নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস আজ
আজ ৩ ডিসেম্বর। ৩১তম বিশ্ব ও ২৪তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য পরিবর্তনমুখী পদক্ষেপ : প্রবেশগম্য ও সমতাভিত্তিক বিশ্ব বিনির্মাণে উদ্ভাবনের ভূমিকা’। শারীরিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই দিবসটির সূচনা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর-২০২২ সালের তথ্য মতে, প্রতিবন্ধিতার শিকার মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রতিবন্ধিতা রুখে দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ ও সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম হলো প্যারেন্টিং এডুকেশন। এর মাধ্যমে মা-বাবাকে শিশুর যত্নে যথাযথভাবে সচেতন ও শিক্ষিত করে তোলা সম্ভব।
যেকোনো মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় তার প্রাক- শৈশবকাল, অর্থাৎ শূন্য থেকে পাঁচ বছর। এ সময় একজন মানুষের মস্তিষ্কের ৯০ শতাংশ বিকাশ ঘটে। এ সময় সামান্যতম অবহেলা হতে পারে শিশুর জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ।
দিবসটি পালনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উন্নয়নের মূলধারায় প্রতিবন্ধীদের একীভূতকরণ এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দেশব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দেশের প্রতিটি জেলায় সমাজসেবা অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে তারা প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন এবং দিবসটির সাফল্য কামনা করেন।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধিতা বেশি। প্রতিবন্ধীর ২ দশমিক ৯২ শতাংশ গ্রাম বসবাস করে, ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ থাকে শহরে। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধীর হার সর্বোচ্চ বলে জরিপে দেখা গেছে। ২ দশমিক ৮০ শতাংশের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধীর হার ১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
অন্য ধরনের প্রতিবন্ধীর মধ্যে মানসিক প্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ, বাকপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১৪ এবং শ্রবণপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মাত্র ২৭ দশমিক ২১ শতাংশ কাজে নিযুক্ত আছেন।
এ ছাড়া সামাজিকভাবে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হন প্রতিবন্ধীরা। সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত। এমনকি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) বিভিন্ন কর্মসূচি থেকেও তারা সেবা পাননি। অনেকে বঞ্চনা ও হয়রানির অভিযোগ করেন না। যারা করেছেন, তারাও সুবিচার পাননি।
প্রতিবেদনে প্রতিবন্ধী শিশুদের লেখাপড়ার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, এদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্তও পড়ালেখা করে না। আর উচ্চমাধ্যমিক স্কুল পর্যন্ত যায় না ৭৫ শতাংশের বেশি।
এদিকে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতা ৮৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে চাকরিপ্রত্যাশী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদ। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জাতীয় অভিন্ন শ্রুতিলেখক নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে এসব দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে সংগঠনটির আহ্বায়ক মো. আলী হোসেন বলেন, আজ ৩ ডিসেম্বর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল কোটা বাতিল করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগদানের বিশেষ নিয়োগ ব্যবস্থা চালু করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা অবিলম্বে এটি বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইব্রাহীম খলিল বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হচ্ছে শ্রুতিলেখক সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানে অবিলম্বে ভারতীয় শ্রুতিলেখক নীতিমালার আদলে এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবিত নীতিমালার আলোকে একটি জাতীয় অভিন্ন শ্রুতিলেখক নীতিমালা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করার দাবি জানাচ্ছি।
নবম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত সরকারি, সরকারি স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিতসহ সব ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের দাবি জানান বক্তারা। তারা বলেন, বিশেষ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের উল্লিখিত পদে যে জায়গাগুলোতে কাজের সুযোগ আছে, সেখানে আমাদের সুযোগ করে দিতে হবে।
নারী প্রতিবন্ধীরা সবদিক থেকেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে দাবি করে তারা বলেন, আমরা চাই রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবন্ধী নারীদের চাকরিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হোক।
"