মাসুদ রানা, বরিশাল

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

বরিশাল নগরীতে বেড়ে গেছে শব্দদূষণ

অভিযান নেই একযুগ। নগরীর সড়কে মানমাত্রার চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ ডেসিবেল বেশি শব্দ সৃষ্টি হচ্ছে, যা ভয়াবহ

বরিশাল মহানগরীতে লাগামহীনভাবে বেড়েছে শব্দদূষণ। বিশেষ করে দূরপাল্লার বেপরোয়া গতিতে চলন্ত গাড়ির উচ্চশব্দের হাইড্রোলিক হর্ন নগরবাসীকে ভোগাচ্ছে মারাত্মকভাবে। আর শব্দদূষণ পথচারীদের জন্য উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একযুগের বেশি সময় ধরে এর প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, মামলার হর্নবিষয়ক কোনো মামলা তাদের খাতায় নেই। আর পরিবেশ অধিদপ্তর সচেতনতামূলক কিছু লিফলেট বানিয়ে নিজ দপ্তরে রেখেছে তালাবদ্ধ করে। অথচ শব্দদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাসপাতালে কানের রোগীর লাইন দীর্ঘ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বরিশাল নগরীর বুকচিড়ে রয়েছে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের প্রায় প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর তিন ঘণ্টায় ঢাকা-বরিশাল আসা-যাওয়া করতে পারায় বেড়েছে দূরপল্লার গাড়ি। ফলে নগরীর রাস্তায় ছোট যানবাহনের সঙ্গে যোগ হয়েছে দূরপাল্লার যানবাহনের শব্দদূষণ। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বরিশাল নগরীর সড়কে মানমাত্রার চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ ডেসিবেল বেশি শব্দ সৃষ্টি হচ্ছে, যা মাত্রাতিরিক্ত। দীর্ঘ ১৭ বছরেও বরিশাল নগরীর শব্দদূষণ এলাকা চিহ্নিত করতে পারেনি বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। শব্দদূষণ রোধে ২০০৬ সালে সরকার ‘দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা’ জারি করে; যা যথাযথ প্রয়োগের কথা পরিবেশ অধিদপ্তরের।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাত্রাধিক শব্দদূষণ শিশু ও বয়স্কদের মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক মিয়া বলেন, ‘নীরব ঘাতক শব্দদূষণ নগরীতে বেড়ে যাচ্ছে। সাধারণত হাইড্রোলিক হর্নের মানমাত্রা ৮৫ ডেসিবেল। কিন্তু নগরীর আমতলার মোড়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, নথুল্লাবাদ, কাশিপুর এলাকায় হাইড্রোলিক হর্ন পৌঁছেছে ১১০ ডেসিবেলে।

অন্যদিকে ইলেকট্রনিক হর্নের শব্দ পৌঁছেছে ১০০ ডেসিবেল পর্যন্ত।’ আবদুল মালেক মিয়া বলেন, ‘হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় শব্দের মানমাত্রা ৫০ ডেসিবেল হলেও সেটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে ৬০-৭০ পর্যন্ত। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, আইন লঙ্ঘনকারীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা এক মাস কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রায় এক যুগ আগে নগরীতে শব্দদূষণ রোধে যানবাহনে অভিযান চালাতে গেলে নথুল্লাবাদে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। যে কারণে এ ধরনের অভিযান চালাতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।’

সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বাস ও ট্রাকের জট। যানবাহনের শব্দে পুরো এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একই অবস্থা কাশিপুর, চৌমাথা, আমতলার মোড়, সাগরদী, রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকা। বাস টার্মিনাল-সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, পদ্মা সেতু চালুর পর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর বাস ছেড়ে যায়। যে কারণে কাশিপুর থেকে রূপাতলী পর্যন্ত তীব্র যানজট লেগেই থাকে। এদিকে গত বছর পরিবেশ অধিদপ্তর নগরের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, জিলা স্কুল মোড় ও ল’ কলেজের সামনের এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করে; কিন্তু তা কেউ মানছেন না। পরিবেশ অধিদপ্তরও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে জানান সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু।

বরিশাল শের-ই-বাংলা হাসপাতালের পরিচালক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণে স্নায়ু ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের শিশু ও বয়স্করা।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক এ এইচ এম রাশেদ বলেন, শব্দদূষণ এলাকা চিহ্নিত করে দেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৬ বিধিমালা অনুযায়ী ১৭ বছরেও সেটি নির্ধারণ করে দেয়নি সিটি করপোরেশন।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মো. ফারুক বলেন, ‘শব্দদূষণের এলাকা চিহ্নত করার বিষয়টি আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close