নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ নভেম্বর, ২০২২

জীবাণুনাশকের কার্যকারিতা কমছে যথেচ্ছ ব্যবহারে

দেশে যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক বা জীবাণুনাশক ওষুধের কার্যকারিতা হারাচ্ছে। ফলে এখন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ভয়াবহ সমস্যার মুখে পড়েছে মানবজাতি। এ অবস্থায় গবেষকরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়লে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকবে না।

২০১৭-২০২২ সালের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের অকার্যকারিতা (এএমআর) সার্ভিলেন্সের তথ্য বলছে, এজিথ্রোমাইসিন ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সর্বাধিক প্রাধিকারপ্রাপ্ত বাকি সব (সেফটাজিডিম, সেফিক্সিম, সেফেপাইম, সেফট্রায়াক্সোন, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন) জীবাণুর বিরুদ্ধে ক্রমান্বয়ে বেশি হারে কার্যকারিতা হারাচ্ছে। কার্বাপেনেমের অকার্যকারিতা ২০১৭ সালে ২০ শতাংশ ছিল, যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে হয়েছে ৬০ শতাংশ।

ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ওষুধের অকার্যকারিতা বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে ওষুধ প্রতিরোধী সংক্রমণে বছরে প্রাণ হারাবেন প্রায় এক কোটি মানুষ, যাদের বেশির ভাগই হবেন এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের। এসবের মূলে রয়েছে মানুষ ও গবাদিপশুর জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক প্রয়োগ এবং সঠিক নিয়মে ওষুধ গ্রহণ না করা। বিপদকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক-বিরোধী জিনের ছড়িয়ে পড়া। বিশেষত, ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে বিভিন্ন বিটা-ল্যাকটামেস জিনের উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবাণু ধ্বংস করতে নির্দিষ্ট মাত্রায় এবং নির্দিষ্ট সময় ধরে নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হয়। রোগী যদি তা না করে, তাহলে ওই জীবাণু ওই অ্যান্টিবায়োটিকে মরে না, জীবাণু ওই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে টিকে থাকার ক্ষমতা অর্জন করে। অ্যান্টিবায়োটিক তখন অকার্যকর হয়ে পড়ে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর বলছে, ৯টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও কার্যকারিতার প্রবণতার ওপর ২০১৭ সাল থেকে নজরদারি করছে। এসব হাসপাতাল থেকে তারা নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করে।

আইইডিসিআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন বলেন, ‘ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বেশ কিছু রোগের জীবাণুর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ঠিকমতো কাজ করছে না। কাজ না করার প্রবণতা আগের চেয়ে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। ৬ হাজার ৮৬৮ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ৮ শতাংশ জীবাণুর ক্ষেত্রে সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার মতো ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’

কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার প্রবণতা হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর ক্ষেত্রে বেশি দেখা গেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক জাকির বলেন, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে একই সমস্যা আছে। তুলনামূলকভাবে পরিমাণে কম হলেও সার্জারি ও মেডিসিন বিভাগে এ সমস্যা দেখা যাচ্ছে। শনাক্ত জীবাণুগুলোর মধ্যে ‘অ্যাসিনিটোব্যাক্টর’ নামক যে জীবাণুটি পাওয়া গেছে, তার বিরুদ্ধে মোটামুটি সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকই অকার্যকর এবং আইসিইউ হতে সংগৃহীত নমুনাতে এ জীবাণুর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close