মনিরুল ইসলাম

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০২২

সাম্বার মোহনীয় উচ্ছ্বাস

দক্ষিণ কোরিয়া-পর্তুগালকে হারিয়ে দেওয়ার পর একটা আলোচনা তুঙ্গে ছিল। যে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকেও হারিয়ে চমক দিতে পারে হয়তো। এমন আলোচনা কম হয়নি নেহাত। তখন এই আলোচনা করা নিতান্তই স্বাভাবিক ছিল। কারণ, প্রথম রাউন্ডে নিজেদের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে এক গোলে হেরে যায় আলিসন বেকাররা। সেজন্য একটা শঙ্কা আর অজানা ভয় ছিল।

কিন্তু এসব কাল্পনিক আলোচনা, শঙ্কা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিল তিতের শিষ্যরা। দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়ে সেলেসাওরা পৌঁছে গেছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে।

গোড়ালির চোট থেকে সেরে নতুন রূপে প্রত্যাবর্তন করেছেন তারকা নেইমার। ধবধবে সাদা রং করা চুল, চনমনে চেহারা। ফুরফুরে মেজাজে নায়কের ভঙ্গিতে মাঠে প্রবেশ করলেন। তখন পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বসিত দর্শক।

এই নেইমারের ইনজুরি দলের কী পরিমাণ অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছিল সেটা টের পেয়েছিল ভালোই। যদিও ব্রাজিল দলের বাকি সবাই একেকজন আগুনের কামান। তবু নেইমার তো নেইমার-ই। যিনি মাঠে থাকলে দল ভরসাব্যঞ্জক থাকে।

তখন খেলার বয়স ৭ মিনিট। বক্সের বাইরে বল ধরে রাফিনিয়া তা নেইমারের উদ্দেশ্যে বাড়িয়ে দিলেন। বল আলগোছে নেইমার ছুঁতে পারলেও, বল চলে যায় ভিনিসিয়াস জুনিয়রের কাছে। তার নির্ভুল শটে বল গোলকিপারের নাগাল পেরিয়ে সোজা গোলপোস্টের জালে জড়ায়। মুহূর্তে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ব্রাজিলের ঐতিহ্যশালী সাম্বার নৃত্যোৎসবে মেতে ওঠে। ১৩ মিনিটে বক্সের ভেতর রিচার্লিসনকে ফাউল করার খেসারত দিতে হয় কোরিয়াকে। রেফারি আগপাছ না ভেবে সরাসরি পেনাল্টির ইশারা দেয়। আর নেইমার পেনাল্টি ডজ দিয়ে বল গোলকিপারের চোখ ফাঁকি দিয়ে গোল করে ব্যবধান ২-০-তে রূপান্তর করতে একটুও ভুল করেননি। ২৯ মিনিটে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বল নিয়ন্ত্রণ দেখিয়ে সিলভার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান খেলে বক্সের ভেতরে স্পেস নিয়ে কোনাকুনি শটে গোল করে স্কোর ৩-০ করেন ছন্দে থাকা রিচার্লিসন। ৩৬ মিনিটে ভিনিসিয়াসের পাস থেকে পাকেতার গোলে ৪-০ দাঁড়ায় স্কোরশিটে। ব্রাজিলের এমন গোলবন্যা দেখে অনেকে হয়তো ভেবেছেন আজকে এই সংখ্যা ৭ কিংবা ৮ হবে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল একদমই নিষ্প্রভ। ধারহীন। ছন্নছাড়া। এই সুযোগে ব্রাজিলের রক্ষণে হানা দিয়ে ৭৬ মিনিটে পাইক সিয়ং-হোর গোলে কোরিয়া কিঞ্চিৎ মনকে সান্ত¡না দিয়েছিল। ব্রাজিলকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দেওয়ার দিনে, কোরিয়ার এই দুর্দান্ত গোলটিও স্মৃতিপটে থাকবে অচিরেই।

চোট জর্জরিত, হার, নিজেদের ছন্দেবন্ধে ফেরার দুশ্চিন্তা সবকিছু ভুলে এভাবে বোধহয় প্রত্যাবর্তন করে! সেটা ব্রাজিল দেখিয়ে দিল আরেকবার। তাদের পায়ে যেকোনো লহমায় ছন্দ ফিরতে পারে। এমন বিশ্বাস ছিল সবারই। সে বিশ্বাসের প্রতিদান ইঞ্চি ইঞ্চি দিয়েছে তারা। এই দিন চেনা ছন্দ আপন রূপে দেখা দিয়েছেন নেইমার, রিচার্লিসন, ভিনিসিয়াসরা। যেন সবুজ ক্যানভাসে শিল্পীর মতো বাহারি সব ছঁবি আঁকছিলেন। পুরো মাঠে সাম্বার মোহনিয়া নৃত্যতে মাতোয়ারা। চার গোলে প্রদর্শন করলেন চার পদের নৃত্য। তাতে উৎসবের আমেজে আমোদিত স্টেডিয়াম থেকে গোটা ফুটবল বিশ্ব।

খেলা শেষ তখন। পেলের আইকনিক ছবি নিয়ে মাঝমাঠে হাজির ব্রাজিলের ফুটবলাররা। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন ফুটবলের ‘কালোমানিক’ পেলে। তিনি হয়তো ব্রাজিলের এমন একপেশে জয় দেখে আনন্দে একটুখানিও পুলকিত হয়ে উঠেছেন। আর হয়তো মনে মনে বলছিলেন তাকে ছেলেরা এই জয়টি উৎসর্গ করেছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close