নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

রাজধানীতে তীব্র যানজট, পথে পথে ভোগান্তি

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহান নগরবাসী। স্বাভাবিক সময়ে মোটরসাইকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট যেতে ১৫-২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। কিন্তু সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে এই পথ যেতে পৌনে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগার কথা জানিয়েছেন এক ভুক্তভোগী।

রাজধানীর অন্য অংশের অবস্থাও একই রকম বলে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান। অবশ্য মোটরসাইকেল আরোহীদের চেয়ে বাসের যাত্রীদের ভোগান্তি বেশি হয়। সকালে খামারবাড়ি থেকে থেকে ফার্মগেট হয়ে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত পুরো সড়কে যানবাহনের ব্যাপক চাপ দেখা যায়। যানবাহনগুলো থেমে থেমে চলছিল। এ ছাড়া খামারবাড়ি থেকে মিরপুরের দিকে যেতে সড়কেও তীব্র যানজট দেখা গেছে। এই রাস্তা দিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী তরিকুল ইসলাম। তিনি জানান, জরুরি কাজে মিরপুরে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু পুরো ভাড়া দিয়েও তীব্র যানজটের কারণে তিনি বাস থেকে নেমে হেঁটে রওনা দিয়েছেন। সামনে ফাঁকা রাস্তা পেলে আবার বাসে উঠবেন। সংশ্লিষ্ট খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত অব্যবস্থাপনার কারণেই নগরীতে যানজট আরো তীব্রতর হচ্ছে। বিআরটিএ বেপরোয়াভাবে যানবাহন নিবন্ধন দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি দেশে যানজট নিয়ন্ত্রণে কোনো গবেষণা নেই। এছাড়া সড়কের বড় অংশজুড়ে পার্কিং ও অস্থায়ী দোকানপাট এবং চালকেরা ইচ্ছামতো বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে মূলত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

মিরপুরের পল্লবী থেকে প্রেস ক্লাব বা মতিঝিলের দিকে আসতে একজন যাত্রীকে অন্তত চার যায়গায় তীব্র যানজটে পড়তে হয়। মিরপুর ১০, বিজয় সরণি, ফার্মগেট থেকে কাওরানবাজার এবং শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন এসব স্থানে অফিস সময়ে তীব্র যানজট থাকে এমনটাই জানিয়েছেন এ রুটে নিয়মিত যাতায়াত করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জোবায়ের আহমেদ। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় মিরপুরের পল্লবী থেকে রওনা হই পল্টনের উদ্দেশে। এ পথে মোটরসাইকেলে পৌঁছাতেই সময় লেগেছে ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। সাধারণত এতটুকু পথ ৪০-৪৫ মিনিট লাগার কথা।

যানজট না থাকলে মোটরসাইকেলে রাজধানীর বনশ্রী থেকে পল্টন বা প্রেস ক্লাবে যেতে ১৫-২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। কিন্তু সকাল ৯টার দিকে এই পথ যেতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন এক ভুক্তভোগী। শুধু যে বনশ্রী, মিরপুর, পল্টন বা মতিঝিল এলাকাতেই যানজট থাকে বিষয়টা এমন নয়।

সকালে সরেজমিনে বাড্ডা থেকে রামপুরা পর্যন্ত পুরো সড়কে যানবাহনের ব্যাপক চাপ দেখা যায়। যানবাহনগুলোর গতি এমন ছিল যে, হাঁটার গতিও এর থেকে বেশি।

ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১১৯৩০৯) বাসচালক সুজন মিয়া বলেন, ‘এই জ্যামের কারণে দুই থেকে তিনটি ট্রিপ মারতেই সারাদিন চইলা যায়। খরচ উঠাইতেই কষ্ট হয়ে যায়। এই জ্যাম সারা দিনটারে মাইরা দেয়।’

আকাশ পরিবহনের বাসের যাত্রী আজগর আলী জানান, সকালে অফিস সময়ের মধ্যে তার মতিঝিল পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু বাড্ডা এলাকায় যানজটের কারণে ৩০ মিনিট দেরি হয়েছে। ফলে যে কাজের জন্য তিনি যাচ্ছিলেন সেটা করতে পারবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। যানজটে বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাস্তায় রিকশা এবং বাসগুলো কিছুক্ষণ পরপর থামার কারণে মূলত দেরি হচ্ছে। আর সিগন্যালগুলোতে দীর্ঘ সময় বসে থাকলেও ছাড়ার নাম নেই।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর অন্য দেশে পিক আওয়ারে দুটি রাস্তা একসঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানে যদি কারো যাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে অনেকটা রাস্তা তাকে ঘুরে আসতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে এ ধরনের কোনো বৈজ্ঞানিক মেথড ব্যবহার করা হয় না। যা এখন থেকে আমাদের করতে হবে এবং এটা সময়ের দাবি। আমাদের ঢাকা শহরের বেশিরভাগ সড়ক হচ্ছে ডাবল রোড। এছাড়া বহির্বিশ্বে অনেক জায়গায় ডাবল রোড আছে। সেসব দেশে ডাবল রোডে দেখা যায় অফিস টাইম বা পিক আওয়ারে দুটো রাস্তাকে একসঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হয়। যখন অফপিক তখন দুটি রাস্তাকে আলাদা করে দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত এমন কোনো বৈজ্ঞানিক মেথড ব্যবহার করা হয়নি, এমনকি আবিষ্কারও করা হয়নি।

যানজট নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের গবেষণা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যানজট নিয়ন্ত্রণে মূলত দুটি সংস্থা কাজ করে। ট্রাফিক বিভাগ যানজট নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন ঢাকা যানবাহন সমন্বয়ন কর্তৃপক্ষ। তাদের মূলত গবেষণা করার কথা। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটির কোনো গবেষণা সেল নেই। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে কোনো পর্যবেক্ষণও নেই। মোট কোথায় এগুলো চলছে আল্লাহর ওয়াস্তে। আসলে সরকারের এই বিষয়ে গবেষণা করা দরকার যে, পিক আওয়ার এবং অফপিক আওয়ারে কোন রাস্তায় কী পরিমাণ ট্রাফিক হয়, তার ওপর গবেষণা করে ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করা দরকার। এটা এখন সময়ের দাবি মাত্র।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close