নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ নভেম্বর, ২০২২

বিদ্যুতের দাম ১৯.২২ শতাংশ বাড়ল

গ্রাহকপর্যায়ে প্রভাব পড়বে না : প্রতিমন্ত্রী

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের প্রতি কিলোওয়াট ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নতুন দর ঘোষণা করেছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। অর্থাৎ প্রতি কিলোওয়াটে ১ টাকা ৩ পয়সা করে বেড়েছে। শতাংশের হিসাবে ১৯ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে। আগামী বিল মাস ডিসেম্বর থেকেই নতুন এই মূল্য কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন। পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়লেও এর প্রভাব গ্রাহকদের ওপর এখনই প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

সোমবার (২১ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেন বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দাম পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব জমা দেয় পিডিবি। এরপর ১৮ মে তাদের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করা হয়েছে। এরপর সবশেষ ১৩ অক্টোবর দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দেয় কমিশন। তবে কমিশন সে সময় এই প্রস্তাবের বিপরীতে রিভিউ করার সুযোগ রেখে দেয় পিডিবির জন্য। আর সেই সুযোগ নিয়ে পিডিবি গত সপ্তাহে রিভিউ আপিল করে। এক সপ্তাহের যাচাই-বাছাই শেষে আজ নতুন সিদ্ধান্ত জানানো হলো। জানা গেছে, এই দাম পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ দাম বাড়ানোর পরও বিদ্যুতের উৎপাদন পর্যায়ে ভর্তুকি ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে সরকার।

সর্বশেষ ২০২০ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি আরেক দফা বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। পাইকারি, খুচরা ও সঞ্চালন- এই তিন পর্যায়ে তখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা করা হয়। যা আগে ছিল প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৭৭ পয়সা।

পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট গড়ে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ টাকা ১৭ পয়সা করা হয়। যা আগে ছিল প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৭৭ পয়সা। এছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন মূল্যহার বা হুইলিং চার্জ প্রতি ইউনিটে শূন্য দশমিক ২৭৮৭ টাকা থেকে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ২৯৩৪ টাকা করা হয়ে। ওই বছরের ১ মার্চ থেকে কার্যকর করে বিইআরসি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বিইআরসি জেনারেশন পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে যাচাই-বাছাই চলছে। আমাদের এখানে জেনারেশন করতে গিয়ে মূল্য বেড়ে গেছে, তেল ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। সে জন্য মূল্যটা সমন্বয় করার জন্য বিইআরসি যাচাই-বাছাই করে ঘোষণা দিয়েছে।

‘গ্রাহক পর্যায়ে কতটুকু প্রভাবে পড়বে এখন তো বলতে পারছি না। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে চাই। দামের সঙ্গে কিছুটা সমন্বয় করতে চাই। এখন যেটা হয়েছে, সেটা হয়তো হবে না কিন্তু ভবিষ্যতে বিইআরসি গ্রাহক পর্যায়ে বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করবে।’

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা করেছে বিইআরসি। এর মধ্য দিয়ে পাইকারি পর্যায়ে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বা ১ টাকা ৩ পয়সা বাড়াল সরকার। নতুন এ মূল্য ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমার মনে হয় না পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো নিয়ে শঙ্কা আছে। গ্রাহক পর্যায়ে এটার কোনো প্রভাব পড়বে না। গ্রাহক পর্যায়ে আদৌ দাম বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কি-না, তা বিইআরসির ওপর নির্ভর করছে। আপাতত গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ছে না। গ্রাহক পর্যায়ে যাতে স্বস্তি দেওয়া যায়, সেই বিষয়টিও আমরা বিবেচনা করব। এখন যেটা (দাম বৃদ্ধি) হয়েছে গ্রাহক পর্যায়ে নয়। নির্বাচনের আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আমি বাড়ানোর কথা তো বলিনি একবারও। এটা কী নির্বাচনের এক বছর নাকি দুই বছর আগে, সেটা বিষয় নয়; এখন সারা বিশ্বেই দাম সমন্বয় হচ্ছে। কারণে উৎপাদনের ক্ষেত্রে দাম প্রভাবিত হচ্ছে। ৭ ডলারের গ্যাস ৩০ ডলারে কিনতে হয়।’ বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘সরবরাহ এখন আমরা মোটামুটি অ্যাডজাস্ট করে ফেলেছি। আমরা আশাবাদী, মোটামুটি এখন ভালো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি। যে ঘাটতিটা ছিল, তা আস্তে আস্তে পূরণ হয়ে যাচ্ছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close