গাজীপুর প্রতিনিধি

  ০৯ ডিসেম্বর, ২০২২

অনলাইনে জুয়া

হাজার কোটি টাকা পাচার গাজীপুরে গ্রেপ্তার ৯

অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে হুন্ডিতে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের সঙ্গে জড়িত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোল্যাহ নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তাররা হলো শরীয়তপুরের জাজিরা থানার বড়কান্দি মৃধাবাড়ীর মো. নাসির মৃধা, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া থানার গৌরিপুর মধ্যপাড়া এলাকার মারুফ হাসান, একই থানার ভালুকজান এলাকার জাহিদুল ইসলাম ওরফে রসুল, গৌরীপুর মধ্যপাড়া এলাকার আশিকুর রহমান ওরফে আশিক, চৌদার এলাকার কাউসার হোসেন, বড়ুকা এলাকার রুবেল হোসেন, কয়ারচালা এলাকার আশিকুল হক, ভালুকজান এলাকার আকরাম হোসেন ওরফে রিপন ও গৌরিপুর পৌরসভা এলাকার মুরাদ হাসান। গত বুধবার (৭ নভেম্বর) জিএমপির সদর থানা পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ কমিশনার মোল্যাহ নজরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে অবৈধ অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম াবষশর ষরাব (সাবেক নাম ৯ ডরপশবঃং) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে উঠতি বয়সের যুবকদের আসক্ত করে বিদেশে পাচার করেছে হাজার কোটি টাকা। তারা মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটস অ্যাপস অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে যোগাযোগ করে। এই সার্ভারটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ভেলকি লাইভের অ্যাডমিন আকাশ মালিক ওরফে রনি (বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুবাই প্রবাসী)। তিনি এটিকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদেশি নম্বর ব্যবহার করে বাংলাদেশের ৫টি লেয়ারে (অ্যাডমিন, সাইট সাব অ্যাডমিন, সুপার এজেন্ট, মাস্টার এজেন্ট ও ইউজার) বিভক্ত করে। একজন ইউজার (রুট লেভেলের অনলাইন জুয়াড়ি) https://allagentlist.com/ad.php তে প্রবেশ করে ক্লিক করলেই ১০০০ টাকার বিপরীতে ১০টি ডিজিটাল কয়েন দিয়ে তার অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, এই ডিজিটাল কয়েন দিয়ে সারা বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট, ফুটবল লিগ, টেনিস ও বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার মাধ্যমেও অনলাইনে জুয়া খেলা হয়। ব্যবহারকারী জয়ী হলে ডিজিটাল কয়েন ফেরত নিয়ে এর বিপরীতে আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে থাকে। হারলে তার পুরো ডিজিটাল কয়েনটাই পর্যায়ক্রমে জুয়া পরিচালনাকারীর কাছে জমা হয়ে যায়। ওই ভেলকি লাইভের সাইটে একজন অ্যাডমিন, ১৪ জন সাইট সাব অ্যাডমিন, ২৪০ জন সুপার এজেন্ট, ১৫০০-এর অধিক মাস্টার এজেন্ট এবং সারা দেশে দুই লক্ষাধিক ইউজার রয়েছে।

কমিশনার বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জিএমপি সদর থানা পুলিশ মাস্টার এজেন্ট নাসিরকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, তিনি রুট লেভেলের প্রায় ৭০ ইউজার থেকে দৈনিক লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন সুপার এজেন্ট মারুফের কাছে দেন। পরে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মারুফকে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরো সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কমিশনার আরো বলেন, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের মাধ্যমে জানা যায় সে তার ঊর্ধ্বতন সাইট সাব অ্যাডমিন হকের (ওয়েবসাইট নেম) এজেন্ট ব্যাংকের ১৪৮টি অ্যাকাউন্টে গত নভেম্বর মাসে ২ কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয়েছে। এ হিসাবে বাংলাদেশে প্রায় ১৫০০টি মাস্টার এজেন্টের মাধ্যমে এক মাসেই ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়, যা বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও লন্ডারিং আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রেস বিফ্রিংয়ে অতিরিক্ত কমিশনার জিয়াউল হক, মো. দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close