ঝালকাঠি প্রতিনিধি

  ০৭ অক্টোবর, ২০২২

পাঁচ বছর পর হত্যারহস্য উদ্ঘাটন

হত্যাকাণ্ডের প্রায় পাঁচ বছর পর রহস্য উদ্ঘাটন করেছে ঝালকাঠি সিআইডি পুলিশ। ২০১৭ সালের সেপ্টেস্বর মাসে জেলার রাজাপুর উপজেলার বাইপাস মোড় থেকে অপহৃত হন স্থানীয় বাস কাউন্টার বয় মীর খাইরুল ইসলাম (৩৭)। তাকে অপহরণ করে খুন করে লাশ গুম করা হয়েছে এ অভিযোগে রাজাপুর থানায় মামলা করেন তার ভাই সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।

পাঁচ বছর পর ঝালকাঠি সিআইডি পুলিশ গত বুধবার (৫ অক্টোবর) রাজাপুর উপজেলার কানুদাসকাঠি গ্রাম থেকে মাটি খুঁড়ে খাইরুলের কঙ্কাল ও কিছু আলামত উদ্ধার করে। বুধবার সন্ধ্যায় সিআইডি ঝালকাঠি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সামনে হত্যা ঘটনা সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেন সিআইডি ঝালকাঠি ক্যাম্পের সহকারী পুলিশ সুপার মো. এহসানুল হক। উপস্থিত ছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. বাবুল হোসেন, পরিদর্শক মো. ফারুক খান, মো. সোলায়মান, মো. আবদুস সালাম ও মিজানুর রহমান।

ব্রিফিংয়ে সহকারী পুলিশ সুপার এহসানুল হক জানান, ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাজাপুর বাইপাস মোড় থেকে মাদক সংক্রান্ত বিরোধের কারণে অপহরণ করা হয় খাইরুলকে। তাকে অপহরণ করে খুন ও লাশ গুম করা হয়েছে অভিযোগে রাজাপুর থানায় মামলা হয়। মামলা নং ১৫ তারিখ ২৪-৯-২০১৭ ধারা ৩৬৪, ৩৬৫, ৩০২, ২০১, ৩৪। আসামি করা হয় স্থানীয় সৈয়দ জেহাদুল ইসলাম, রিয়াদ, কাজল, পলি বেগম, রুস্তম ও অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে। রাজাপুর থানা পুলিশ ফোরকান নামের একজনকে সন্ধিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করলেও তার কাছ থেকে কোনো সূত্র উদ্ধার করতে পারেনি। পরে তিনি আদালত থেকে জামিন লাভ করে।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলাটি ঝালকাঠি সিআইডিতে বদলি করা হয়। বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা মো. বাবুল হোসেন মামলার তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে একাধিক সোর্স নিয়োগ করেন। গত সোমবার সিআইডি পুলিশ রাজাপুর উপজেলার কানুদাসকাঠি গ্রাম থেকে মিজান হাওলাদার মিজু (৪৫) নামের একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পূর্বকানুদাসকাঠি গ্রামের একটি কবরস্থানের বাঁশ ঝাড়ে মাটির নিচ থেকে খাইরুলের লাশের কঙ্কাল এবং পড়নের জিন্সের প্যান্টের অংশ বিশেষ ও বেল্টসহ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়।

আটক মিজান সিআইডিকে জানান, তার আপন দুই ভাই সোহাগ ও মনির এবং অন্য দুজন ফোরকান ও গিয়াস- এই চারজন মিলে খাইরুলকে খুন করা হয়। প্রথমে লাশ ফোরকানের বাড়ির পেছনে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। এক মাস পর সেখান থেকে লাশ তুলে পূর্বকানুদাসকাঠি গ্রামে একটি কবরস্থানে বাঁশ ঝাড়ে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। দ্বিতীয়বার লাশ পুঁতে রাখার সময় মিজানুর রহমান মিজু ঘটনা দেখে ফেলেন। মিজানুর রহমান মিজু নিজের বয়সের চেয়ে বড় একজন মহিলাকে বিবাহ করায় তার ভাই ও আত্মীয়স্বজনরা তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করত। সে কারণেই ঘটনার ৫ বছর পর সে সিআইডির কাছে ঘটনা ফাঁস করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. বাবুল হোসেন বলেন, সিআইডির হেফাজতে থাকা মিজানুর রহমান মিজুকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হবে এবং উদ্ধার করা কঙ্কালের নমুনা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। তিনি আরো জানান, ঘটনার পর যাদের আসামি করা হয়েছিল তাদের কারোরই নাম মিজানুর রহমান মিজান বলেননি। এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ফোরকানকে এর আগে গ্রেপ্তার করা হলেও বর্তমানে তিনি জামিনে থেকে পলাতক রয়েছেন। মাদক সংক্রান্ত বিরোধের কারণে ফোরকানের পরিকল্পনায় খাইরুলকে খুন করা হয়। হত্যা ঘটনায় জড়িত গিয়াস উদ্দিন দুলাল এক বছর আগে মারা গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close