তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছে। এই ভোটগুলো নিয়ে তো কেউ একটা কথাও বলতে পারেনি। সরকারে থাকলেও যে নির্বাচন সবসময় নির্বিঘ্ন হতে পারে, শান্তিপূর্ণ হতে পারে, অবাধ নিরপেক্ষ হতে পারে সেটা তো আমরা প্রমাণ করেছি। আর কী প্রমাণ করতে হবে, সেটাই আমার প্রশ্ন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি।’

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রস্তুতি, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও সংলাপ নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি সংলাপ করেছি, তার রেজাল্টটা কী? নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি তারা। তারা (বিএনপি) ৩০০ সিটে ৭০০ জনকে নমিনেশন দিয়ে টাকা খেয়ে নিজেরাই নিজেদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে তারপর নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এদের সঙ্গে কীসের কথা বলব, কীসের বৈঠক করব।

শেখ হাসিনা বলেন, তারপরও অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ হওয়ায় পরিবারের আকুতিতে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার ও চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছি। এটুকু যে করেছি সেটাই যথেষ্ট। এটুকু সহানুভূতি যে পাচ্ছে সেটা আমার কারণে। ওদের সঙ্গে আবার কীসের বৈঠক আর কীসের কী?

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, যে দল বেশি লাফায় সে দলের দুই নেতাই হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা না পারবে ইলেকশন করতে, না পারবে ক্ষমতায় আসতে। বিএনপি নিজের গঠনতন্ত্র নিজেরা ভঙ্গ করছে। কারণ, তাদের গঠনতন্ত্রে আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না। এখন সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকেই দলের নেতা বানিয়ে রেখে দিয়েছে। এই দলের কাছে কী আশা করবেন?

শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচনেও জনগণ যেন স্বাধীনভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে সেই প্রস্তুতি আছে। দলীয় সরকারের অধীনেও যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোই এর প্রমাণ।

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে ওদের (বিএনপির) জন্মই হয়েছে অস্ত্র হাতে নিয়ে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী একজন সেনার মাধ্যমে; সেই সেনা হলো সেনাবাহিনীর প্রধান। সে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েছে, অস্ত্র হাতে নিয়ে। নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় বসেছে। আর সেই ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি করা দল হলো বিএনপি। কাজেই এদের কাছ থেকে জনগণ আর বেশি কী আশা করবে?

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের যেন কষ্ট না হয় সেজন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন আর পরনির্ভরশীল নই। আমরা নিজেরাই এখন উৎপাদন করছি। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে। আশা করি রমজানে কোনো অসুবিধা হবে না।

তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সরকারের একার নয়, সবার। সবাইকে সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব আছে। সত্যের জয় হয়। এটা কেউ ঢাকতে পারে না। এটা আমি বিশ্বাস করি।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক কোনো চাপ আছে কি না- এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমন কোনো চাপ নেই, যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে। আমার শক্তি একমাত্র আমার জনগণ।

তিনি বলেন, অতীতেও এরকম বহু চাপ ছিল, তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। উপরে আল্লাহ আছে এবং আমার বাবার আশীর্বাদের হাত আমার মাথায় আছে। কাজেই কে কী চাপ দিল না দিল এতে কিছু আসে যায় না। জনগণের স্বার্থে যেটা করার সেটাই করব, জনগণের কল্যাণে যে কাজ করার সেটাই করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর আগে তো কম চাপ দেওয়া হয়নি। কোনো একটা দেশের সেই রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে টেলিফোনের পর টেলিফোন! কেন? একটা ভদ্রলোক, তাকে একটি ব্যাংকের এমডি পদে রাখতে হবে। এমডি পদে কী মধু তা তো আমি জানি না। আইন আছে, ৭০ বছর বয়স হয়ে গেছে, তারপরও এমডি পদে থাকতে হবে। একটাই সুবিধা, এমডি পদে থাকলে মানিলন্ডারিং করা যায়। পয়সা বানানো যায়, পয়সা মারা যায়, গরিবের রক্ত চুষে খাওয়া যায়। সেই চাপ কিন্তু শেখ হাসিনা সহ্য করে চলে আসছে। তারপর পদ্মা সেতু বানিয়ে দেখালাম। ওই চাপে আমাদের কিছু আসে যায় না।

শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ফুল দিতে গেছে পরিবারের পক্ষ থেকে। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কিংবা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যায়নি। শেখ রেহানা আমার ছোট বোন। আমাদের পাঁচ ছেলেমেয়ে। তারা কিন্তু আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আজ স্টার্টআপ প্রোগ্রাম, ইয়াং বাংলা, সিআরআই’র মতো গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ যত রকমের কাজ আছে; তারা করে যাচ্ছে দেশের স্বার্থে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close