৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘোচাতে, বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে মরুর দেশে কাতারে পা রাখে আর্জেন্টিনা। কিন্তু টুর্নামেন্টের শুরুটা যে এমন দুঃস্বপ্নের মতো হবে, সেটা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি মেসি-মার্টিনেজরা। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের বিপক্ষে হতাশ করল দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। দুর্বল রক্ষণ আর অফসাইডের মহড়ায় আরব দেশটির সামনে দাঁড়াতেই পারল না লিওনেল স্ক্যালোনির শিষ্যরা। হার দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হলো লিওনেল মেসিরা। এ ছাড়া টানা ৩৬ ম্যাচ জয়ের পর হারের মুখ দেখল আর্জেন্টিনা।

গতকাল লুসাইল স্টেডিয়ামে খেলার দ্বিতীয় মিনিটে লিওনেল মেসির ১২ গজ দূর থেকে নেওয়া মাটি কামড়ানো শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে প্রতিহত করেন সৌদি গোলরক্ষক মোহামেদ আল-ওয়াইস।

গোল পেতে আর্জেন্টিনাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। আকাশি নীলরা প্রতিপক্ষের ডি বক্সের কাছে পেয়েছিল সেট পিস। এ সময় সৌদির আবদুল হামিদ প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে ধাক্কা মারেন। ভিএআরের সহায়তা নিয়ে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পটকিক থেকে ১০ মিনিটের মাথায় অবলীলায় মাটি গড়ানো শটে বল জালে জড়ান মেসি।

বিশ্বকাপ ইতিহাসে পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সমান ৭ গোলের মালিক এখন মেসি। দুই ফুটবলারই এবার পঞ্চমবারের মতো বিশ্ব আসরে খেলতে কাতারে গেছেন।

২১ মিনিটে আবারও বল জালে জড়িয়েছিলেন এলএম টেন। মাঝমাঠ থেকে লম্বা শটে পাস দেন পাপু গোমেজ। বল আদায় করে মেসি গোলরক্ষককে পরাস্ত করে নিশানাভেদ করেন। ভিএআর জানিয়ে দেয়, অফসাইডে ছিলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা, বাতিল হয় গোল। ছয় মিনিট পর আবারও অফসাইডে গোলবঞ্চিত হয় আলবিসেলেস্তেরা।

সৌদির এক খেলোয়াড়ের ভুল পাসে আক্রমণে ওঠে আর্জেন্টিনা। বল নিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে গিয়ে গোলরক্ষককে কাটিয়ে লক্ষ্যভেদ করেছিলেন লৌতারো মার্টিনেজ। রেফারি ভিএআরের শরণাপন্ন হয়ে গোল বাতিল হয়েছে বলে জানান।

মেসির বাড়িয়ে দেওয়া বল নিয়ে মার্টিনেজ ৩৪ মিনিটের মাথায় আবারও বল জালে পাঠালেও লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা তুলে দেন। এতে টানা তিন গোল বাতিলের বেদনায় পুড়তে থাকে আর্জেন্টিনা। বিরতির আগে যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে মাঠ ছাড়েন সৌদি আরবের অধিনায়ক সালমান আল ফারাজ।

দ্বিতীয়ার্ধে দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের চমকে দেয় সৌদি আরব। ৪৮ মিনিটে ফিরাস আল-বুরাইকান মাঝমাঠে থেকে লম্বা শট দিয়ে বল ডি বক্সের কাছে পাঠান। সুযোগের সন্ধানে থাকা ফরওয়ার্ড সালেহ আল-শেহরি প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে ম্যাচে সৌদি আরবের প্রথম শট অন টার্গেটে গোল করে ম্যাচে সমতা টানেন।

চমকের তখনো আরো বাকি ছিল। ৫৩ মিনিটে ডি বক্সের সামান্য বাইরে বাঁ প্রান্তে থাকা মিডফিল্ডার সেলিম আল-দাসারি কাট করে দুবার ড্রিবলিং করেন। গোলরক্ষককে কাটিয়ে শরীর মোচড় দিয়ে ডান পায়ের চোখ ধাঁধানো গোল করেন। লিড পায় সৌদি আর মারাত্মক চাপে পড়ে যায় আর্জেন্টিনা।

দশ মিনিট পর আর্জেন্টিনা গোলের ভালো সুযোগ পেয়েছিল। নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর ডি বক্সের ভেতরে নেওয়া শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন সৌদি গোলরক্ষক আল-ওয়াইস। ৮৪ মিনিটে তিনি মেসির হেডও ঝাঁপিয়ে ধরতে সক্ষম হন।

যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে আলভারেজের নেওয়া শট গোললাইন ঘেঁষে দাঁড়ানো আল আমরি হেডে ক্লিয়ার করে সৌদিকে বাঁচিয়ে দেন।

মিনিট তিনেক পর ডি বক্সের ভেতর থেকে বল ফিস্ট করতে যান আল-ওয়াইস। এ সময় তার সতীর্থ ইয়াসের আল-শাহরানির সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। গুরুতর আহত শাহরানির চিকিৎসা করতে তাৎক্ষণিক মাঠে আসে মেডিকেল টিম। মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে তিনি মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন।

বেশখানিকক্ষণ বন্ধ থাকার পর খেলা শুরুর পর গোলের সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু জুলিয়ান আলভারেজের হেড দারুণভাবে আল-ওয়াইস লুফে নেন। যোগ করা সময় প্রায় ১৪ মিনিট হাতে থাকলেও সমতা টানতে না পারায় হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে লিওনেল স্কালোনির দল।

"