নিজস্ব প্রতিবেদক
চলার পথে গোল পাকিয়ে সর্বস্ব লুট
গ্যাঞ্জাম পার্টির দুজন গ্রেপ্তার
উত্তরা এলাকায় প্রাইভেট কার চালিয়ে বাসায় যাচ্ছিলেন লুৎফর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী। চলার পথে হঠাৎ তার গাড়ির সামনে রাজু নামে এক ব্যক্তি এসে ‘আমাকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিলি ক্যান’ এই বলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে তার সঙ্গে এসে যোগ দেয় সুমন নামে আরেক ব্যক্তি। পরে রাজু ও সুমন মিলে প্রথমে লুৎফরকে মারধর করে এবং তার মোবাইল ফোন ও টাকাণ্ডপয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে লুৎফর চিৎকার করলে উত্তরা পশ্চিম থানার টহলরত পুলিশ রাজু ও সুমনকে গ্রেপ্তার করে। এরা প্রথমে পথচারী কিংবা যানবাহনের চালকের সঙ্গে গায়ে পড়ে কাইজা লাগায়। এর ফাঁকে তাদের শিকারকে ঘিরে ধরে লুটে নেয় সর্বস্ব।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টায় উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তাররা পথচারী কিংবা গাড়িচালকদের সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে ঝগড়া তৈরি করে। পরে আরো কয়েকজন তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পথচারী ও গাড়িচালককে মারধর করে কৌশলে তাদের টাকাণ্ডপয়সা, মোবাইল, ল্যাপটপ ও সঙ্গে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে গ্যাঞ্জাম সৃষ্টি করা এ চক্রটি প্রধান কৌশল। ঝগড়া লাগিয়ে ছিনতাই করে বলে স্থানীয়দের কাছে তারা ‘গ্যাঞ্জাম পার্টি’ নামে পরিচিত।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, চক্রটি ইচ্ছাকৃতভাবে ঝগড়া লাগিয়ে ছিনতাই করে। তাই স্থানীয়দের কাছে তারা ‘গ্যাঞ্জাম পার্টি’ হিসেবে পরিচিত। গ্রেপ্তার রাজু ও সুমনের নামে একই অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে। এর আগে তারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগও করেছেন। জামিনের বেরিয়ে আবারও একই পেশায় জড়ান।
ওসি বলেন, মঙ্গলবার রাতে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে এক ব্যক্তি সঙ্গে গ্যাঞ্জাম পাকিয়ে ছিনতাইকালে রাজু ও সুমনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার রাজু ঢাকার তুরাগ থানাধীন ভাবনারটেক এলাকার নুর আলমের ছেলে। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অপর আসামি সুমন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার রুস্তম আলী খানের ছেলে।
রাজু ‘গ্যাঞ্জাম পার্টি’র মূল হোতা, তার নেতৃত্বে ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ রয়েছে ছিনতাই করে। তারা রাতের বেলায় উত্তরাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আড্ডা দেন। তাদের মূল টার্গেট পথচারী ও গাড়িচালক। কোনো পথচারীকে একা পেলে চক্রের এক সদস্য তার সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে ধাক্কা খেয়ে ‘এই আমাকে ধাক্কা দিলি ক্যান’ বলে ঝগড়া সৃষ্টি করে। মুুহূর্তের মধ্যে চক্রের অন্য সদস্যরা আশপাশ থেকে এসে পথচারী বা গাড়িচালককে মারধর করে। এরপর তার কাছে থাকা টাকাণ্ডপয়সা, মোবাইল ফোন ও মূলবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
একইভাবে কোনো গাড়িচালককে একা দেখলেই ‘গ্যাঞ্জাম পার্টি’র সদস্যরা গাড়ির সামনে গিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা খেয়ে ‘আমাকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিলি ক্যান’ এই বলে ঝগড়া বাজায়। এরপর গাড়িচালককে বের করে মারধর দিয়ে সব হাতিয়ে নিয়ে যায়।
ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, এ চক্রের সম্পর্কে স্থানীয়রা আগে থেকেই জানতো গ্যাঞ্জাম পাকানো তাকে কৌশল। এ বিষয়ে থানায় একাধিক অভিযোগও জমা পড়েছে। গ্যাঞ্জাম পার্টি সদস্যদের নামের তালিকা করা হয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
"