নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ নভেম্বর, ২০২২

জঙ্গি ছিনতাই

তদন্তে পুলিশের কমিটি বরখাস্ত ৫ সদস্য

আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মনজুর রহমান সোমবার (২১ নভেম্বর) এ তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন। বরখাস্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন সিএমএম আদালতের হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ পুলিশের এসআই নাহিদুর রহমান ভূঁইয়া, আসামিদের আদালতে নেওয়ার দায়িত্বরত পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফ হাসান ও আবদুুস সাত্তার।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অডিট) আমিনুল ইসলামকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি হাসানুজ্জামান, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপকমিশনার (ডিসি) এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান।

এআইজি মনজুর রহমান বলেন, কীভাবে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং এতে কারো গাফিলতি ছিল কি না, তদন্ত কমিটি সেটি খুঁজে বের করবে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গির আগের অপরাধের ধরন, তাদের আত্মীয়স্বজন ও বিভিন্ন সময়ে চলাফেরা- সবকিছু পর্যালোচনা করছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। সোমবার রাজধানীতে র‌্যাবের সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার

পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব বলছে, ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ও তাদের সহযোগীদের ধরতে র‌্যাবের সব ইউনিট কাজ করছে।

র‌্যাব বলেছে, আদালত প্রাঙ্গণ, অন্যান্য জায়গা, সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে তারা। পাশাপাশি গোয়েন্দা কার্যক্রম চলছে।

অন্যদিকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রধান মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হকের পরিকল্পনায় ১৮ সহযোগী মিলে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের একজন পরিদর্শকসহ পাঁচজনকে সামযিক বরখাস্ত করা হয়েছে। রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

আর ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন জানান, আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হবে।

রবিবার (২০ নভেম্বর) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল থেকে আট জঙ্গিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। তারা যখন সিজেএম আদালতের প্রধান ফটকের সামনে আসেন, তখন হাতকড়া পরা দুই জঙ্গি তাদের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশের এক সদস্যকে মারধর শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে আশপাশে থাকা জঙ্গিদের সহযোগীরাও পুলিশের ওপর হামলায় যোগ দেন। পুলিশের ওই সদস্যকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন কয়েক পুলিশ সদস্য। তাদের ওপর হামলা ও স্প্রে ছিটিয়ে সিজেএম আদালতের প্রধান ফটকের উল্টো দিকের গলি দিয়ে মোটরসাইকেলে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেয় সহযোগীরা।

ছিনিয়ে নেওয়া দুজন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য। তারা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এই জঙ্গি সংগঠনের নেতা মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক। যার পরিকল্পনায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একাধিক লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও সমকামী অধিকারকর্মীকে হত্যা করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close