প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৬ অক্টোবর, ২০২২

নিহত ৩ শান্তি সেনার বাড়িতে শোকের মাতম

মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনার সময় শান্তিরক্ষী বাহিনীর গাড়িটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বিস্ফোরণে বাংলাদেশে যে তিনজন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন, তাদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আহাজারি করছেন স্বজনরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে ও শোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা গ্রামের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। ওই গ্রামের যুবক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য জসিম উদ্দিনের (৩১) নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর শোকের মাতম চলছে পুরো গ্রামে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জসিম উদ্দিনের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুন নুরু বলেন, আমি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। আমার ছেলেও দেশের মর্যাদা রক্ষায় দেশের বাইরে গিয়ে জীবন দিয়েছে। আমি গর্বিত বাবা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাকরুদ্ধ জসিমের স্ত্রী শারমিন আক্তার। তার ছোট্ট ছেলেরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছিল। কাঁদছিলেন জসিমের বড় ভাই সহকারী আনসার বাহিনীর প্লাটুন কমান্ডার (কুমিল্লা) জুলহাস উদ্দিনও। প্রতিবেশী ও নিকট আত্মীয়রা তাদের সান্ত¡না দিচ্ছেন।

নিহত জসিম উদ্দিনের বড় ভাই জুলহাস উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সিলেটের ৬১ বেঙ্গল ই রেজিমেন্ট থেকে ফোন করে জসিমের নিহতের সংবাদ জানানো হয়। তিনি ১৩ বছর ধরে চাকরি করছিলেন। ৯ মাস ২০ দিন আগে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আফ্রিকায় যান। তার ৩ ও ২ বছর বয়সি ২টি ছেলে আছে। জুলহাস বলেন, আমার ভাইয়ের মরদেহ দ্রুত দেশে আনা হোক। তার পরিবার ও সন্তানদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু করার দাবি জানাই।

বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, জসিমের মরদেহ দ্রুত দেশে আনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি তার পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

সিরাজগঞ্জ ও বেলকুচি : সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের বেড়াখারুয়া গ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য শরিফুলের (২৪) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বুধবার দুপুরে দিকে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল ওই বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সহমর্মিতা জানান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহীদ শরীফুলের বাড়িতে নারী-পুরুষের ভিড়। কেউ কাঁদছেন, কেউ অন্যকে সান্ত¡না দিচ্ছেন। মা পাঞ্জু আরা বেগম (৪১) নির্বাক হয়ে পড়ে আছেন। বাকরুদ্ধ বাবা লেবু শেখ (৬২)। অকালে সন্তান হারানোর শোক যেন কোনোভাবেই সইতে পারছেন না তারা। পরিবারের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।

শরীফুলের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, কথা ছিল শরীফুল মিশন থেকে এসে তার একমাত্র বোনকে বিয়ে দেবে। বাড়িতে কত কিছু করবে। কত না স্বপ্ন ছিল। এখন আমাদের এসব স্বপ্ন কে পূরণ করবে?

শরিফুলের বাবা লেবু শেখ জানান, আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। মিশনের সব অর্থ দিয়ে ভালো ছেলের সঙ্গে বোনকে বিয়ে দেবে বলে তার স্বপ্ন ছিল।

এদিকে শরিফুলের নববিবাহিত স্ত্রী সালমা (১৮) জানান, আমি এখন কি নিয়ে থাকব। আমার এখন কি হবে। কতই না স্বপ্ন ছিল আমাদের। একমাত্র ছোট ভাই কাউসার তালুকদার (২২)। সেও এসএসসি পাস করে সৈনিকে চাকরির আশায় বহু চেষ্টা করেছে। আর ছোট বোন লাখি খাতুন (১৮) খামারগ্রাম কলেজে এইচএসসিতে পড়াশোনা করছে। তারাও বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

এছাড়া শরিফুলের চাচা মাহদুল হাসান বলেন, শরিফুল ছোটবেলা থেকেই অনেক মেধাবী ও পরিশ্রমী ছিল। শরিফুল চাকরি নেওয়ার পর বয়োবৃদ্ধ বাবা শ্রমিকের কাজ ছেড়ে দেন। শরিফুলই ছিল তাদের একমাত্র অবলম্বন। শরিফুলের ছোট ভাইকে যদি কোনো সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা যায় তাহলে হয়তো বৃদ্ধ বাবা-মা শেষ বয়সের দিনগুলো ছেলে হারানোর কষ্ট বুকে নিয়েও দিন পার করতে পারবে।

নীলফামারী : সৈনিক জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ডিমলা সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম লতিফুর রহমান। তার পাঁচ ছেলের মধ্যে জাহাঙ্গীর চতুর্থ। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বড় ভাই সেনাসদস্য আবুজার রহমান ও ছোট ভাই বাদশা মিয়া জানান, মঙ্গলবার সকালে সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মুঠোফোনে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর খবর জানান।

খবর জানার পর পরিবারে নেমে এসেছে শোক। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মা গোলেনুর বেগম ও বাবা লতিফুর রহমান। সদ্য বিবাহিত স্ত্রী শিমু আক্তার স্বামীর ছবি বুকে ধরে বারবার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close