মো. এনামুল হক বাদশা, সিংড়া (নাটোর)

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০২২

চলনবিলে সরিষার সমারোহ

চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে * লাভের আশায় কৃষক

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রকৃতির ভিন্ন রূপ নিয়ে হাজির হয় প্রতিটি ঋতু। কখনো মেঘলা আকাশ আর বৃষ্টি, কখনো দাবদাহ, কখনো কনকনে শীত। ঋতু বদলের ধারায় এখন হেমন্তকালের শেষ সময়, আর কয়েক দিন পরই শুরু হবে শীতকাল। হেমন্ত-শীতের এই মাঝামাঝি সময়ে এক অপরূপ রূপে সেজেছে নাটোরের সিংড়ার চলনবিলের সরিষাখেতের মাঠ। যে দিকে তাকানো যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। এ যেন রূপকথার হলুদের এক বিশাল রাজ্য। যে রাজ্যে হলুদ রাজা-রানি আর হলুদ প্রজাদের বসবাস।

দৃষ্টিনন্দন হলুদ সরিষার এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে দর্শনার্থীদের পদচারণা এখন সরিষাখেতে। জমির আইলে বসে কেউ গল্প করছেন আবার কেউ মোবাইলে তুলছেন সেলফি। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে মৌমাছির পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছেন মধু চাষিরাও। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের সূত্র মতে, চলতি বছর চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ২০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এ বছর সরিষার চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর। এ উপজেলায় গতবার সরিষার চাষ হয়েছিল ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে। গতবারের তুলনায় এ বছর প্রায় ৭০০ হেক্টর সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকরা বলছেন, সরিষার ভালো ফলন আর সঠিক দাম পাওয়ায় সরিষা চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে। এছাড়া চলতি বছরে চলনবিলের নিচু এলাকায় বন্যার আগাম পানি নেমে যাওয়ায় ওই সব এলাকায় নতুন করে সরিষার চাষ হয়েছে। সব মিলেই এ অঞ্চলে এ বছর সরিষার চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

সম্প্রতি উপজেলার লালোড়, ডাকমুন্ড, বারুইহাটি, শেরকোল, দমদমার জোলার বাতা, ডাহিয়ার বেড়াবাড়ি, পারিল, আয়েশসহ বিভিন্ন মাঠ ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

লালড় বারুইহাটি গ্রামের কৃষক রনজিৎ সরকার বলেন, গতবছর ২৫ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার চাষ করেছিলাম। হালচাষ, বীজ, পানি সেচ ও সারসহ ফসল ঘরে উঠানো পর্যন্ত প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছিল সাড়ে ৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন পেয়েছিলাম ৬ থেকে ৭ মণ। ভেজা অবস্থায় সরিষা বিক্রয় করেছি প্রতি মণ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা। এতে খরচ বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। ভালো ফলন আর দাম পেয়ে লাভবান হয়েছি। এ বছর ৫ বিঘা বৃদ্ধি করে ৩০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে আশা করি এ বছরও লাভের মুখ দেখব।

রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের ঝিঙা বাড়িয়া গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, কৃষি কর্মকর্তার পরার্মশক্রমে এ বছর ১০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি।

ডাহিয়া ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, এ বছর আগাম বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আমাদের এই মাঠজুড়ে সবাই সরিষার চাষ করেছে। গত ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এই মাঠে এত সরিষার চাষ হয়নি। আমি ২০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আশা করছি সরিষা ঘরে তুলে বোরো ধান রোপণ করব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সেলিম রেজা বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলা একটি কৃষি প্রধান অঞ্চল। গত বছর এ অঞ্চলে সরিষার চাষে লাভবান হওয়ায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরাও খুশি। আমরা আশা করছি সরিষা উৎপাদনের এই বৃদ্ধি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। এতে করে বিদেশ থেকে ভোজ্য তেল আমদানির নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে যাবে এবং দেশি তেল ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close