বদরুল আলম মজুমদার

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০২২

জনসভার ভেন্যু ইস্যু

বিএনপির সুর নরম

নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ করতে অনড় থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেই অবস্থানের পরিবর্তন করে কিছুটা নরম হয়েছে বিএনপি। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, জনসভার ভেন্যু ইস্যুতে বিএনপি নেতারা এখন তাদের চড়া সুর খানিকটা নামিয়েছেন। দলটি সমাবেশস্থান হিসেবে নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে রাজধানীর অন্য কোনো সড়কে সমাবেশ করতে চাইলেও রাজি না পুলিশ। গত রবিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেন। এ অবস্থায় বিএনপিসহ অনেকেরই ধারণা জন্মে তৃতীয় কোনো ভেন্যুতে হয়ত সমাবেশ করতে পারবে বিএনপি। কিন্তু ভেন্যু ইস্যুতে বিএনপি নরম হলেও সরকার এবং পুলিশ প্রশাসন ক্রমশ কঠোর হচ্ছে। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পথচারীর রাস্তা বা যানবাহন চলাচলের জায়গায় সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়া যায় না।

জানা গেছে, বিএনপি এখনই পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চায় না। ঢাকাসহ সারা দেশে একযোগে অনেক মামলা, পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যে পড়ে কিছুটা থমকে গেছে দলটির নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে ঢাকার প্রতিটি থানায় নতুন করে মামলা এবং স্থানীয় নেতাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশির কারণে নেতারা কোথায়ও স্থির হতে পারছেন না। এ অবস্থায় নয়াপল্টনের পুলিশের অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করে বাড়তি ঝুঁকি নিতে রাজি হচ্ছে না দলের একটি বড় অংশ। তবে সরকারের বিরুদ্ধে কট্টর অবস্থানে থাকা কিছু নেতা দলীয় অবস্থানে এই পরিবর্তনের সমালোচনা করছেন। তারা মনে করছেন, বিএনপির সুবিধামতো জায়গায় ঢাকায় সমাবেশ করতে দেবে না সরকার। এটা বুঝার আর বাকি নাই। তাই বিএনপির মতো করেই সমাবেশ করতে হবে। সরকারের কথা শুনে লাভ নেই।

এদিকে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের অনুমতি প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, ‘আমরা ঢাকার কোনো জায়গায় খোলা রাস্তা বা সড়কে কাউকে সমাবেশের অনুমতি দিতে পারি না। তবে খোলা মাঠ হলে বিবেচনার বিষয় থাকে।’ বিএনপির পক্ষ থেকে রাজধানীর আরামবাগে সমাবেশ করার নতুন ইচ্ছা বিএনপি পুলিশকে জানিয়েছে। তবে আরামবাগে সমাবেশ অনুমতি দিতেও আপত্তি পুলিশের। এ বিষয়ে কমিশনার বলেন, সেটিও একটি রাস্তা, আমরা জনসমাবেশের জন্য জনগণকে দুর্ভোগে ফেলতে পারি না।’ তাহলে বিএনপি কোথায় সমাবেশের অনুমতি পাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানে সমাবেশ করতে পারে। জনগণের অসুবিধা করে পুলিশ প্রশাসন কোনো দলকে পথচারী এবং যানবাহন চলাচলের সড়কে সভা করে ট্রাফিক দুর্ভোগ ঘটাতে দিতে পারি না।’

পুলিশের এই কঠোর মনোভাবের পর বিএনপির পক্ষ থেকে গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকায় সমাবেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিকল্প স্থান যদি আমাদের কাছে সন্তোষজনক মনে হয়, যদি নিরাপদ মনে হয় সেক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে। এই মুহূর্তে বিকল্প নাম বলা যাচ্ছে না। নয়াপল্টনে আমাদের সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত এখনো আছে।

বিএনপির পছন্দের জায়গার কোনো তালিকা আছে কি না জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে হতে পারে আমারবাগ এলাকা।’

এ দিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরে ভীতিকর অবস্থা তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, কর্মীদের নিয়ে লিফলেট বিতরণ করতে গেলে বিএনপির ঢাকা মহানগরের নেতা ইশরাক হোসেনের ওপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। ইশরাক হোসেন প্রাণে বাঁচলেও তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক নেতাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস আরো বলেন, ‘একটা সভায় সরকার পতন হবে না। সরকার কেন ভয় পায়, বুঝি না।’

গত ২৮ সেপ্টেম্বর জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের ঘোষণা করে বিএনপি। সে অনুযায়ী দলটি আগামী ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী গণসমাবেশ করেছে।

ওইসব গণসমাবেশের ধারাবাহিকতায় এবার সর্বশেষ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীতে। সে হিসাবে আগামী ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ঢাকার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের জায়গায় গণসমাবেশ করতে চায়। তবে এবার দলটির ঘোষিত ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে এরই মধ্যে আপত্তি আসে পুলিশের কাছ থেকে, সরকারও চায় না বিএনপি নেতাকর্মীরা পুরানা পল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হোক। পাশাপাশি ঢাকা শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) তাদের পছন্দের ভেন্যুর পরিবর্তে ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বিএনপির জন্য বরাদ্দ দেয়। এই বরাদ্দ পছন্দ হয়নি বিএনপি নেতাদের। তাদের সন্দেহ সরকার বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে বিপদে ফেলবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close