শেখ মো. ফুয়াদ, ময়মনসিংহ
উন্নয়নকাজে গতি, আধুনিক নগরী হচ্ছে ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ঘোষণা হওয়ার পর এই নগরীর উন্নয়নে নতুন উদ্যোগে বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের ভাবধারায় উন্নয়নের মাইল ফলকের রূপকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আধুনিক নগরীতে পরিণত হচ্ছে ময়মনসিংহ।
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণা করার পর প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ঘোষণা দেন। পূববর্তী সরকারের সময় এ উন্নয়নের বাধাগ্রস্ত হয়। এ বিএনপি-জামায়াত জোট এবং এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালীন এই পৌরসভার কোনো ধরনের উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে তৎকালীন পৌরসভার উন্নয়ন গতি পায়।
তারও আগে সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মরহুম মাহমুদ আল নূর তারেক পৌরসভায় থাকাকালীন পৌরসভার উন্নয়নের কার্যক্রম হাতে নেন। কিন্তু সে সময় বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকায় তিনি উন্নয়ন গতি ধারাকে সচল করতে পারেননি। পদে পদে বাধা দেওয়া হয়। তার দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি পৌর চেয়ারম্যান হলেও একই অবস্থা হয়। তার মৃত্যুর পর ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান বর্তমান নির্বাচিত মেয়র ইকরামুল হক টিটু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার পর পৌরসভার উন্নয়নে শক্ত হাতে হাল ধরেন। ইকরামুল হক টিটু প্রথমেই ময়মনসিংহের জলাবদ্ধতা নিরসনে এক মহাপরিকল্পনা হাতে নেন। তিনি শহরের অনিয়ন্ত্রিত ড্রেন ব্যবস্থাকে ভেঙে দেন। সেসব স্থানে তিনি বড় ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। যার মধ্যে ৫ ফুট প্রস্থ থেকে ৮ ফুট প্রস্থ পর্যন্ত এবং ৮ ফুট গভীরতায় অন্তত ৫ কিলোমিটার নতুন আধুনিক ড্রেন নির্মাণ করেন। এরপর ময়মনসিংহে বৃষ্টির পানির একটা বড় অংশ ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন অংশ দিয়ে নদীতে পতিত হতে পারে তার জন্য তিনি কয়েকটি সড়কে আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার পাসিং লাইন নির্মাণ করেন এবং সঙ্গে সুদীর্ঘ অন্তত ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মাকড়যানী খালেরও উন্নয়ন করেন। এ খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি নেমে যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী মেয়র ইকরামুল হক টিটু ময়মনসিংহের অন্যান্য উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজে হাত দেন। এই ধারায় তিনি সাহেব কোয়ার্টার পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং দর্শনাথীদের বসার ব্যবস্থা করেন। এই পার্কেই বৈশাখী মেলা হয়ে থাকে। তিনি শহরের প্রতিটি সড়ক দ্বীপে কারুকার্য মণ্ডিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ উন্নয়ন স্থাপনা নির্মাণ করেন। যানজট নিরসনে সড়ক প্রশস্ত করা হয় এবং কয়েকটি নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়।
নগরীতে প্রতিদিনই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। এমসিসি ওয়ার্ডভুক্ত এলাকাগুলোর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিকরণে অঞ্চল-১, অঞ্চল-২ ও অঞ্চল-৩ এ ভাগ করেছেন। বর্তমান নগর ভবন অপরিসর হওয়ায় সিটি মার্কেট এলাকায় ১৮-তলা ও ১২-তলাবিশিষ্ট ২টি আধুনিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে নগর ভবনকে আধুনিক করা হবে বলে জানা গেছে। জেলার টাউন হল অ্যাডভোকেট মাহমুদ আলন্তদর স্মৃতি মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে বঙ্গবন্ধু গ্যালারি স্থাপন করা হয়েছে। নতুন সড়ক নির্মাণ মেরামত ও ব্রিজ কালভার্ট ফুটওভার ব্রিজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ১৫৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে এমসিসি বা মসিক। মসিকের গণটিকা কার্যক্রম চলছে। শেখ রাসেল থিম পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে মসিকের। মানবিক উন্নয়ন তথা নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন, দুস্থ পরিবারে শীতবস্ত্র বিতরণ, শিশু বিদ্যালয়ে টিকাদান কর্মসূচি এবং গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন সেবা দান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তিনি কাঁচাবাজারের উন্নয়ন, পাবলিক টয়লেট ও সুপেয় পানীয় ব্যবস্থা করেন এবং প্রতিটি রাস্তায় সড়কবাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করেন। বস্তিবাসীদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য এমসিসি ও বৈদেশিক অর্থে প্রাথমিক স্কুল নির্মাণ করে দেওয়া হয়। তিনি বিভিন্ন মন্দির নির্মাণে সহায়তা করে যাচ্ছেন। শহরের বর্জ্য সারা দিন সংগ্রহের পর ব্রহ্মপুত্র নদের অপর পাড়ে একটি স্থানে রাখা হচ্ছে এবং পরিশোধন কাজ এখানেই চলে। এ স্থানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বর্জ্য পরিশোধন করা জন্য স্থায়ী পরিশোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। বর্তমান স্থানে ব্রিজ থেকে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালটি নদের অপর পাড়ে চায়না মোড়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অদূর ভবিষ্যতে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলে ভয়াবহ যানজট হ্রাস পাবে বলে বিভাগবাসী মনে করেন। এমসিসি বাইপাস এলাকায় বহুবিধ উন্নয়ন কার্যক্রম ও উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ নগরী, শহরতলী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা এখন সন্ধ্যার পর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় না। রাতের ময়মনসিংহ নগরীর সড়কে এখন আলো থাকে। অবশ্য নগরবাসী অভিযোগ করেন, এমসিসিভুক্ত এলাকায় বাড়িঘরের হোল্ডিং ট্যাক্স অত্যাধিক বাড়ানো হয়েছে যা অবিলম্বে কমানো উচিত। নগরবাসীদের অনেকেই বলেন, বর্তমান মেয়র ইকরামুল হক টিটুর ওপর তাদের আস্থা আছে। মেয়রের জন্য তারা সবসময় দোয়া করেন।
মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, জনগণের ওপর আস্থা রেখে আমি এমসিসিকে জনগণের স্বপ্নের এমসিসিতে পরিণত করব ইনশাআল্লাহ এবং জনগণের যেকোনো দুর্ভোগ ও সমস্যা নিরসনে কাজ করে যাব।
"