নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ নভেম্বর, ২০২২

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা পরিকল্পনাকারীদের খুঁজছেন

ঢাকার আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে দিনেদুপুরে এভাবে আসামি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারীদের খুঁজছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে দেশের আদালত ও কারাগারের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে। অতি গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের আদালতে আনা-নেওয়ার বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়া যেত কি না- এ নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।

জানা গেছে, ঘটনার পর তদন্তের অংশ হিসেবে সোমবার (২১ নভেম্বর) সিটিটিসির একাধিক টিম কাশিমপুরের হাই-সিকিউরিটির কারাগার পরিদর্শনে যায়। কারাগার থেকে কার মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে জঙ্গিরা বাইরে যোগাযোগ করেছিলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে তা জানার চেষ্টা চলছে।

ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গি সদস্যকে ছিনতাই অপারেশনে নেতৃত্বদানকারীর নামণ্ডপরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এই অপারেশনে তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। জঙ্গি ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিসহ সবাইকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, আদালত থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা তিন মাস আগের। কাশিমপুর কারাগারে বসেই এই পরিকল্পনা চলে। প্রথমে প্রিজন ভ্যানে হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। দীর্ঘদিন রেকি শেষে পরিস্থিতি তুলনামূলক সহজ হওয়ায় আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা করা হয়।

সূত্র জানায়, কারাগার বরাবরই জঙ্গিদের যোগাযোগ ও পরিকল্পনার জন্য ‘নিরাপদ স্থান’ হয়ে উঠেছে। তারা সেখানে টাকা দিয়ে নিয়মিত সংগঠনের বাইরে থাকা সদস্যদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখছেন এবং নানা পরিকল্পনা করেছেন। এসব বিষয়ে নানা সময় কারা কর্তৃপক্ষকে বারবার পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে কারাগারের এমন অবস্থা যে, টাকা দিলেই জঙ্গি সদস্যরা সারারাত নিজেদের সেলে ফোন ব্যবহার করতে পারছেন। সেখানে বসেই তাদের যাবতীয় পরিকল্পনা হয়। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা।

জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পরিকল্পনা কারাগারেই হয়েছে কি না- তা খতিয়ে দেখছে কারা কর্তৃপক্ষ। এর সঙ্গে কারাগারের কেউ জড়িত কি না- তাও যাচাই করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধ্যমে তারা এ-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান বলেন, এ ধরনের শীর্ষ জঙ্গিদের খুব হাইসিকিউরড সেলে রাখা হয় এবং সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় রাখা হয়। যদি প্রমাণিত হয় জঙ্গিরা কারাগারে বসে আদালত থেকে পালানোর পরিকল্পনা করেছেন বা এই পরিকল্পনা করতে কারাগারের কেউ সহযোগিতা করেছেন বা তাদের ফ্যাসিলিটেট করেছেন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি আসামি ছিনতাইয়ের মাস্টারমাইন্ড হলেন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রধান সমন্বয়ক মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। তার অনুমতিতে এই ছিনতাই অপারেশন চালান সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মশিউর রহমান ওরফে আইমান।

গ্রেপ্তার জঙ্গি আরাফাত ও সবুরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, কনডেম সেলে থাকা ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি আসামিরা প্রায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতেন। কারাগারে বসেই পরিকল্পনা হয় আসামি ছিনতাইয়ের। প্রথমে ত্রিশালের জঙ্গি ছিনতাইয়ের মতো প্রিজন ভ্যানে হামলা করে সহযোগীদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে কাশিমপুর থেকে পুরান ঢাকায় আদালত পর্যন্ত আনা-নেওয়ার সময় প্রিজন ভ্যানে হামলা করাটা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় তাদের। তাই তুলনামূলক ‘কম নিরাপত্তা’ থাকায় ছিনতাই অপারেশনের স্পট হিসেবে তারা বেছে নেন আদালত প্রাঙ্গণকে। আর জঙ্গি সদস্যদের ছিনিয়ে নেওয়ার পর দ্রুত পালিয়ে যেতে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছিলেন সহযোগীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close