এম এ মাসুদ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

  ০৫ অক্টোবর, ২০২২

অর্থনীতিতে আনবে গতি তিস্তা সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প

আগামী ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধনের সম্ভাবনা * দৈনিক উৎপাদন হবে ২০০ মেগাওয়াট

দেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিরসন ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা ও কৃষি খাতের উন্নয়ন করতে তৈরি হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প ‘তিস্তা সোলার পাওয়ার প্লান্ট’। দৈনিক ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ প্লানটি আগামী ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন হতে পারে। প্রকল্পটি চালু হলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো গতি পাবে।

তিস্তা নদীর ওপারে কুড়িগ্রামের উলিপুর আর এপারে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ এবং পাশেই রংপুরের পীরগাছা। এই তিন উপজেলার সীমান্তবর্তী সংযোগস্থলে দেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটির অবস্থান।

অতীতে যেখানে যেতে সাহস পেতেন না অনেকেই, ফলত না কোনো ফসল সেখানে যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি সড়ক। কাজের সুবিধার্থে ও প্রকল্পের তদারকির জন্য ভিতরেও রয়েছে কয়েকটি ছোট ছোট রাস্তা। স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে প্রায় ২ সহস্রাধিক লোকের। এরই মধ্যে জীবনমানে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে স্থানীয় অধিবাসীদের। স্থাপিত হয়েছে মসজিদ ও মাদরাসা। এলাকার মৃত মানুষের সমাধিস্থ করার কোনো সুনির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় কর্তৃপক্ষের অনুদানে করা হয়েছে একটি কবরস্থানও। এছাড়া অনুদানও দেওয়া হয়েছে স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায়।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের দিকে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি ব্যয়ে ওই দুর্গম চরের তপ্ত বালু রাশির পরিত্যক্ত প্রায় ৬০০ একর জায়গায় ‘তিস্তা পাওয়ার প্লান্ট’ নামে দেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে ‘বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড।’ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে ৮৫টি মাউন্টিং পাইলস যার ওপরে বসানো হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার সৌর প্যানেল। সারি সারি সাজানো সৌর প্যানেলের সৌন্দর্য দৃষ্টি কেড়ে নেবে যে কারো।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এসব সৌর প্যানেল থেকে ১২০টি ইনভার্টারের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এজন্য ২৮টি বক্স ট্রান্সমিশনে সংযোগ স্থাপন, সাবস্টেশনসহ ১২০ কেভিএ ট্রান্সমিশন টাওয়ার নির্মাণ এবং জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তির জন্য তিস্তা পাওয়ার প্লান্ট থেকে রংপুর পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার লম্বা সঞ্চালন লাইন। এই লাইনের মাধ্যমেই সুন্দরগঞ্জের কেন্দ্রটি থেকে রংপুর গ্রিড সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

তিস্তার তীরের চরখোদ্দা গ্রামের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটির কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ের দিকে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে উদ্বোধনের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তার আগে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হবে বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

উত্তরাঞ্চলের রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাটসহ গোটা রংপুর বিভাগের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রকল্প অ্যাডমিন আলহাজ ইউনুছ আলী বলেন, ‘প্রকল্পটি উত্তরাঞ্চলের জন্য একটি মাইলফলক। এটি দেশের মধ্যে বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। আশা করছি রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা ও কৃষি খাতের উন্নয়নে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।’

রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, শঠিবাড়ীর সহকারী জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী সিফাত আহমেদ চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘তিস্তা পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রথমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। সেখান থেকে বিপিডিবি কিছু নিবেন তারপর হয়তো আমরাও কিছু নিব। ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতে কত লাখ গ্রাহক সেবার আওতায় আসতে পারেন? জবাবে তিনি বলেন, এটি তো নির্ভর করবে ব্যবহারের ওপর। তবে অনুমান কমপক্ষে ১০ লাখ গ্রাহক উপকৃত হতে পারে বলে আমার ধারণা।’

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, রংপুরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘তিস্তা সোলার পাওয়ার প্লান্ট থেকে দৈনিক ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলে তা হবে রংপুর বিভাগের জন্য একটি মাইলফলক। এটি রংপুর থেকেই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। তখন আমাদের আর যমুনার ওইপাড় থেকে বিদ্যুৎ আনতে হবে না। প্রকল্পটি চালু হলে বিদ্যুতের ঘাটতি দূর হওয়ার পাশাপাশি তা উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে বেশ অবদান রাখবে তাও জানালেন ওই কর্মকর্তা।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close