নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩০ নভেম্বর, ২০২২

লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক, কমেছে দুর্ভোগ

লঞ্চশ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান দুদিনের ধর্মঘট তুলে নেওয়ার পর সারা দেশে স্বাভাবিক হয়েছে লঞ্চ চলাচল। এর ফলে কমেছে যাত্রীদের দুর্ভোগ। তবে গত দুদিনের ধর্মঘটের কারণে যাত্রীদের চাপ পড়েছে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। গত সোমবার সন্ধ্যায় শ্রম ভবনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনের বৈঠক হয়। সেখানে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হবে বলে আশ্বাস দেন মন্ত্রী ও নৌযান মালিকরা। পরে কর্মবিরতি থেকে কাজে ফেরার কথা জানান নৌযান শ্রমিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুর রহমান।

মঙ্গলবার বিকেলে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চের পন্টুনে অপেক্ষা করছে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীরা। লঞ্চের কর্মচারীরা হাঁক-ডাক দিয়ে নিজ নিজ লঞ্চের যাত্রী ভিড়ানোর যাবতীয় চেষ্টা করছেন। গতকাল সকালে চাঁদপুরের উদ্দেশে বেশ কটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চগুলো সন্ধ্যার পর যাত্রার প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। যাত্রীদের সরব উপস্থিতি আর হকারদের হাঁক-ডাকে আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে সদরঘাট এলাকা। একই সঙ্গে যাত্রীদের আসা-যাওয়ার বিষয়টি দেখা যায়। লালকুঠির ঘাটে গিয়েও নিয়মিত চিত্র চোখে পড়েছে। এক ঘণ্টা পরপর লঞ্চ ছাড়ছে চাঁদপুরের উদ্দেশে। বরিশালগামী লঞ্চগুলোকেও ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করেতে দেখা গেছে। কেউ কেউ দুপুরে এসে দক্ষিণাঞ্চলের কোনো কোনো লঞ্চের টিকিট কেটে গেছেন বলেও জানা যায়।

বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, লঞ্চ মধ্যরাত থেকেই চলছে। নির্ধারিত সময়ে নিয়মিত চলাচল করা লঞ্চগুলো ঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। সেখানে নৌ-পুলিশদেরও সার্বক্ষণিক টহলে থাকতে দেখা গেছে।

ঘাটে অবস্থানরত এমভি হেদায়েতের সুকানি কিবার আলি বলেন, লঞ্চের ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর মঙ্গলবার লঞ্চ এলাকা তেমন একটা জমজমাট হয়ে ওঠেনি। কিন্তু সকাল থেকেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। ঘাটে যেমন যাত্রীরা আসতে শুরু করেছেন, তেমনি এই এলাকা জমজমাট হচ্ছে। আজকেই এই দৃশ্যের পরিবর্তন হয়েছে।

এই লঞ্চের কেরানি হোসেন মিয়া জানান, আমাদের কর্মবিররিতর কারণে গত দুদিন জনশূন্য ছিল ঘাট এলাকা। অনেক যাত্রীকে ফিরে যেতে দেখেছি। এসব দৃশ্য আমার কাছে খারাপ লেগেছে। তবে আজ জনসমাগম দেখে ভালো লাগছে। সরকার ও মালিকরা আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, আশা করছি, তারা তাদের দেওয়া কথা রাখবে।

ঘাটে অবস্থানরত এক নৌ-পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোরবেলা থেকেই যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকে এক ঘণ্টা পর পর লঞ্চ ছাড়ছে।

ঘাটে ঝালমুড়ি বিক্রেতা আফজাল বলেন, দুটি দিন এই ঘাটে মানুষের ধাক্কাধাক্কি নেই, যেন এখানে কোনো কাজই নেই। অনেকেই এসে আবার ফিরে গেছেন। বিক্রিতে ভাটা পড়ছিল। সকাল থেকে এখানকার পরিবেশ মনে হচ্ছে আগের দুদিন কিছুই হয়নি। বিক্রিও আগের মতো ভালো হচ্ছে।

লঞ্চের টিকিট কাটতে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাবীব আহসান বলেন, কিছুদিন ধরে বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। কিন্তু সময় সুযোগ পাচ্ছিলাম না। রবিবার যেই বাড়ি যাব ভাবলাম, তখন খবর লঞ্চ কর্মচারীরা ধর্মঘট ডেকেছেন। ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা শুনে টিকিট কাটতে চলে আসলাম। রাতে বাড়িতে রওনা দিতে পারব বলে আশা রাখছি।

বরিশালের আরেক যাত্রী তরিকুল ইসলাম বলেন, কর্মবিরতি প্রত্যাহার হয়েছে, এটি ভালো খবর। এতে যাত্রীদের অনেক ভোগান্তি হয়।

জানতে চাইলে লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক ভূঁইয়া বলেন, লঞ্চ চলছে, সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। আশা করছি আর কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তাদের দাবির সঙ্গে আমরাও একমত আছি। এ ছাড়া অন্য নদীবন্দরেও কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে বলে জানা গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close