জাপানের কাছে প্রথম ম্যাচে পরাজিত হয়ে পুরো জার্মানি শিবিরের চেহারাই পাল্টে গেছে। বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় শুরু হওয়া ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে জয় ভিন্ন অন্য কোনো পথ খোলা নেই। এদিকে কাতার বিশ্বকাপে আল থুমামা স্টেডিয়ামে গ্রুপ-এফে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মুখোমুখি হচ্ছে বেলজিয়াম ও মরক্কো। প্রথম ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে বেলজিয়াম নক আউট পর্বের পথে অনেকটাই এগিয় আছে। গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকে রুখে দিয়ে এক পয়েন্ট অর্জন করা মরক্কোও আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামবে। অপরদিকে গ্রুপ-ই’র ফেভারিট জার্মানিকে প্রথম ম্যাচে ২-১ গোলে হারিয়ে চমক দেখানো জাপান এখন বিধ্বস্ত কোস্টারিকাকে পরাজিত করে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করতে চায়। আজ দিনের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় আল-রাইয়ানের আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়ামে গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে এই দুই দল মুখোমুখি হবে।

১৯৮৮ সালের পর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে এখনো পর্যন্ত স্পেনকে পরাস্ত করতে পারেনি জার্মানি। কিন্তু সব পরিসংখ্যানের ঊর্ধ্বে উঠে জার্মানির এখন একটাই স্বপ্ন, জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া। এশিয়ান পরাশক্তি জাপানের কাছে প্রথম ম্যাচে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয় জার্মানি। মাঠের লড়াইয়ের আগে মাঠের বাইরের ইস্যু নিয়ে বেশি সরব ছিল জার্মানরা। মানবাধিকারের প্রতি নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিতে ম্যাচের আগে আনুষ্ঠানিক ফটো সেশনে ১১ খেলোয়াড়ই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ছবি তুলেছিলেন। এর মাধ্যমে তারা ফিফার মুখ বন্ধ করার একটি প্রতীকী ছবি ফুটিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু জাপানের কাছে পরাজিত হওয়ার পর হান্সি ফ্লিকের দলের এমনিতেই মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ কেউ তো বলেই বসেছে ফুটবলের প্রতি মনোযোগী হওয়ার সময় এসেছে জার্মানির। বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় গ্রুপ পর্বের বিদায় হয়তোবা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুব একটা সুখকর বার্তা হবে না।

শুক্রবার চেলসি স্ট্রাইকার কেই হাভার্টজ বলেছেন খেলোয়াড়রা তাদের আত্মবিশ্বাস ধরে রেখেছে। স্পেনের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তারা অবগত। বিশেষ করে স্পেন যেখানে ৭-০ গোলের বড় জয় দিয়ে কোস্টারিকাকে বিধ্বস্ত করে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই চ্যালেঞ্জটা খুবই কঠিন। ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে হাভার্টজ বলেছেন, ‘সবাই আমাদের পরিকল্পনা জানে এবং সেটা কীভাবে কাজে লাগাতে হবে সেটা নিয়েই আমরা কাজ করেছি। অবশ্যই আমাদের শতভাগ মনোযোগ এখন ফুটবলকে ঘিরে, অন্য কিছু নয়।’

জাপানের কাছে পরাজয়ে এরই মধ্যে চেইন সুপারমার্কেট রেউইয়ে জার্মান দল থেকে তাদের স্পন্সরশিপ উঠিয়ে নিয়েছে। ৩০ বছরের ইতিহাসে এ ম্যাচটি সবচেয়ে কম টিভি রেটিং পেয়েছে। হাভার্টজ বিষয়গুলো স্বীকার করে নিয়ে বলছেন, ‘আমরা জানি এ মুহূর্তে সবাই আমাদের সঙ্গে নেই। টিম মিটিংয়েও কোচ আমাদের সে বার্তাটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।’ এবারের বিশ্বকাপে দুই ইউরোপিয়ান হেভিওয়েট এ প্রথম কোনো ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। ২০০৬ সালের পর এ প্রথমবারের মতো স্পেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে এত বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। পুরো ম্যাচে ৮১.৯ শতাংশ বলের পজিশন স্পেন ধরে রেখেছিল ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের পর যা সর্বোচ্চ জার্মানির বিপক্ষে ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই এখন লা রোজাদের মূল লক্ষ্য। সর্বশেষ ২০২০ সালের নভেম্বরে উয়েফা নেশন্স কাপে মুখোমুখি ম্যাচে স্পেন ৬-০ গোলে জয়ী হয়েছিল। ২০১০ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক আসরে স্পেন নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের পর চার বছর আগে রাশিয়ায় শেষ ১৬ থেকে তাদের বিদায় নিতে হয়। তবে জার্মানির বিপক্ষে আগামীকাল জয়ী হতে পারলে আবারও তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরে আসবে। জাপানের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচের আগেই তাদের নক আউট পর্ব নিশ্চিত হবে।

ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ১০ নম্বর স্থানে থাকা জার্মানি সব ধরনের প্রতিযোগিতায় শেষ ১০টি ম্যাচের মাত্র দুটিতে জয়ী হয়েছে। কোচ হান্সি ফ্লিক স্বীকার করেছেন স্পেনের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে তার দল অবশ্যই চাপে আছে। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এখন একটাই লক্ষ্য অন্তত গ্রুপ পর্ব থেকে যেন টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিদায় না ঘটে। ১৯ বছরের মধ্যে শেষ সাতবারের মোকাবিলায় জার্মানি মাত্র একবার স্পেনকে হারিয়েছে। ২০১৪ সালের নভেম্বরে প্রীতি ম্যাচটিতে ১-০ গোলে জয়ী হয়েছিল জার্মানি।

কাল দিনের প্রথম ম্যাচে কোস্টারিকার সঙ্গে যদি জাপান হার এড়াতে পারে তবে নকআউট পর্বে যেতে জার্মানিকে অবশ্যই জয়ী হতে হবে। রোববারের ম্যাচের জন্য অপরিবর্তিত দল ঘোষণা করেছেন স্প্যানিশ কোচ লুইস এনরিকে। আক্রমণভাগে তোরেস, আসেনসিও ও ওলমো নিজেদের জায়গা ধরে রেখেছেন। ১৮ বছর বয়সি গাভির সঙ্গে মধ্য মাঠে আরো থাকবেন বার্সেলোনার দুই মিডফিল্ডার পেড্রি ও সার্জিও বাসুকয়েটস। এদিকে হাঁটুর ইনজুরির কারণে প্রথম ম্যাচে খেলতে না পারা বায়ার্ন মিউনিখ উইঙ্গার লেরয় সানেকে নিয়ে এখনো শঙ্কায় রয়েছে জার্মানি।

এদিকে এশিয়ান পরাশক্তি জাপান জায়ান্ট জার্মানিকে হারিয়ে যেখানে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে সেখানে স্পেনের কাছে ৭-০ গোলে পরাজয় স্বীকার করে আহত সিংহের মতো ফুঁসছে কোস্টারিকানরা। বড় পরাজয়ের লজ্জা কাটিয়ে উঠতে জাপানের মতো দলকে বেছে নেওয়া ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো উপায় নেই।

"