নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আজ বসছে অমর একুশে বইমেলা

বাঙালির মনন উৎকর্ষের প্রতীক অমর একুশে বইমেলা আজ (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে। সেই সুবাদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি আঙিনায় সাজসাজ রব। অধিকাংশ স্টল কিংবা প্যাভিলিয়নের কাজ প্রায় শেষ। রং করা, নান্দনিক নকশা গড়াসহ স্টলের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলছেন প্রকাশকরা। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। আজ বিকাল ৩টায় মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের গ্রন্থ-উন্মোচন করবেন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য দেবেন মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

এদিকে, অমর একুশে বইমেলায় হামলার সুনির্দিষ্ট কোনো থ্রেট বা হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বইমেলায় অতীতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সে জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারো ওপর কোনো থ্রেট বা হামলার শঙ্কা নেই। তবে কোনো লেখক বা প্রকাশক নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকলে পুলিশকে জানালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বইমেলা ও আশপাশের এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশের সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সতর্ক থাকবে। আর্চওয়ে গেট দিয়ে মেলায় প্রবেশ করতে হবে। পুরো এলাকায় পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে। বই ব্যবসায়ীরা রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।

দুই বছরের মহামারির ধকল পেরিয়ে যথাসময়ে শুরু হচ্ছে ভাষাশহীদদের স্মৃতিতে নিবেদিত মাসব্যাপী বইমেলা। ফলে নান্দনিক বিন্যাসের পাশাপাাশি এবার বইমেলার পরিসর বেড়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে হবে মেলা। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের এবং বাংলা একাডেমি মিলিয়ে ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকছে। আর লিটলম্যাগ চত্বরে ঠাঁই পাবে ১৫৩টি স্টল।

এবার বইমেলার আঙ্গিকগত ও বিন্যাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে অর্থাৎ মন্দির-গেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহির-পথ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে আরো ৩টি প্রবেশ ও বাহির-পথ থাকবে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বইমেলায় পাইরেসি বড় ইস্যু। অনেক সময় দেখা যায়, একই বিষয় নিয়ে ১০-১২টা বই মেলায় চলে আসে। বিশেষ করে অনূদিত বইগুলোর বিষয়ে লেখক-প্রকাশকরা তো মূল প্রকাশক বা লেখকের অনুমতি নেন না। এসব বিষয়ে টাস্কফোর্স কঠোর ব্যবস্থা নেবে। তবে সার্বিকভাবে বলতে হয়, ভালো লেখা এবং নির্ভুল সম্পাদনার বইও এখন কম প্রকাশিত হয়। অধিকাংশ প্রকাশনীর সম্পাদনা পরিষদ না থাকায় এমনটা ঘটে। তাই মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। প্রকাশকরা সহযোগিতা করলে এবং সুসম্পাদিত বইগুলো তথ্যকেন্দ্রে জমা দিলে নিশ্চয়ই সেই মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা বাড়বে।

এবার বইমেলায় নতুন পুরোনো মিলিয়ে ১৩৬টি বই প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। তার মধ্যে বইমেলার প্রথম দিনে ‘শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলী’, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পাঠ বিশ্লেষণ’, ‘আমার দেখা নয়াচীন-পাঠ বিশ্লেষণ’, ‘কারাগারের রোজনামচা-পাঠ বিশ্লেষণ’ এবং হাসান আজিজুল হকের ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’-এর ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য লেটার অব সাবিত্রী’র মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া বাংলা একাডেমি থেকে এবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনী ‘আমার জীবন, আমার রাজনীতি’ প্রকাশিত হবে, যার মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলা একাডেমি বিভিন্ন জেলায় যে মেলাগুলোর আয়োজন করেছে গত বছর সেসব সংকলন সাত খণ্ডে প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। প্রথম খণ্ডটির মোড়ক উন্মোচন হবে বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে।

প্রতিদিন বিকেল ৪টায় একাডেমি আঙিনায় মেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশু-কিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য ১টি স্টল থাকবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close