নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ নভেম্বর, ২০২২

আখের চিনির চাহিদা বেশি, মজুদ কম

মজুদ কম থাকায় ১৬ দিন ধরে চাহিদা অনুযায়ী বাজারে আখের চিনি দিতে পারছে না বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। বর্তমানে খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

নতুন চিনি উৎপাদন শুরু হলেই আবার বিক্রি শুরু হবে। তবে বাজারে প্রচলিত সাদা চিনি বা রিফাইনারি চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদিত নতুন আখের চিনি বা লাল চিনি বাজারে এলেই দাম সমন্বয় করা হবে বলে প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে।

বিএসএফআইসি সূত্রে জানা গেছে, আখের চিনি বা লাল চিনির মজুদ শেষের দিকে। পাশাপাশি উৎপাদন কমে যাওয়ায় সাধারণ গ্রাহকসহ বিভিন্ন খাতে চাহিদা অনুসারে চিনি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। অত্যাবশ্যকীয় খাতে (বিভিন্ন বাহিনী) বছরে প্রায় ৩২ হাজার টন চিনি সরবরাহের চাহিদা থাকে। সেখানে ছয় মাস ধরে চিনি দেওয়া হচ্ছে না। ডিলাররাও চাহিদা অনুসারে চিনি পাচ্ছেন না। আর এখন সাধারণ গ্রাহকদের জন্যও সাময়িকভাবে চিনি বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

গ্রাহকদের সাশ্রয়ী মূল্যে চিনি দিতে রাজধানীর মতিঝিলে বিএসএফআইসি ভবনের নিচতলায় নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রে চিনি বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। এখান থেকে মোড়কজাত প্রতি কেজি ৯২ টাকা দরে ২ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত চিনি কিনতে পারেন গ্রাহকরা। খোলাবাজারে এই চিনিই ১২০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, আমাদের মজুদ কম থাকায় বাজারে এখন আখের চিনি বা লাল চিনি সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রয়েছে। গত ২৫ নভেম্বর থেকে নতুন করে নাটোরের একটি মিলে আখ মাড়াই শুরু হয়েছে। আমাদের ৯টি চিনি মিল রয়েছে। সেগুলোও পর্যায়ক্রমে উৎপাদন শুরু করবে। ডিসেম্বরের মধ্যে সবকটি মিল উৎপাদন শুরু করবে।

মো. আরিফুর রহমান বলেন, আশা করছি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বাজারে নতুন চিনি আসতে শুরু করবে। এখন অত্যাবশ্যকীয় ছাড়া আমাদের হাতে চিনি নেই। এই বছর আমাদের চিনির চাহিদা বেশি ছিল। কিন্তু আমাদের সক্ষমতারও একটি বিষয় রয়েছে। মূলত আখের ওপর নির্ভর করে উৎপাদন কত হবে। চলতি বছর আমাদের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে আগামী বছর আমরা ৬০ হাজার টন চিনি উৎপাদন করতে পারব বলে আশা করছি।

নতুন চিনির দাম সমন্বয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, আসলে আমরা যদি চিনির দাম যদি ১৫০ টাকা কেজিও করি, তাহলেও মানুষ কিনবে। কারণ এটি অনেক ভালো চিনি। আমরা সরকারের নির্দেশের বাইরে কিছু করি না। গত বছর সরকার দাম বাড়ানোর পর আমরা দাম সমন্বয় করেছি। এই বছর দেখছি চিনির দাম বেড়ে গেছে। বেসরকারি পর্যায়ে ১০৮ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে।

মো. আরিফুর রহমান আরো বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত আমাদের কিছু বলেনি। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দেখি, তারা যদি ১০৮ টাকা কেজিকে ঠিক মনে করে তাহলে আমরাও ১০৮ টাকার কাছাকাছি করব। আমরা ৯০ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করছি। বাজারে যদি নিম্নমানের চিনি ১০৮ টাকায় বিক্রি হয় তাহলে কেন আমরা ভালো চিনি ৯০/৯২ টাকায় বিক্রি করব? চিনির দাম অবশ্যই সমন্বয় করা হবে।

