নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ নভেম্বর, ২০২২

ডলারের মতো বাড়ছে টাকার দাম

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সঞ্চয় কমিয়ে দিয়েছেন মানুষ। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে জীবন চালানোর খরচ সামাল দিচ্ছেন। ব্যাংকের ঋণ আদায়ও তলানিতে নেমেছে। ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলো পড়েছে বিপাকে। ফলে সব ব্যাংক চাইলেও আমানতে বেশি সুদ দিতে পারছে না। এ অবস্থায় মার্কিন ডলারের মতো টাকার দামও ধীরে ধীরে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতি হয়েছে মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকটের জন্য। কারণ, ডলার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক তুলে নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সুদহার বাড়ানো জরুরি হলেও এতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সম্মতি মিলছে না। তাই কোনো লিখিত নির্দেশনা দেওয়া সম্ভব নয়। ডলার কিনতে ব্যাংকগুলোর অনেক টাকা প্রয়োজন হচ্ছে। এরই মধ্যে ডলার কিনতে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে।

জ্যৈষ্ঠ ব্যাংকার ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘ডলার কিনতে ব্যাংকগুলোর অনেক টাকা প্রয়োজন হচ্ছে। এরই মধ্যে ডলার কিনতে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। আবার জীবন চালানোর খরচ বেড়ে গেছে। ফলে মানুষ সঞ্চয় কমিয়ে দিয়েছেন, অনেকে সঞ্চয় ভেঙে ফেলছেন। এ জন্য আমানতের সুদহার বাড়াতে হচ্ছে অনেক ব্যাংককে। তবে ব্যাংক খাতে কোনো তারল্য সংকট নেই।’

ব্যাংক খাতে গত সেপ্টেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ফলে যে আমানত জমা হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ঋণ যাচ্ছে। আবার ডলার কেনা, রেমিট্যান্স কেনা, রপ্তানি বিল নগদায়নে বাড়তি টাকা বের হচ্ছে ব্যাংকগুলো থেকে। আবার অনেকে সঞ্চয় ভেঙে চলছেন। নতুন করে সঞ্চয়ও কমে এসেছে। ব্যবসায় মন্দার কথা বলে ব্যবসায়ীরাও ঋণ পরিশোধ কমিয়ে এনেছেন। ফলে খেলাপি ঋণও বাড়ছে।

গত অর্থবছর (২০২১-২২) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সব মিলিয়ে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ধারা অব্যাহত আছে চলতি অর্থবছরেও। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৫৫৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে গত ১৫ মাসে রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ১ হাজার ৩১৯ কোটি ডলার বাজারে ছেড়েছে। গড়ে ৯৫ টাকা হিসেবে, যার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে।

গত বছরের জুনে দেশে ছাপানো টাকা বা রিজার্ভ মানির পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭১ কোটি টাকা, যা গত জুনে কমে হয় ৩ লাখ ৪৭ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। আর গত সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ মানি বেড়ে হয় ৩ লাখ ৪০ হাজার ৮০ হাজার কোটি টাকা।

সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ মানির মধ্যে ব্যাংকের ভল্ট ও মানুষের হাতে ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে, যা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যা ছিল ২ লাখ ৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এখন আগের চেয়ে মানুষ বেশি নগদ টাকা উত্তোলন করছেন। যে দেশের নগদ টাকা ও ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ যত কম, সেই দেশের অর্থনীতির গতি তত বাড়ে। কারণ, ব্যাংকের বাইরে টাকা থাকলে তা অর্থনীতিতে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখে না।

টাকার দামও বাড়ছে : টাকার চাহিদা বাড়ায় অনেক ব্যাংক আমানতে সুদ বাড়িয়েছে। যে ব্যাংক যত দুর্বল ও বেশি চাহিদা, তাদের সুদও তত বেশি। আবার এসব ব্যাংক এ সময়ে আমানত ধরতে নিয়ে এসেছে বিশেষ আয়োজন। কর্মকর্তাদের আমানত আনার জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আবার ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত আনছে তারা।

এখন ঋণে সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশ। ৮ শতাংশ সুদে যেসব ব্যাংক আমানত আনছে, তারা কীভাবে ব্যবসা করছে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, আমানতের সুদের সঙ্গে রয়েছে পরিচালন খরচ। আবার মুনাফাও করতে হয়।

সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন সংকটের সময়ে মানুষ সঞ্চয় কমাবে, এটাই স্বাভাবিক। আবার সরকার ঋণ করছে, ব্যাংকগুলোও ডলার কিনছে। ফলে টাকায় কিছুটা টান পড়বেই। তবে সুদহারের ছয়-নয় নীতির কারণে ব্যাংক খাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া রেপো দিয়ে ডলার কিনতে পারে ব্যাংক। সেটি না করার কারণে ব্যাংক খাতের তারল্যে চাপ বেড়েছে। এখন সুদহার বাড়িয়ে দিলে আমানত আবার বাড়তে শুরু করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close