মো. আশিকুর রহমান শুভ, ঢাবি

  ২৬ নভেম্বর, ২০২২

৮ ও ৯ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলন

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদের জন্য ঢাবিতে আলোচনায় যারা

কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটিতে জায়গা পেতে দৌড়ঝাঁপ * ঢাবির মধুর ক্যানটিন টিএসসি সরগরম

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে রাজনৈতিক অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। তখন ছাত্রলীগের যারা রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই সংগঠনের আসন্ন ৩০তম সম্মেলনে শীর্ষ পদের জন্য আলোচিত। সে সময় যারা কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের মধ্যেও অনেকে এখন সংগঠনের শীর্ষ পদ পাওয়ার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে।

এদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির শীর্ষ চারটি পদে জায়গা করে নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সংগঠনটির পদণ্ডপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মধুর ক্যানটিন, সন্ধ্যায় টিএসসি এখন সরগরম। পদণ্ডপ্রত্যাশীরা এখন ধানমন্ডি আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে, ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের চার নেতার বাসায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের নাম পৌঁছানোর জন্য চলছে চেষ্টা-তদবির।

এসব পদণ্ডপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মধ্যে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন, এখন তারাই শীর্ষ পদ পেতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনের আগে-পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সারা দেশে বিএনপির হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নি-সন্ত্রাসের ফলে দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত ককটেল ও পেট্রল বোমার শব্দে কেঁপে উঠত। তখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সতর্ক অবস্থান করলেও দেখা দিয়েছিল ছাত্রলীগের কর্মী সংকট। টিএসসি ও তার আশপাশ এলাকায় তখন ছাত্রদলের অবস্থানও ছিল শক্ত।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি করতে গেলে দেখা দেয় কর্মী সংকট। ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কর্মীর অভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি তৎকালীন হল শাখা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের মধ্যে তখন মাত্র ছয়টি হল ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। সেই কমিটিতে পদ নিতে চাননি অনেকেই। আবার অনেকেই নির্বাচনের আগে হল ছেড়ে বাড়ি চলে যান। কারণ, তাদের ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সেদিন বাড়ি চলে যাওয়া সেসব নেতাকর্মীরাই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ পাওয়ার জন্য।

তৎকালীন হল নেতারা জানান, নির্বাচনের আগে ১৮টি হলের মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, কবি জসীম উদদীন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, অমর একুশে হল, জগ্ননাথ হল ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছিল। এসব কমিটিতে অভিযোগ রয়েছে, কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে যে নির্দিষ্টসংখ্যক কর্মী দরকার তা না পাওয়ায় অনেকের অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে ওই কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মেয়েদের পাঁচটি হলের মধ্যে একটিতেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।

তৎকালীন মাস্টারদা সূর্য সেন হল ছাত্রলীগ সভাপতি মোবারক হোসেন জানান, ওই সময়ে অগ্নি-সন্ত্রাসের ভয়ে অধিকাংশ ছাত্র ও নেতাকর্মী হলের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। অনেকেই আবার বাড়িতেও চলে গিয়েছিলেন। ছাত্রলীগের একটা বড় অংশ ক্যাম্পাসের বাইরে চলে গিয়েছিল, যার কারণে ছাত্রলীগের আদর্শ ধারণ করেন- এমন পর্যাপ্ত কর্মী না পাওয়ায় ৫ জানুয়ারির আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরো বলেন, পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসার পর ৮১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিলাম। সেই সময় হলগুলোতে কমিটি করার জন্য জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেন তৎকালীন হল নেতারা। তখন গুটিকয়েক ছাত্রলীগ কর্মী স্বেচ্ছায় জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৬টি, জাতিক জনক বঙ্গবন্ধু হলে ১৩টি, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ২১টি, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ২৫-৩০টি, সূর্যসেন হলে ৭-৮টি, জসিম উদদীন হলে ৩৫-৪০টি এবং অমর একুশে হলে ১৫-১৮টি জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছিল বলে জানান তৎকালীন হল নেতারা।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০১৩ সালে ছয়টি হলে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব হয়েছিল। ওই সময় যারা কমিটিতে পদ পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই এবার ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের মাধ্যমে শীর্ষ পদ পাওয়ার ব্যাপারে আলোচনায় আছেন।

কবি জসীম উদদীন থেকে : ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন (ওই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক), প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু (ওই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক), এদিকে সহসভাপতি রাকিব হোসেন ২০১০-এর এনায়েত-জীবন কমিটিতে ছিলেন কিন্তু ২০১৩-এর কমিটিতে ছিলেন না এবং সহসভাপতি মাজহার ইসলাম শামীমের হলে কোনো পোস্ট ছিল না; সরাসরি কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সম্পাদক হয়।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে : ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল (ওই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক), আইন সম্পাদক ফুয়াদ হাসান শাহাদাত (ওই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস (ওই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক), সহসভাপতি রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য (ওই কমিটিতে আপ্যায়ন সম্পাদক)।

বঙ্গবন্ধু হল থেকে : ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রাকিবুল হাসান রাকিব (ওই কমিটিতে সহসভাপতি), গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ হিল বারী (ওই কমিটিতে গণশিক্ষা সম্পাদক), গ্রন্থনা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আবু হাসনাত সরদার জমেল (ওই কমিটিতে গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক), সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন (ওই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক)।

জিয়া হল ছাত্রলীগের ৩১ সদস্যের কমিটি থেকে : ছাত্রলীগে বর্তমান কমিটির উপ-সম্পাদক হাসানুর রহমান হাসু (ওই কমিটিতে উপ-সম্পাদক)।

স্যার এফ রহমান হল থেকে : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন (ওই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক), সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান (ওই কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), রনি মোহাম্মদ (ওই কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), কর্মসংস্থান-বিষয়ক উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয় (ওই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক)।

মুহসীন হল থেকে : ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান (ওই কমিটিতে সহসভাপতি)।

শহীদুল্লাহ্ হল থেকে : ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির রাশেদ ফেরদৌস আকাশ (ওই কমিটিতে সম্পাদক), উপ-বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক মো. ইরফানুল হাই সৌরভ (ওই কমিটিতে উপ-সম্পাদক), উপ-তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, রাশেদ শাহরিয়ার উদয় (ওই কমিটিতে সহ-সম্পাদক)।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close