উৎপাদন ও চাহিদার প্রসঙ্গ টেনে বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে মোট চিনির চাহিদা ১৮ লাখ টন। এর মধ্যে ৫০ হাজার টন চিনি আমরা উৎপাদন করি। আমাদের চিনি মূলত সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে দিই। আমরা চেষ্টা করছি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য। কিন্তু চাইলেই বাড়ানো যাবে না। কারণ আখের উৎপাদন না বাড়লে এটি সম্ভব না। বর্তমানে আমাদের হাতে দুই-তিন হাজার টন চিনি রয়েছে। যা অত্যাবশ্যকীয় খাতে দেওয়া হবে। কিছু সুপারশপে পাওয়া যাবে। তবে খুচরা দোকানে এখন পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা ব্যাংক লোন নিয়ে চিনি উৎপাদন করছি। আমাদের কৃষকরা সময়মতো কৃষি লোন পাচ্ছেন না। আমরা লোকসান দিয়ে উৎপাদন করছি। আমরা উৎপাদন বাড়াতে পারলে হয়তো লোকসান কম হবে।

গত ২৫ নভেম্বর নাটোরে ২০২২-২৩ মৌসুমের আখ মাড়াই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ুন। তখন তিনি বলেন, চিনি শিল্পকে নতুন করে সাজানোর জন্য জোর দিয়েছে সরকার। এই লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘হ্যালো চাষি’ অ্যাপে সংরক্ষিত ডাটাবেজে বিদ্যমান মোবাইলে নম্বরে সরাসরি কল করে আখচাষিদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যা জানা এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আখের ফলন বাড়াতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘বন্ধু সেবা’ অ্যাপের ডাটাবেজে থাকা ৬৫ হাজারের বেশি আখচাষির নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে ফসলের পরিচর্যার জন্য করণীয় এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।

চাষিদের আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে আখের দাম বাড়িয়ে মিল গেটে প্রতি কুইন্টাল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং বহিঃকেন্দ্রে ৩৪৩ থেকে ৪৪০ টাকা করা হয়েছে। আখের দাম বাড়ানোর বিষয়টি ভবিষ্যতেও পর্যায়ক্রমে পুনর্নির্ধারণ করা হবে বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা জানান, বিএসএফআইসির উৎপাদিত চিনির প্রায় ৬০ শতাংশ দিতে হয় অত্যাবশ্যকীয় খাত হিসেবে বিবেচিত সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। অবশিষ্ট চিনির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মোড়কজাত করে স্বপ্ন, আগোরাসহ বিভিন্ন সুপারশপগুলোতে সরাসরি বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি নির্দিষ্ট পরিমাণ চিনি প্যাকেটজাত করে বিএসএফআইসি ভবনের নিচতলায় নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া অনুমোদিত ডিলাররা বিএসএফআইসির কাছ থেকে চিনি কিনে বাজারজাত করেন। একজন ডিলার ৮৫ টাকা কেজি দরে বছরে তিন-চারবার চিনি নিতে পারেন। একজন ডিলারের কাছে প্রতি বারে ২৫০ কেজি করে চিনি বিক্রি করা হয়।

বিএসএফআইসি সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে দেশে আখমাড়াই ও চিনি উৎপাদনের পরিমাণ কমেছে। এজন্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে গ্রাহক পর্যায়ে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫০ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চিনি উৎপাদিত হয়েছে ২৪ হাজার ৫০৯ টন। এর আগের অর্থবছরে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার টন। এর বিপরীতে সেবার চিনি উৎপাদিত হয় প্রায় ৪৮ হাজার ১৩৪ টন। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে চিনির উৎপাদন হয় ৮২ হাজার ১৪০ টন। অর্থাৎ দেশে প্রতি বছরই চিনি উৎপাদন কমছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close