প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যু ৫ হাজার ছাড়াল

নিহতের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে * সিরিয়ায় সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে

ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহত মানুষের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। শুধু তুরস্কেই ৩ হাজার ৪১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে মারা গেছে ১ হাজার ৬০২ জন। দুই দেশ মিলে ভূমিকম্পে নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ২১ জনে দাঁড়িয়েছে। তুরস্ক ও সিরিয়ার সরকার ও হাসপাতাল সূত্রে এএফপি নিহতের এ সংখ্যা জানিয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন নিহত মানুষের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে। ব্যাপক বিপর্যয়ে ত্রাণ প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে, উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া লোকজনকে রক্ষা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন; ভূমিকম্প কবলিত অঞ্চলগুলোর অধিকাংশ এলাকায় মঙ্গলবার এমন হতাশাজনক চিত্র দেখা গেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুর্কি শহর আন্তাকিয়ায় ১০ তলা একটি ভবন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জরুরি কর্মীদের একটি উদ্ধার কাজ চালাতে দেখেছেন রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক।

শহরটিতে বিদ্যুৎ নেই, জ্বালানিও নেই। এর মধ্যে বৃষ্টি পড়তে শুরু করায় তাপমাত্রা নেমে হিমাঙ্কের কাছাকাছি চলে যায়।

তুরস্কের খারমানমারাসের গাজিয়ানতেপ শহর ছিল এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। দেশটির আদানা শহরের ৩৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে ধ্বংসস্তূপে আটকেপড়া মানুষদের মরিয়া হয়ে খুঁজতে কংক্রিটের ভগ্নাংশ ও বিভিন্ন আসবাবপত্র হাত দিয়েই সরিয়ে ফেলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উদ্ধারকর্মীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন আটকেপড়া মানুষদের জীবিত খুঁজে বের করে উদ্ধার করতে। প্রতিটি বহুতল ভবন যেন এখন ধ্বংসস্তূপের একেকটি পাহাড়। ‘কেউ আছেন? শুনতে পাচ্ছেন?’, কিছুদূর পরপর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বারবার এমন চিৎকার করে প্রাণের খোঁজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা।

এদিকে, সিরিয়ায় ঘরবাড়ি হারানো অসংখ্য মানুষকে তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে জ্যাকেট ও ম্যাট্রেসের মতো জরুরি উপকরণ ছাড়াই হয় খোলা আকাশের নিচে, নাহয় গাড়িতে রাত কাটাতে হচ্ছে।

সোমবার তুরস্কের স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ছিল ভূমিকম্পটির কেন্দ্র। ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। ভূমিকম্পের পর অর্ধশতাধিক পরাঘাত (বড় ভূমিকম্পের পর ছোট ছোট ভূমিকম্প) হয়।

ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ধসে পড়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, যার মধ্যে অনেক বহুতল ভবন রয়েছে।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, হিমশীতল ও গুমোট আবহাওয়ার মধ্যেই দুই দেশের উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসাবশেষে আটকে পড়া মানুষদের জীবিত উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভূমিকম্পে যেসব মানুষ প্রাণে বেঁচে গেছেন তারাও বহুতল ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে স্বজনদের উদ্ধারের আশায় খালি হাতেই অভিযানে অংশ নিয়েছেন।

ভূমিকম্পের পর পরাঘাত অব্যাহত থাকায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছে।

ভূমিকম্পের পর বিভিন্ন দেশ-সংস্থা তুরস্ক ও সিরিয়ায় সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে। তুরস্কে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সিরিয়ায় ভূমিকম্প-পরবর্তী সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে : ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, জ্বালানি স্বল্পতা ও তীব্র শীতের কারণে সিরিয়ায় ভূমিকম্প-পরবর্তী সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের শীর্ষ এক কর্মকর্তা।

সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে; জরুরিভিত্তিতে সহায়তা দরকার হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষের।

প্রতিবেশী তুরস্কেও প্রায় ৩ হাজার লোকের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই ভূমিকম্প সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের অসংখ্য মানুষকে তীব্র শীতের মধ্যে তড়িঘড়ি ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় ছুটতে বাধ্য করেছে। কয়েক বছরের বিমান ও গোলা হামলা ওই এলাকার জনগণকে এমনিতেই আতঙ্কিত ও অসংখ্য ভবনকে দুর্বল অবস্থায় ফেলে রেখেছিল।

দামেস্ক থেকে ভিডিওলিংকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম বিষয়ক আবাসিক সমন্বয়ক এল-মোস্তফা বেনলামলিহ বলেছেন, ‘স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মানবিক কার্যক্রমের জন্য যেসব সড়ক ব্যবহার করতাম সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কী করে লোকজনের কাছে পৌঁছানো যায়, সেজন্য নতুন উপায় বের করতে হবে আমাদের, আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি।’

সোমবার ভোররাতের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের আগেই উত্তরপশ্চিম সিরিয়ার প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ দেশের বাইরে থেকে আসা ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল ছিল বলে অনুমান জাতিসংঘের।

এই মানুষগুলোর অধিকাংশই ১২ বছর ধরে চলা যুদ্ধে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়ে এখন শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন।

সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো কয়েক বছর ধরে মোটামুটি শান্ত থাকলেও দেশটির নাজুক পরিস্থিতির ওপর চাপ আরও বাড়াচ্ছে গভীর অর্থনৈতিক সংকট। জ্বালানি সংকট বাড়াচ্ছে লোডশেডিং, পাশাপাশি বঞ্চনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

য্দ্ধু শুরুর পর থেকে যে কোনো পর্যায়ের চেয়ে দেশটিতে মানবিক ত্রাণ সহযোগিতা যে এখন অনেক অনেক বেশি দরকার তা ভূমিকম্প আঘাত হানার আগেই বলেছিল জাতিসংঘ। সিরিয়ার জনসংখ্যার ৭০ শতাংশেরই ত্রাণ দরকার বলে জানিয়েছিল তাদের হিসাব।

‘(ভূমিকম্পের পর) ওই একই লোকজন, যাদের ভোগান্তি আরও বাড়ল,’ বলেন বেনলামলিহ। তিনি জানান, ঘরবাড়ি হারানো অসংখ্য মানুষকে তীব্র ঠান্ডার মধ্যে জ্যাকেট ও ম্যাট্রেসের মতো জরুরি উপকরণ ছাড়াই হয় খোলা আকাশের নিচে, নাহয় গাড়িতে রাত কাটাতে হচ্ছে।

জাতিসংঘ এখন সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উভয় অংশের জন্য যত দ্রুত সম্ভব ত্রাণ জোগাড়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু আন্তর্জাতিক সহায়তা ও তহবিলে অর্থের টানাটানিও দেখা যাচ্ছে।

প্রয়োজন মেটাতে ২০২২ সালে দাতাদের কাছে চাওয়া ৪৪০ কোটি ডলারের অর্ধেকেরও কম পেয়েছে জাতিসংঘ; যদি এই ধরনের প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে সিরিয়ার সংকট থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা ম্লান হয়ে পড়বে, বলেন বেনলামলিহ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close