সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩

বিকট শব্দে যমুনা সার কারখানা বন্ধ

দেশের সর্ববৃহৎ দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানা (জেএফসিএল) যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা কারখানা পরিদর্শন করতে গেলে বিকট শব্দে অ্যামোনিয়া প্লান্ট বিকল হয়ে যায়। ফলে ভরা মৌসুমে বন্ধ হয়ে গেছে কারখানার ইউরিয়া সার ও অ্যামোনিয়া উৎপাদন। রবিবার (২২ জানুয়ারি) বিকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে পাঁচ সদস্যদের তদন্ত কমিটি করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

জেএফসিএল সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর যমুনা সার কারখানা চালু হওয়ার পর থেকে অ্যামোনিয়া প্লান্টের এনজি বুস্টার কমপ্রেশারে মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রোজেন অপচয়সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ এনজি বুস্টার ক্রয় ও পুনঃস্থাপনের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘ইনগার্সল-রেন্ড (ইন্ডিয়া) লিমিটেডকে অবগত করে। পরে ইনগার্সল-রেন্ড কর্তৃপক্ষ কারখানা পরিদর্শনের জন্য তাদের ডেপুটি ম্যানেজার (সার্ভিস) ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞ তানাজি এস পন্দেকারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম পাঠায়। ওই টিমের অপর দুই সদস্য হলেন ইনগার্সল-রেন্ডের টেরিটরি ম্যানেজার (সার্ভিস) মো. ইমামুল সর্দার এবং মার্কেটিং প্রতিনিধি কসমো মার্কেটিং কনসালট্যান্টস প্রাইভেট লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম। ভারতীয় বিশেষজ্ঞ তানাজি এস পন্দেকার রবিবার বিকালে কারখানার অ্যামোনিয়া প্লান্টের এনজি বুস্টার কমপ্রেশার পরিদর্শন করছিলেন। এ সময় তিনি একটি ভুল বাটনে চাপ দিলে বিকট আওয়াজে অ্যামোনিয়া প্লান্ট বন্ধ হয়ে যায়। এতে মুহূর্তেই ইউরিয়া সার ও অ্যামোনিয়া উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে। বিকট আওয়াজে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কিত ও দিশাহারা হয়ে পড়েন। বিকট শব্দের কারণে কারখানার পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন দিগি¦দিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি প্রথমে স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও সোমবার সকাল থেকে ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি স্যাবোটাজ কিনা তা নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়। দুর্ঘটনার বিষয়টি রহস্যজনক হওয়ায় কারখানার ভেতরে ও বাইরে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে কারখানার ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (এমটিএস) মো. আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমিও কারখানার মেশিনারিজ প্রধান ভূপতি চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ তানাজি এস পন্দেকার এনজি বুস্টার কমপ্রেসারের বিভিন্ন প্যারামিটার ঘুরে দেখছিলেন। এ সময় এমটিএস বিভাগের কয়েকজন কর্মচারী ওভারটাইম সংশ্লিষ্ট কিছু জটিলতা নিয়ে আমার কাছে আসেন। তাদের সঙ্গে আমি আলাদাভাবে কথা বলায় আমার অনুপস্থিতিতে ভূপতি চন্দ্র বিশ্বাস অ্যামোনিয়া শিফট ইনচার্জ ফজলুল হককে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে থাকার জন্য বলেন। পরিদর্শন চলাকালে বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ অ্যামোনিয়া কমপ্রেসার বন্ধ হয়ে যায়। এতে অ্যামোনিয়া ও ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।’

এই প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় পরিদর্শকের সঙ্গে থাকা মো. আফাজ উদ্দিনকে তদন্ত কমিটির প্রধান ও ভূপতি চন্দ্র বিশ্বাসকে সদস্য রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গ্যাস সঙ্কটের অজুহাতে গত বছরের ২১ জুন থেকে টানা ছয় মাস কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। গত ২০ ডিসেম্বর সার উৎপাদন চালু হলেও নতুন করে বন্ধ হওয়ায় নানা সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে কবে নাগাদ ফের উৎপাদনে যাবে তা নিশ্চিত বলতে পারেনি কেউ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close