নিজস্ব প্রতিবেদক
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ভোগান্তি
জাতীয় গ্রিডে ত্রুটির কারণে ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে। এ সময় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনার আংশিক এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ২টা ৫ মিনিটে ট্রিপ করে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিবি) সূত্রে এই তথ্য জানা যায়। এ দিকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বিঘ্নিত হয়েছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। ভোগান্তিতে পড়েছে মোবাইল-ইন্টারনেট গ্রাহকরা। একই সঙ্গে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে সিএনজি স্টেশনগুলোতেও। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে দেশের একটি বড় অংশ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল। তবে রাজধানীসহ কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ আসতে শুরু করে।
বিদ্যুতের নিয়মিত লোডশেডিংয়ের মধ্যে হঠাৎ করেই বিদ্যুতের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড ফেল করায় দেশের একটি বড় অংশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় (ট্রিপ) ঘটে। পিজিসিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, গ্রিড ট্রিপ করেছে। কাজ চলছে। কতক্ষণ এমন পরিস্থিতি চলবে বলা যাচ্ছে না।
ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, দুপুর ২টার দিকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের এ ঘটনা ঘটে। আমাদের বুঝতে কিছুটা সময় লেগেছে। সমস্যা সমাধানে পিজিসিবি চেষ্টা করছে বলে আমাদের জানিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিতরণে সরকারি কোম্পানি পাওয়ার গ্রিডের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানান, এই গ্রিডের আওতায় ঢাকা চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ফলে এই চার বিভাগের বিদ্যুৎ নেই বললেই চলে। এই বিপর্যয়ের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি সেই কর্মকর্তা। বলেন, কারণ জানার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের চেষ্টা চলছে।
বিদ্যুতের লোডশেডিং গত তিন মাস ধরে একটি স্বাভাবিক চিত্র। যে কারণে দুপুরের দিকে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর এটি যে বিপর্যয় সেটি বুঝে উঠতেও সময় লাগে। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বিপর্যয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড- পিডিবির চট্টগ্রাম শাখার প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘একটু সমস্যা হয়েছে, আমাদের ইস্টার্ন গ্রিড ফেল করেছে, যমুনার এপাড়ে (পূর্ব) যেটা সেটা। সিলেট পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কাদির বলেন, ‘জাতীয় সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে দেশের পাঁচটি বিভাগই বিদ্যুৎহীন। সব বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ।’ রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থাটির নেত্রকোনা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।’
বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার চালু করতে কত সময় লাগতে পারে- এই প্রশ্নে পাওয়ার গ্রিডের সেই কর্মকর্তা জানান, এতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। কারণ গ্রিড বিপর্যয় হলে সব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তার প্রতিটি ম্যানুয়ালি চালু করতে হয়। এটি আবার বেশ কষ্টসাধ্য এ কারণে যে, বন্ধ কেন্দ্র চালু করতেও বিদ্যুৎ লাগে। সে জন্য দেশে চালু আছে এমন কেন্দ্র থেকে বা চালু করতে বিদ্যুৎ লাগে না, এমন কেন্দ্রে আগে উৎপাদনে নিয়ে আসতে হয়। তারপর সেখান থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে অন্য কেন্দ্র চালু করতে হয়। এভাবে প্রতিটি কেন্দ্রই আলাদা আলাদা চালু করার পর তার আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে হয়।
জাতীয় গ্রিডে ত্রুটির কারণে ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে। সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চলছে, তবে কতক্ষণ লাগবে এখনই বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা সুমন। তিনি আরো জানান, যমুনার এ পাড়ের (দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের) জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কোন কোন জেলা রয়েছে, তা এখনো সুনির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।
পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) শামিম হাসান বলেন, ত্রুটি এখনো আমরা সুনির্দিষ্ট করতে পারিনি। তবে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ রিস্টোর করা হচ্ছে। সিলেটের বিয়ানিবাজারে পর্যন্ত বিদ্যুৎ এসেছে। এদিকে টঙ্গি পর্যন্ত কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমির আলী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর এয়ারপোর্ট ও উত্তরা এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। আশা করছি রাতের মধ্যে আমাদের সম্পূর্ণ বিতরণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে পারব। তিনি জানান, সাড়ে ৬টা নাগাদ প্রায় ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা পেয়েছি। এখন টঙ্গীতে আংশিক, মিরপুর ডিওএইচএস, গুলশানের আংশিক, বসুন্ধরা ও ডিপলোমেটিক জোনে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছি। অন্যদিকে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, শ্যামপুর, ধানমন্ডি, সিদ্ধিরগঞ্জ, কল্যাণপুর, মানিকনগরে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়েছে। অন্যান্য এলাকায় দ্রুত চালু হবে বলে আশা করেন তিনি।
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। মঙ্গলবার বিকালে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের একটি এবং তৃতীয়পক্ষের একটি কমিটি বিভ্রাটের কারণ খুঁজে বের করতে কাজ করবে। প্রতিমন্ত্রী ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সবাইকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ করেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, জাতীয় গ্রিড ট্রিপ করার কারণে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ পূর্বাঞ্চলের বড় একটি এলাকায় গতকাল দুপুর ২টা ৪মিনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। আকস্মিক এই সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। সবার অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ধৈর্য ধারণের অনুরোধ করছি।
"