মো. শাহ আলম, খুলনা

  ২৮ নভেম্বর, ২০২২

তৃণমূলে শক্ত অবস্থানে খুলনা বিএনপি

ধারাবাহিক কর্মসূচিতে জনসমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা * প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ * মান-অভিমানে নিষ্ক্রিয় মঞ্জুর সমর্থকরা

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তৃণমূলে শক্ত অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিএনপি। ধারাবাহিক কর্মসূচি ও দলকে শক্তিশালী করতে কমিটি গঠনে সক্রিয় রয়েছেন সিনিয়র নেতারা। একই সঙ্গে অঙ্গসংগঠনে যুবদলের থানা ও ওয়ার্ডপর্যায়ের কমিটি গঠন, মহিলা দলের কর্মিসভা, পেশাজীবীদের মতবিনিময়, ছাত্রদলের মশাল মিছিল বিক্ষোভ, শ্রমিক দলের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খুলনায় ২২ অক্টোবর বিভাগীয় গণসমাবেশের পর থেকেই তৃণমূলে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে বিএনপি। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বিধাবিভক্তি ও হামলা-মামলার পরও প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন।

জানা যায়, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর খুলনায় নগর বিএনপির প্রভাবশালী সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে সরিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। বাদ পড়েন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠুসহ সিনিয়র নেতারা। তৃণমূলে সৃষ্টি হয় দ্বিধাবিভক্তি। মান-অভিমানে এখনো মঞ্জু-মনি-মিঠুর সমর্থক নেতাকর্মীরা দলীয় কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। কিন্তু তার পরও রাজপথে চমক দেখাতে সক্ষম হয়েছেন বিএনপি মহানগর কমিটির নতুন আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা ও সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিনের কর্মী-সমর্থকরা। ২২ অক্টোবর বিভাগীয় গণসমাবেশের পর খুলনায় চারটি মামলায় কয়েক শ নেতাকর্মীকে আসামি করা হলেও দলের মনোবল চাঙা রয়েছে।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, সরকার বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-নিপীড়ন করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে হামলা-মামলা গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে উচ্চপর্যায়ের নেতারা পাশে থাকছেন। স্থানীয় পর্যায়ের নেতারাও হামলা-হামলায় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বলেন, হামলা-মামলা দিয়ে ভয় দেখিয়ে জনতার আন্দোলনকে দমন করা যায় না। ধারাবাহিক কর্মসূচিতে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে খুলনা বিএনপি।

মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, রাজপথে বিএনপি এখন অনেক বেশি সংগঠিত ও শক্তিশালী। দলকে আরো সক্রিয় করতে অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আহ্বানে ২২ অক্টোবর গণসমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন সাবেক মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও তার কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু মিছিল নিয়ে সমাবেশে উপস্থিত হলেও মঞ্জুকে মঞ্চে নেওয়া হয়নি। এতে তার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসন না হলে রাজনীতি থেকেই বিদায় নেওয়ার কথা ভাবছেন মঞ্জু।

তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে মহাসচিবের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছি, আশা করছি বিষয়টি তদন্ত হবে। দলকে তৃণমূলে শক্তিশালী করতে সঠিক নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হবে। এর জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করব কিন্তু পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে যাবেন না বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। উল্লেখ্য, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর তাকে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত খুলনা মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক কেসিসির সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মনির নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙে দিয়ে আংশিক আহ্বায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে চলা খুলনা বিএনপিতে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর একক নেতৃত্ব হাত ছাড়া হয়ে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close