বদরুল আলম মজুমদার

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আ.লীগ-বিএনপি কথার বাণে সমানে সমান

নেতাদের বলা শব্দ ও বাক্য হাস্যরসের খোরাক * সর্বত্রই কথায় কথায় মুখে মুখে ফেরে- খেলা হবে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বছরখানেক বাকি। নির্বাচন সামনে রেখে রাজপথের প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এরই মধ্যে প্রচার শুরু করে দিয়েছে। উভয় দলের সভা-সমাবেশে নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য বেশ মুখরোচক ও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। মূলত, দু-দলের নেতাদের ‘কথার পিঠে জবাব’ এখন দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের হাস্যরস ও কৌতুকপ্রদ আলোচনার বিষয়। আপাতত রাজনৈতিক সংঘাত বা সহিংসতা না থাকলেও বাক্যবাণই হয়ে উঠেছে রাজনীতির ময়দানে লড়াইয়ের কৌশল।

বিশেষ করে, দল দুটির সাধারণ সম্পাদক এবং মহাসচিব একে অপরকে লক্ষ করে যে বাক্যবাণ ছুড়েছেন তা জনসাধারণের আড্ডা ও আলোচনায় মূল বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একে অপরের কথার জবাবে যা বলছেন তা গণতান্ত্রিক সৌন্দর্যের হানি ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ জনগণ ও বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশের রাজনীতির ধারা পাল্টে যাচ্ছে। এখন রাজনীতির ময়দানে চটকদার বক্তব্যই সার, শোভন-অশোভন বাছ-বিচার নেই। প্রচার কৌশলে আপাতত এভাবেই এগিয়ে থাকার চেষ্টা করছেন দল দুটির নেতারা।

কথার দৌড়ে বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বলা ‘খেলা হবে’ কথাটি রসের কথা হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার এই বক্তব্য আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জনপ্রিয় স্লোগানে পরিণত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও জাতীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান সর্বপ্রথম এই বচন ছাড়েন- ‘খেলা হবে’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে তা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও জনপ্রিয় হয়ে যায়। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ‘খেলা হবে’ স্লোগানটি অনানুষ্ঠানিক নির্বাচনী স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করে। এ নিয়ে গানও হয় সেখানে।

সম্প্রতি আবার আওয়ামী লীগের এক সভায় স্লোগানটি ফিরিয়ে আনেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ এ ধরনের বক্তব্যের বিরোধিতা করার পর এই বক্তব্যের অনুকূলে ব্যাখ্যাও দেন ওবায়দুল কাদের। তখন তিনি বলেছেন, “এটা একটা পাবলিক হিউমার। রাস্তায় ফুল বিক্রি করে যে শিশু, সেও আমার গাড়ি দেখলে বলে ‘খেলা হবে’। এটা মানুষ একসেপ্ট (গ্রহণ) করে ফেলেছে।”

চলতি বছরের শেষের দিকে ওবায়দুল কাদেরের ‘খেলা হবে’ বক্তব্যটি দেশের রাজনীতিতে আলোচনার সৃষ্টি করলেও একে ‘রাজনৈতিক ভাষা’ বলে গণ্য করতে পারছেন না মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জাতীয় সংসদে ‘খেলা হবে’ শব্দটি নিয়ে আলোচনা ওঠার পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কীসের খেলা? এখন তো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার বিষয়, গণতন্ত্রকে রক্ষা করার বিষয়, মানুষের জীবন রক্ষা করার বিষয়। আর তেল, চাল, ডাল, লবণ- সবকিছুর দাম যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেদিকে নজর দেওয়ার বিষয়। মূলত তারা (আওয়ামী লীগ) মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে। এই খেলার রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না।’

সম্প্রতি বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেছেন ওবায়দুল কাদের। এটিকে তিনি পদযাত্রা নয়, বিএনপির মরণযাত্রা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এ মরণযাত্রার মাধ্যমেই তারা পরাজিত হবে। আন্দোলন হবে, আগামী নির্বাচনেও তাদের মরণ হবে। রাজনৈতিক মরণ। তিনি আরো বলেন, এত লাফালাফি, এত ছোটাছুটি, এত লোটা-কম্বল, এত কাঁথা-বালিশ। সমাবেশ হলে সাত দিন ধরে সমাবেশস্থলে শুয়ে পড়ে, আর পাতিলের পর পাতিল খাবার তৈরি হয়, কোথায় গেল সেই দিন। কোথায় গেল লাল কার্ড? কোথায় গেল গণ-অভ্যুত্থান? কোথায় গেল গণজোয়ার? গণজোয়ারে এখন ভাটার টান। তাই এটা পদযাত্রা নয়, পেছনযাত্রা। এটা পদযাত্রা নয়, মরণযাত্রা।

ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম কড়া ভাষায় জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ভালোয় ভালোয় কেটে পড়েন, গণ-আন্দোলনের মুখে এবার পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।

সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সময় নষ্ট না করে পদত্যাগ করুন। ক্ষমতা না ছাড়লে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হয়ে চলে যেতে হবে। সেই পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীনরা পালানোর পথ পাবেন না। নীরবযাত্রায় এদের (সরকার) পতন ঘটাব।’

মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি রবিবার (২৯ জানুয়ারি) রাজশাহীতে দলীয় জনসভায় বলেন, ‘ফখরুল সাহেব বলেছেন- আমরা নাকি পালিয়ে যাব। আপনাদের নেতা মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়েছেন। আমরা এ দেশে জন্মেছি। এ দেশেই মরব। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন। প্রয়োজনে আমরা ফখরুল সাহেবের বাড়িতে গিয়ে উঠব। তার ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতেও আমরা যেতে পারি।’

দু-দলের প্রধান দুই নেতার বাইরে অন্য নেতারা পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন উত্তেজক শব্দবাণে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এ ধরনের বক্তব্যকে ‘পজিটিভলি’ দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, আগের মতো নির্বাচনী প্রচার বা আমেজ বর্তমান সময়ে না থাকলেও ছোট ছোট টপিকের ওপর বক্তব্যগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে বেশ মুখরোচক হয়ে ওঠে। সাধারণ জনতা তা ভালোভাবেই উপভোগ করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close