নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ নভেম্বর, ২০২২

সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দীর্ঘায়িত বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশকে যাতে কখনোই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে না হয় সেজন্য জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি আমার কথা নয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলা হচ্ছে যে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। তাই যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এবং সেভাবে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।’

রবিবার (২৭ নভেম্বর) নিজ কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক সচিব সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভিক্ষ দেশকে কখনোই যেন ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য এখন থেকেই আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বেশ কটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী হওয়া, অগ্রাধিকারভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারণ, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং প্রতি ইঞ্চি পতিত জমি চাষের অধীনে নিয়ে আসার জন্য জনগণকে সচেতন করা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি যখন করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিপর্যস্ত, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি করেছে। একটি বা দুটি দেশ এ সংকটের সুবিধা পাচ্ছে এবং উন্নত দেশসহ বাকি দেশগুলো কষ্টে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলোও গুরুতর সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, যার জন্য তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রিজার্ভ অর্থ হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বহু গুণ বেড়েছে। আমাদের দেশ এর আওতার বাইরে নয় এবং এটি আমাদের দেশেও আঘাত করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা রেমিট্যান্স পাঠায় তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ ও প্রণোদনা আমরা দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের ভালো রিজার্ভ রয়েছে। তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সেখানে আমাদের ৫-৬ মাসের রিজার্ভ আছে। তার পরও এখন যা অবস্থা তাতে আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে, আরেকটু সচেতন হতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখনই যে বিপদে পড়েছি তা কিন্তু না। তবে আমার কথাটা হচ্ছে আমার আগাম ব্যবস্থাটা নিতে হবে; যেন ভবিষ্যতে দেশ কোনো বিপদে না পড়ে, আমাদের সেই সতর্কতাটা একান্তভাবে দরকার এবং সেই সতর্ক বার্তাটাই কিন্তু আমরা দিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। এটার ওপরও আমাদের গুরুত্ব দেওয়া একান্তভাবে দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে; যাতে যে কেউ যেকোনো তথ্য ওখান থেকে জানতে পারে, নিতে পারে। সেখানে আমাদের সাফল্যগুলো তুলে ধরতে হবে। প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে যদি এই সাফল্যগুলো প্রতিনিয়ত আপডেট করে সেগুলো তুলে ধরেন তাহলে মানুষ জানতে পারবে যে কী কী কাজ আপনারা করলেন।

ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়াসহ মানুষের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও সভায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের অনেক জিনিস এখনো কিনতে হয়। যেসব জিনিস বাইরে থেকে কিনতে হয়; এর মধ্যে যেসব জিনিস আমরা দেশে উৎপাদন করতে পারি সেদিকে এখন দৃষ্টি দিতে হবে। যেন দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে পারি।

বিদ্যুৎ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য জ্বালানি তেলের দাম বা গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কিছুটা সমস্যা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আগামীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে এলে সংকট অনেকাংশে কেটে যাওয়ার আভাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে আমাদের গ্রিড লাইন নির্মাণকাজ আরো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

শেখ হাসিনা সবাইকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close