নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৫ অক্টোবর, ২০২২

অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে

প্রধানমন্ত্রী

আগামী বছর বিশ্ব মন্দা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতিসংঘে গিয়ে বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সংস্থাটির মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সবাই খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত যে, ২০২৩ সালে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। অর্থনৈতিক মন্দা আরো ব্যাপক আকারে দেখা দিতে পারে। অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় দেশের জনগণকে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গণভবন থেকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জমি অত্যন্ত উর্বর। তাই কোনো জমি যাতে অনাবাদি না থাকে। যে যা পারেন উৎপাদন করেন। নিজেদের সঞ্চয় বাড়াতে হবে।’ জনগণের ভোগান্তি কমাতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় উন্নত দেশগুলো আজ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, যে ধর্মেরই হোক, যেই হোক ধর্মীয় অনুভূতিতে কেউ আঘাত দিতে পারবেন না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারবেন না। যেকোনো ধর্মের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। ইসলাম ধর্মের উদারতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম অনেক উদার ধর্ম। আমাদের ইসলাম ধর্মে নির্দেশ আছে, সকল ধর্মকে সম্মান দেখাতে হবে।’

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা জানি, ৭৫-এর পর অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। কখনো কখনো কিছু কিছু ঘটনা ঘটে, কিন্তু আপনারা নিশ্চয়ই একটা জিনিস লক্ষ করেছেন, আমাদের সরকার সব সময় এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। যেকোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

বাংলাদেশের নাগরিক সে যে ধর্মেরই হোক, যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে বলে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা কিন্তু প্রতিটি উৎসবই ধর্মণ্ডবর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে উদযাপন করি। যে কারণে বলি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করি দেশটা যেন সব সময় অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে চলতে পারে। কোথায়ও কোনো দুর্ঘটনা হলে পরে সেটাকে খুব বড় করে না দেখে তার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়টিকে আপনাদের নজর দিতে অনুরোধ করব। সেই সঙ্গে আপনাদের সহযোগিতাও চাইব। আপনারাও সেই সহযোগিতা করবেন।’

মুসলিমদের হেবা আইনের মতো সুবিধা হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্যও চালু করা হয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল শত্রু সম্পত্তি আইন। সেটাও আমরা বাতিল করে, পরিবর্তন করে দিয়েছি। যার যার সম্পত্তিতে অধিকারটা ভোগ করতে পারেন। সেই ব্যবস্থাটা করেছি।’ এ সময় সব ধর্মের বিত্তবান মানুষকে কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে মানুষের সেবায় পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি অনেক সময়, অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে। কিন্তু এবারই সবচেয়ে আন্দনপূর্ণ পরিবেশে, সুন্দরভাবে পূজা শুরু হয়েছিল। সেখানে এই একটা ঘটনায় কষ্টের জায়গা সৃষ্টি করল।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে দুর্ভাগ্য যে, আসলে একটা নৌকায় এত বেশি লোক একসঙ্গে চড়াটা। বারবার নিষেধ করার পরও কেউ শোনেনি। অথচ নদীটি খুবই ছোট, অত গভীরও না। তার পরও দুর্ঘটনাটা ঘটে গেছে।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষ করে গতকাল ভোরে দেশে ফেরেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী একটি ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এর আগে ফ্লাইটটি ওয়াশিংটন ডিসি থেকে রবিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর সাড়ে ৪টায়) উড্ডয়ন করে। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত। প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন থেকে দেশে ফেরার পথে লন্ডনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close