নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ নভেম্বর, ২০২২

কিডনি ফাউন্ডেশনের সম্মেলনে বক্তারা

চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান কিডনি রোগীদের ৭৫%

* ব্যয়বহুল হওয়ায় ডায়ালাইসিস বন্ধ করেন অনেকে

দেশে কিডনি রোগী প্রায় ২ কোটি। তাদের মধ্যে প্রতি বছর ৪০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয়। এই রোগীদের ৭৫ শতাংশ বিভিন্ন সময়ে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনজনিত চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় বেশিরভাগ রোগী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে বছরে আরো ২০ হাজার রোগী মারা যান। শনিবার (২৬ নভেম্বর) কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ আয়োজিত দুই দিনের বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের প্রথম দিনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

রাজধানীর মিরপুরে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে ১৮তম বার্ষিক সভা ও বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিডনি রোগ ও প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, যথাসময়ে কিডনি রোগ শনাক্তের জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) করা জরুরি। তারা মনে করেন, মরণোত্তর অঙ্গদান বা ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের বিষয়ে লোকজনকে আরো উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মৃত ব্যক্তির কিডনি দান করা হলে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

একজন ব্যক্তিকে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করার পর তার কিডনি, হৃৎপি-, ফুসফুস, যকৃৎ বা লিভার, অগ্ন্যাশয় (প্যানক্রিয়াস) ও খাদ্যনালি- এই অঙ্গগুলো অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়। আর কার্ডিয়াক ডেথ বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির চোখের কর্নিয়া, অস্থি, অস্থিমজ্জা ও চর্ম প্রতিস্থাপন করা যায়। এসব অঙ্গ প্রতিস্থাপনকে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট বলা হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ও ক্যাডাভেরিক জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মানবদেহে অঙ্গপ্রতঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন ২০১৮ হয়েছে। দেশে রোগীর জীবিত আত্মীয়ের দান করা কিডনি প্রতিস্থাপন করা হলেও এখনো ব্রেন ডেথ ঘোষিত ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়নি। এটা খুব শিগগিরই শুরু করতে চায় বিএসএমএমইউ। এতে অনেক মানুষের জীবন বাঁচবে। এখন দেশে অনেক উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করার আর প্রয়োজন নেই।

কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হারুন আর রশিদ বলেন, কিডনি রোগের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। আর্থিক সংকটে বেশিরভাগ কিডনি রোগী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। মৃত ব্যক্তির অঙ্গদানের বিষয়ে অনেক মানুষের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সেসব দূর করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মৃত্যুর পর অঙ্গদানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ব্রেন ডেথ ঘোষিত ব্যক্তির কিডনি দানের বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারে ধর্মীয় নেতাদের যুক্ত করতে হবে।

কিডনি জটিলতা এড়াতে যথাসময়ে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তের ওপর জোর দিয়েছেন বিএসএমএমইউয়ের সহ-উপাচার্য এ কে এম মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, নিয়মিত স্ক্রিনিং না করানোর কারণে দেশে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ যথাসময়ে শনাক্ত হয় না। এ কারণে কিডনি সমস্যাও যথাসময়ে শনাক্ত না হয়ে কিডনি রোগী বাড়ছে।

চিকিৎসাসেবার মান বাড়াতে সহকর্মীদের মধ্যে শ্রদ্ধার সম্পর্ক থাকার ওপর জোর দেন যুক্তরাজ্যের রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের চিকিৎসক মুহাম্মদ মাগদি ইয়াকুব। সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, একে অপরের কাজকে মূল্যায়ন করতে হবে। চিকিৎসাসেবায় শুধু চিকিৎসকরাই যুক্ত থাকেন না, নার্স প্যারামেডিক থেকে শুরু করে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরও ভূমিকা রয়েছে।

সূচনা বক্তব্যে কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাসচিব রুহুল আমিন রুবেল বলেন, দেশে প্রতি বছর ৪০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয়। সময়মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করায় অনেকে একদম শেষ সময়ে এসে জানতে পারেন যে তাদের কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে।

সম্মেলনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক শামীম আহমেদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close