জিয়াউদ্দিন রাজু

  ২১ নভেম্বর, ২০২২

ছাত্রলীগে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ, ধরনা

বয়সের সীমারেখা শিথিল হবে কি না : কৌতূহল * বয়সের ছাড় না হলে নেতৃত্বের দৌড়ে বাদ পড়বেন যোগ্য অনেকে * সন্ধ্যা হলেই আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে ভিড়

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আড্ডার বিষয়বস্তু এখন অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন ঘিরে। জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সংগঠনটির ৩০তম জাতীয় সম্মেলন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সম্মেলনের খবরে সংগঠনের সবপর্যায়ের নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। শুরু হয়েছে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। তারা ধরনা দিচ্ছেন অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের কক্ষে। তবে ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ ওই দুই পদে কে কে আসবেন, তা নির্ধারণ করে দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছাত্রলীগের এটি ৩০তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন। সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যবারের তুলনায় এবার সম্মেলনের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। বিশেষ করে বয়সের সীমারেখার বিষয়ে এবার কৌতূহল বেশি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনে বয়স বাড়িয়ে ২৮ বছর করা হয়েছিল। দুই বছর মেয়াদি কমিটি হলেও নানা কারণে বর্তমান কমিটির মেয়াদ চলছে প্রায় ৪ বছর। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে সংগঠনের কার্যক্রম স্থবির ছিল। সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে বয়সসীমা তাতে এবার ছাড় দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে সভাপতি-সম্পাদকের দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন সংগঠনের সিনিয়র নেতারা। তা না হলে নেতৃত্বের যোগ্যতা থাকলেও ছাত্রলীগ থেকে বাদ পড়ে যাবেন বহু যোগ্য নেতাই। তবে এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র ছাত্রলীগের অভিভাবক শেখ হাসিনার। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চার সমন্বয়কও কিছু বলতে নারাজ।

বয়সসীমায় ছাড় দেওয়া না হলে অনেকেই এবার প্রার্থী হতে পারবেন না। করোনা পরিস্থিতির কারণে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় তারা সুযোগবঞ্চিত হবেন। এতে তারা হতাশায় ডুবে যেতে পারেন। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়তে না পেরে এবং চাকরির বয়স পার হয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই অনেকে হতাশায় রয়েছেন। তবে এই সময়টায় বয়সি ও বয়স উত্তীর্ণ সবাই নেতৃত্ব পাওয়ার আশায় দৌড়ঝাঁপের মধ্যে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আওয়ামী লীগের উচ্চপার্যয়ের নেতাদের অফিস কিংবা বাসার আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে পদপ্রত্যাশীদের। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রতিদিনই হাজির হচ্ছেন তারা। বিশেষ করে সন্ধ্যা হলেই তাদের পদভারে মুখরিত থাকছে ধানমন্ডি অফিস প্রাঙ্গণ।

৩০তম সম্মেলন ঘিরে ছাত্রলীগের অর্ধশত নেতা সভাপতি-সম্পাদক পদের জন্য দৌড়ে রয়েছেন। ছাত্রলীগের বিগত কমিটিগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে যে নেতারা রয়েছেন, তাদের সুপারিশে তাদের এলাকা থেকেই নেতা নির্বাচিত হন। তবে গতবার ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এবারও তিনিই নেতা বাছাই করবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ও সমন্বয়কারী নেতারা। এবার পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা, চারিত্রিক মাধুর্যতা, শিক্ষার্থীবান্ধব আওয়ামী পরিবারের নেতাদেরই নেতৃত্বে আনার কথা জানায় দলের হাইকমান্ড। এ ছাড়াও করোনা মহামারিতে মানবিক কাজে যারা আলোচনায় এসেছেন, তাদের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে বলে জানা যায়।

বিগত কয়েকটি কমিটিতে নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল থেকেই ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। এরমধ্যে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, খুলনা, এবং ময়মনসিংহ উল্লেখযোগ্য।

নেতৃত্বের দৌড়ে এসব অঞ্চলের যেসব নেতা এগিয়ে আছেন তারা হলেন-

চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজীব, মাজহারুল ইসলাম শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, উপসমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল।

বরিশাল অঞ্চল থেকে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন, ইয়াজ আল রিয়াদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহান, শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), কর্মসংস্থানবিষয়ক উপসম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়।

ঢাকা অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির উপতথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এহসান উল্লাহ পিয়াল। ছাত্রলীগের আলোচনায় থাকা পিয়াল (নরসিংদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল ইউনিটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাকিব হোসাইন, কামাল হোসেন খান, কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক রনি মোহাম্মদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, সাবেক উপদপ্তর শেখ হকিবুল ইসলাম সুমন।

উত্তরবঙ্গ অঞ্চল থেকে বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাকিবুল হাসান রাকিব, ক্রীড়া সম্পাদক আল আমিন সুজন ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, গ্রন্থনা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আবু হাসনাত সরদার হীমেল, উপকর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক তানভির রহমান মাহীদ।

খুলনা অঞ্চল থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন, মানবসম্পদণ্ডবিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন, উপবিজ্ঞান সম্পাদক খন্দকার হাবিব আহসান, পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নন)।

ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সোহান খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস।

সিলেট অঞ্চল থেকে প্রার্থী হিসেবে আছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক আল আমিন রহমান। প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগে সবচেয়ে কম নেতৃত্ব এসেছেন সিলেট অঞ্চল থেকে।

এ সম্মেলনে যারা নেতৃত্বে আসবেন তারাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের পক্ষে মাঠে শক্ত অবস্থানে থাকবেন। এবার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে ছাত্রলীগের। ফলে সারা দেশে ছাত্রসমাজের নেতৃত্ব দিতে পারবেন- এমন নেতাকেই সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হবে। যে কারণে এবার ছাত্রলীগে জনপ্রিয় ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা নেতাদেরই সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা নিজে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এবার কমিটি দেবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন, সৎ চরিত্র, ছাত্রসমাজের মাঝে গ্রহণযোগ্য ও পারিবারিকভাবে আওয়ামী ব্যাকরাউন্ডের হবে- এ রকম নেতাই সম্মেলনের মাধ্যমে বাছাই করা হবে। বয়সের বিষয়টি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন।

বয়সের সীমারেখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বয়স বাড়ানো যায় কি না- এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন শেখ হাসিনা।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close