নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩

সরস্বতী পূজা আজ

আড়ম্বরে হবে বিদ্যাদেবীর আরাধনা

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি)। সরস্বতী পূজা বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠেয় একটি ধর্মীয় উৎসব। সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও সরস্বতী পূজার বর্তমান রূপটি আধুনিককালে প্রচলিত হয়েছে।

তবে প্রাচীনকালে তান্ত্রিক সাধকরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন বলে জানা যায়।

পূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা হয়। এ তিথি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে সরস্বতী পূজা হবে।

এদিকে, মহামারীর দাপট কমে আসায় এবারে ‘পূর্ণ আড়ম্বরে’ এবং ‘পুরোনো আমেজে’ বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধানা করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্মের শিক্ষার্থীরা; এবারে ৭৩টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে জগন্নাথ হলে।

ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এ পূজার মূল কেন্দ্র বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ভগবানের জ্ঞান ও বিদ্যার রূপ হলেন দেবী সরস্বতী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জগন্নাথ হলের মাঠে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে তারই আরাধনা করবেন শিক্ষার্থীরা।

জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, করোনার বিধিনিষেধ কাটিয়ে আবারও আমরা বড় পরিসরে বিদ্যাদেবীর উপাসনা করতে পারছি, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। ৭৩টি মণ্ডপে পূজা পালন করা হবে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টায় প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজার কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর সাড়ে ৭টায় বাণী বন্দনা এবং ৮টা ১০ মিনিটে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হবে। এ ছাড়া, বেলা সাড়ে ১১টায় প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে পূজার কাজ শেষ হবে।

জগন্নাথ হল ছাড়াও ছাত্রীদের জন্য রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, সুফিয়া কামাল হল, কুয়েত মৈত্রী হলে বীণাপাণির আরাধনায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে বলে জানান মিহির লাল সাহা।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) জগন্নাথ হলে গিয়ে দেখা যায়, হলের খেলার মাঠে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা পূজামণ্ডপ তৈরিতে কারু ও মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন। পূজার আগের রাতেই মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে হয়, তাই মাত্র এই একটি দিনই হাতে থাকায় ব্যস্ততার শেষ নেই তাদের।

পূজা ঘিরে জগন্নাথ হলের দুই পাশের ফটক ও রাস্তায় আলোকসজ্জার কাজও সেরে নেওয়া হয়েছে। চলছে সিসি ক্যামেরা (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) বসানোর কাজ।

গত দুই বছরে পূজার আয়োজনের ‘আড়ম্বর’ আটকে যায় কোভিড মহামারির বিধিনিষেধের বেড়াজালে। তবে ?জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে হল কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয়ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছিল।

এবারও হলের খেলার মাঠে চারদিক দিয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা পূজার আয়োজন করেছে। ৭৩টি মণ্ডপের অধিকাংশই বিভিন্ন বিভাগের ‘থিমের’ আদলে গড়া। অন্য বছরের মতো এবারও জগন্নাথ হলের পুকুরের মধ্যে বসানোর জন্য দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা তৈরি করছে চারুকলা অনুষদ।

চারুকলার ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে প্রতিমাটি তৈরি হচ্ছে বলে জানান কারুকার্য বিভাগের শিক্ষার্থী তন্ময় মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘আমাদের তৈরি করা এ প্রতিমা হবে আগের তৈরি সব প্রতিমা থেকে বড়। এর উচ্চতা ৩২ ফুট। এটা তৈরিতে আমরা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করেছি।’

জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইটটি ফোর’ বইয়ের থিমের আলোকে মণ্ডপ তৈরি করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এ বিভাগের শিক্ষার্থী প্রান্ত দত্ত বলেন, আমাদের পূজামণ্ডপ জর্জ অরওয়েলের ‘মিনিস্ট্রি অব ট্রুথের’ আদলে সাজানো। কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী সংবাদ, সংগীত, কলা ইত্যাদিকে ব্যবহার করে মিডিয়ার দ্বারা কীভাবে তার জণগণের কাছে তাদের প্রোপাগাণ্ডা প্রচার করে, তার প্রতিভূ এই ‘মিনিস্ট্রি অব ট্রুথ’।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close