নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আটার দাম বাড়ায় বিপাকে ডায়াবেটিক রোগী

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দাম বেড়েছে খাদ্যপণ্যের। এর ফলে বাংলাদেশেও আটা-ময়দার দাম বেড়েছে। ইউএসডিএর প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে আটার দাম গড়ে প্রতি কেজি ৬২ টাকা। আর ময়দার কেজি ৭২ টাকা। অন্যদিকে, আতপ চাল বা মোটা চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ খরচ বাঁচাতে আটার বদলে ভাতের দিকে ঝুঁকছেন। এ কারণে বিপাকে পড়েছেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা। এর ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, যেসব খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা ৫৫-এর কম, সেগুলো রক্তে শর্করার মাত্রায় কম প্রভাব ফেলে। আর এ ধরনের খাবার ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আদর্শ।

গবেষণার তথ্য বলছে, গমের আটার রুটির গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা ৬২। বার্লি, ছোলা-মটর কিংবা ভুট্টার আটার রুটি আরো স্বাস্থ্যকর। ছোলা-মটর ও বেসনের আটার রুটির গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা সবচেয়ে কম অর্থাৎ মাত্র ৫২। সেদিক থেকে বাদামি চালের ভাতের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা ৬৮ আর সাদা চালের ভাতের ৭৩, যা ডায়াবেটিক রোগীদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। তবে সব ডায়াবেটিক রোগীরাই ভাত খেতে পারবেন, তবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আটার রুটি খেলে এ রোগে আক্রান্তরা সুস্থ থাকেন। তাই আমরা ভাতের পরিবর্তে রুটি খেতে পরামর্শ দিই। বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আটার দাম বেড়েছে এটা ঠিক। কিন্তু ভাত খেতে পারবেন না ডায়াবেটিক রোগীরা এমনটি নয়। তবে পরিমাণমতো খেতে হবে। তবে ভাতে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। মানুষ কম খেতে চায় না; এটাই বড় সমস্যা। মনে রাখতে হবে, আটার দাম যতই বাড়ুক, তিন বেলা ভাত খাওয়া যাবে না।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডায়াবেটিক রোগটি থেকে বহু রোগের উৎপত্তি। তাই একে বহুমূত্র রোগ বলা হয়। কিন্তু অর্থনীতির মানুষ হিসেবে বলতে পারি, আটার দাম বেড়েছে, এটা ভর্তুকি দিয়ে হলেও কম রাখার চেষ্টা করতে হবে। কারণ দেশের বড় একটি অংশ আটার ওপরে নির্ভরশীল।’

ইউএসডিএর প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ আটার দাম গড়ে প্রতি কেজি ৬২ টাকা। আর ময়দার কেজি ৭২ টাকা। আগামী এপ্রিলে বাংলাদেশে উৎপাদিত গম বাজারে এলে এবং ভারত গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে দাম কমতে পারে। আর মোটা চালের দাম নতুন করে না বাড়লেও তা গড়ে ৫১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে দাম কম থাকায় মানুষ ভাত বেশি খাচ্ছেন।

প্রতিবেদন বলছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষ ৮৩ লাখ টন আটা-ময়দা কিনেছে বা খেয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে গমের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছিল, আটা-ময়দা ক্রয়ের পরিমাণ কমে ৭৪ লাখ টন হবে। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ধারণার চেয়েও বেশি কমে গিয়ে ৬৮ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। অর্থাৎ এক বছরে আটা-ময়দা ক্রয়ের পরিমাণ কমছে ১৫ লাখ টন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা এবার বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ওপর পড়েছে। বিশ্ববাজারে কম দামে গম রপ্তানির প্রধান উৎস ওই দুদেশ। ওই এলাকা থেকে গম আসা কমে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে গেছে। দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য আটার দাম আরেক দফা রেকর্ড পরিমাণ ভেঙেছে। আর বেশি দামে আটা কিনতে পারছে না এবং মানুষের বড় অংশ রুটি, বিস্কুট ও আটা-ময়দা থেকে তৈরি খাদ্য কম খাচ্ছে। গত এক বছরে ভাতের পরে দেশের দ্বিতীয় প্রধান ওই খাদ্য খাওয়ার পরিমাণ ১৫ লাখ টন কমেছে। দাম বেশি থাকায় আটার তৈরি খাবারের বদলে মানুষ ভাত খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক বছরে আটার দাম কেজিতে ৩৬ শতাংশ এবং ময়দার দাম ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। ফলে আটার দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকায় ডায়াবেটিসের কারণে যারা রুটি খেতেন তারা পড়েছেন বিপাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close