নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ ডিসেম্বর, ২০২২

গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচন

১৩৪ নির্বাচনী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িত রিটার্নিং অফিসারসহ ১৩৪ নির্বাচনী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যরা হলেন ১২৫ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহা, একজন নির্বাহী অফিসার এবং পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া অনিয়ম সংঘটিত ১৪৫ নির্বাচনী কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টেরা ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। তবে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৪৫ কেন্দ্রের যে অনিয়ম হয়েছে আগামীতে যাতে এ ধরনের অনিয়মে কেউ সম্পৃক্ত না হন সেজন্য ৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ‘ইভিএম’ এবং গোপন ক্যামেরা ‘সিসিটিভি’ নির্বাচনে ব্যবহার হলে সেখানে প্রার্থীদের কোনো পোলিং এজেন্ট না রাখা, কেন্দ্রের ভোটকক্ষে পোলিং অফিসার কমানো (বর্তমানে দুজন দায়িত্ব পালন করেন আগামীতে একজন রাখা), দুর্গম এলাকায় ইভিএমের বদলে প্রথাগত ব্যালটে ভোট গ্রহণ করা (কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, যন্ত্রের বাটনে চাপ দিলে জোরে একটা শব্দ হয়; যার কারণে সাধারণ ভোটাররা ভয় পেয়ে যান এবং তাৎক্ষণিক কেন্দ্র ত্যাগ করেন; এতে বাইরে অপেক্ষারত ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, এজন্য সাধারণ মানুষকে ইভিএম সম্পর্কে শিক্ষিত করা এবং বেশি বেশি প্রচার করা), ভোটের গোপন কক্ষে ভোটার ছাড়া কেউ প্রবেশ করলে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে বাধা প্রদান করা এবং ভোটকক্ষে ট্রাভেল সুটার (প্রশিক্ষিত কিছু ইসির কর্মকর্তা থাকেন যাদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়) হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব না দেওয়া। কমিটি তাদের সুপারিশে এ বিষয়ে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি সার্বক্ষণিক এক রুমে অবস্থান করেন তাহলে ভোটগ্রহণে সমস্যা তৈরি হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় ইভিএম না রাখা।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এ সুপারিশের সিদ্ধান্তের কথা জানান। গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি এ সুপারিশের কথা উল্লেখ করেন। তবে কোনো ধরনের অনিয়মে সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধেও সরাসরি অনিয়মে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থার সুপারিশ আসেনি।

ইসি তার সুপারিশে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর বিধান মতে এ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। সিইসি জানান, দায়িত্বে অবহেলার জন্য রিটার্নিং অফিসার ইসির আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজন প্রিসাইডিং অফিসারকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত, ৫ এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, ১২৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে ব্যবস্থা নিয়ে তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে, এডিসি ও একজন নির্বাহী হাকিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ১৪৫ কেন্দ্রের নির্বাচনী এজেন্টদের আর ভোটে দায়িত্ব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিইসি তার সুপারিশে যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন তারা হলেন ২ নম্বর কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরুণ কুমার, এসআই (গোবিন্দগঞ্জ থানা), ৫৪ নম্বর কেন্দ্রের মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, এসআই (গোবিন্দগঞ্জ থানা), ৫৯ নম্বর কেন্দ্রের মো. আনিছুর রহমান, এসআই (গোবিন্দগঞ্জ থানা), ৬২ নম্বর কেন্দ্রের কনক রঞ্জন বর্মন, এসআই (সাদুল্যাপুর থানা) ও ১০৫ নম্বর কেন্দ্রের মো. দুলাল হোসেন, এএসআই, (আটোয়ারী থানা, পঞ্চগড়)। এসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা তথা অসদাচারণের কারণে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে পত্র দেবে। কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করবে বলে উল্লেখ করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও ইসির সিদ্ধান্ত : ১২৫টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন (অনুচ্ছেদণ্ড১৩ দ্রষ্টব্য), সেসব কর্মকর্তার নামের তালিকা সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী তাদের স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণকারী/নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করবে। নিয়ন্ত্রণকারী/নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনে অবহেলা তথা অসদচারণের কারণে তাদের বিরুদ্ধে চাকুরী বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করবে। কেন্দ্র নম্বর ৯৪ এর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, প্রভাষক উদয়ন ডিগ্রি কলেজকে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫(৩) অনুযায়ী চাকরি থেকে ২ মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো।

যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে। সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এক মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করবে মর্মে পত্র দেবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুসারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অসদাচরণের জন্য ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করার জন্য সচিব নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক পত্র দিতে হবে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সহকারী কমিশনারের নাম জেনে (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট) তদন্ত প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ করা হয় নাই) তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ পালনের জন্য ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে পত্র প্রদান করবে। রিটানিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজশাহী) বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য তার বিরুদ্ধে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এক মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত না করলে কমিশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৬ (২) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।।

সব কেন্দ্রের দায়িত্ব পালনকারী নির্বাচনী এজেন্টদের তালিকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কর্তৃক সিলকৃত ব্যাগে রয়েছে, যেহেতু নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ের ওপর আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই যেসব কেন্দ্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, সেসব কেন্দ্রের ব্যাগ খুলে দায়ী এজেন্টদের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, গাইবান্ধা এই তালিকা করবেন। দোষী নির্বাচনী এজেন্টদের পরবর্তী নির্বাচনে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। ভবিষ্যতে নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম করা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গাইবান্ধা-৫ আসনের পুনর্নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে।

আগামী সপ্তাহে পুনঃভোটের তারিখ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, পুনঃভোটের তারিখ আাগামী সপ্তাহে জানানো হবে। খুবই সংক্ষিপ্ত একটি সময় দেওয়া হবে। ভোটের একটি দিন দিয়ে পুনঃভোটের সময় জানানো হবে। তিনি জানান, কবে ভোট হবে ও কারা দায়িত্বে থাকবেন তা জানানো হবে। সব প্রার্থী আগের মতোই থাকবে। গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল অনিয়মে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমারকে আহ্বায়ক করে ইসির যুগ্ম সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস সদস্য ও যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরীকে সদস্য সচিব করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close