বদরুল আলম মজুমদার

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আন্দোলন কৌশল নিয়ে চিন্তিত বিএনপি

বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনপি। দলটির নেতারা গণ-অভ্যুত্থান ঘটানোর পক্ষে ক্রমাগত বক্তব্য দিয়ে গেলেও বাস্তবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে এখনো বেশ সন্দিহান। গত ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সবকিছু ঠিকমতো চললেও পরবর্তী কর্মসূচি বা আন্দোলন কৌশল নিয়ে দলটির সিনিয়র নেতারা এখন বেশ চিন্তিত। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নিয়ে যুগপৎ কর্মসূচি চালু হওয়ায় অনেকেই বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। তবে দিন দিন আন্দোলনের ছন্দপতন ঘটেছে। এ নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এখন আশাহত।

এ অবস্থায় সামনের দিনের কর্মসূচি জোরদার করার ব্যাপারে বেশ চিন্তিত বিএনপির হাইকমান্ড। দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির দুই নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি বুধবার যুগপৎ আন্দোলনের তৃতীয় কর্মসূচির পর লোকজনের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে একই দিন রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে অতীতের আন্দোলন ব্যর্থতার পেছনে ঢাকা মহানগরকে দায়ী করা হয়। এজন্য মহানগরকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় দলটির হাইকমান্ড। ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি করা হয়। তারপরও কর্মসূচিতে লোকজনের উপস্থিতি তেমনভাবে বাড়ছে না। বরং অতীতে বিভিন্ন কর্মসূচি থেকেও লোকজনের উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে কমছে। এর বাইরে বিভাগীয় সমাবেশের পর ঢাকার বাইরে যে কর্মসূচিগুলো পালন করা হয় তা অনেকটা দায়সারা গোছের হয়ে পড়েছে। দেশের অধিকাংশ জেলা ও মহানগরের কর্মসূচি পালনের ধরন দেখে খুশি নয় দলের সিনিয়র নেতারা।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা আমাদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। আন্দোলনের কোনো ছন্দপতন ঘটেনি। আন্দোলন কখনো তুঙ্গে উঠবে, আবার কখনো কৌশলগত কারণে নিম্নমুখী হবে- এটাই হলো আন্দোলনের ধরন। এটাই আন্দোলনের নিয়ম।

তার ভাষায়, এ ধরনের আন্দোলন নদীর জোয়ার-ভাটার মতো। জোয়ার আসে আবার নেমে যায়। কিন্তু এই জোয়ার আসা-নামার পরেই একটা সাইক্লোন হয়। সেটা একদিন ঘটবে এখানে।

তবে বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ না শর্তে প্রতিবেদককে বলেন, খালি মিছিল আর সভা সমাবেশ করে সরকারকে তাদের দাবির মুখে নত করা যাবে না। আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে। আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, বিএনপিকে একাই কিন্তু এই আন্দোলনটা চালিয়ে যেতে হবে। সমমনা দলদের কাছ থেকে খুব একটা আশা করা যায় না। পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচন বিতর্কিত হওয়ার কারণে বিএনপির দাবির প্রতি সমর্থন আছে অনেক মানুষের। কিন্তু সেটিকে বাস্তব রূপ দিতে বা গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হলে সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় থাকলে হবে না। গত কয়েক দিনের কর্মসূচির ধরন দেখে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা বেশ হতাশ। তাই তাদের জাগিয়ে তুলতে হলে বিএনপিকে ডু অর ডাই খেলতে হবে।

জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশসহ পরবর্তী সময়ে গণমিছিল, গণ-অবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশে প্রত্যাশা অনুযায়ী মহানগর নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল না। তাই ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক কর্মসূচি পালন করার ব্যাপারে মত দেন নীতিনির্ধারকরা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে মহানগরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ‘পদযাত্রা’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। যুগপৎ কর্মসূচির ফাঁকে চারদিনের এ কর্মসূচির মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে চায় ঢাকা মহানগর বিএনপি।

আজ মহানগর উত্তর বিএনপি রাজধানীর বাড্ডা থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত এবং ৩১ জানুয়ারি গাবতলী টার্মিনাল থেকে শুরু করে মিরপুর-১নং হয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। একইভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত এবং ১ ফেব্রুয়ারি মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। প্রতিটি পদযাত্রা দুপুর ২টায় শুরু হবে।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ১০ দফা দাবি আদায়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি চার দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে। আশা করি, এই কর্মসূচি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হবে এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবি বেগবান হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ কর্মসূচি মহানগর বিএনপির। অন্যান্য দলকেও বলব, তারা অংশগ্রহণ করতে চাইলে যুগপৎভাবে করবেন।

এদিকে পদযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন মহানগর নেতারা। বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যৌথ সভা হয়। সূত্র জানায়, সভায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ মহানগরের অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা পদযাত্রা কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেবে বলে জানান। মহানগর বিএনপি নেতারাও অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি নেতাকর্মী থাকবে বলে অঙ্গীকার করেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক জানান, মহানগরের সব ওয়ার্ড কমিটি এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। বুধবার উত্তরের ২৬ থানার কমিটিও ঘোষণা করা হয়। দক্ষিণেরও ২৪ থানার কমিটি যে কোনো সময় দেওয়া হবে। এসব কমিটি গঠন নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকলেও পদযাত্রা কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই অংশ নেবেন। বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশনা হচ্ছে, যেসব নেতা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না, তাদের তালিকা করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

‘আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে’ ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদরে সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে। এর আগেই ঢাকা মহানগর বিএনপি চার দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি দিল বিএনপি।

বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঢাকা মহানগরকে আরো শক্তিশালী দেখতে চান। সম্প্রতি মহানগরের এক শীর্ষ নেতা লন্ডনে গিয়েছিলেন। তাকে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মূলত জেলার নেতারা মনে করেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অতীতে যে আন্দোলন হয়েছে, সেখানে তৃণমূলের কোনো ব্যর্থতা ছিল না। শুধু ঢাকা মহানগরের কারণে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলেও সফলতা ঘরে আসেনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close