প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০২ অক্টোবর, ২০২২

যুক্ত করে নেওয়া অঞ্চলে রুশ বাহিনীর বিপর্যয়

লিমান শহর ঘিরে ফেলেছে ইউক্রেনের সেনারা * প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘোষণা জবরদস্তিমূলক * মস্কোর ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রেমলিনে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে ইউক্রেনের বিশাল এলাকাকে নিজেদের ভূখণ্ডভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন ঠিক কিন্তু তা মেনে নেয়নি বিশ্বের অনেক দেশ। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে পুতিন বিজয়ী হবেন বলে ঘোষণা করলেও সেখানে রাশিয়ার সৈন্যরা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন। রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এবং রাশিয়ার অঙ্গীভূত করে নেওয়া এলাকায় অনেক স্থানে রুশ বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনী বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

রার্তা সংস্থাগুলো জানায়, রাশিয়া এক গণভোটের ফলকে বিবেচনায় নিয়ে যে ৪ অঞ্চলকে নিজেদের সীমানার সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তা ইউক্রেনের মোট আয়তনের ১৫ শতাংশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে আর কখনোই কোনো দেশ এত বড় অংশ নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়নি। যে গণভোটের ফলকে ভিত্তি ধরে রাশিয়া এই পদক্ষেপ নিয়েছে ইউক্রেন আর তার পশ্চিমা মিত্ররা ওই ভোটকে ‘অবৈধ ও জবরদস্তিমূলক’ অভিহিত করছে; যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা এরই মধ্যে মস্কোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশ চটজলদি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার আবেদন জমা দিয়েছে। পুতিন যতক্ষণ প্রেসিডেন্ট থাকবেন, ততক্ষণ রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়াকে শাসন করা পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দেওয়া তার অন্যতম জ্বালাময়ী ভাষণে শুক্রবার তার ভাষায় ‘বৃহত্তর ঐতিহাসিক রাশিয়ার’ জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওয়াশিংটন এবং তার মিত্ররাই নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনে ছিদ্র করেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। তবে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি।

অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনে ছিদ্র করার ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা। আর এখন রাশিয়া এ নিয়ে ভুল তথ্য ও মিথ্যায় হাওয়া দিচ্ছে। ইউক্রেনের যে ৪ অঞ্চল গণভোট করে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেই দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার বাসিন্দাদের প্রসঙ্গে ?পুতিন ক্রেমলিনের অন্যতম অভিজাত হলে দেওয়া ভাষণে বলেন, তারা তাদের লোকদের সঙ্গে, তাদের মাতৃভূমির সঙ্গে থাকা, এর ভাগ্য এবং এর সঙ্গে বিজয়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সত্য আমাদের পাশে। রাশিয়া আমাদের সঙ্গে।

এই হলেই রাশিয়ার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সামনে পুতিন ৪ অঞ্চলকে যুক্ত করে নেওয়ার নথিতে স্বাক্ষর করেন। আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে, সব উপায়কে কাজে লাগিয়ে আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করব, বলেন পুতিন। তিনি কিয়েভের শাসকদের অবিলম্বে ‘বৈরিতা বন্ধ করতে’ এবং আলোচনার টেবিলে ফেরারও আহ্বান জানান।

এর পাল্টায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার নতুন কোনো প্রেসিডেন্ট ছাড়া তিনি শান্তি আলোচনায় বসবেন না। সমান, সৎ, মর্যাদা ও ন্যায্যতার শর্তে রাশিয়ার সঙ্গে সহাবস্থানের ধারণার পক্ষে এখনো ইউক্রেন আছে, বলেছেন তিনি। স্পষ্টতই, রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এটা অসম্ভব। তিনি মর্যাদা এবং সততা কী তা জানেন না। আমরা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত, তবে অন্য কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে।

পুতিন তার ভাষণে বলেছেন, ১৯৪৫ সালে জাপানে দুটি আণবিক বোমা মেরে যুক্তরাষ্ট্র এক নজির সৃষ্টি করেছিল। তিনি অবশ্য এদিন তার ভাষণে ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে সরাসরি কোনো হুমকি দেননি। যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একাধিকবারই তাকে এ ধরনের হুমকি দিতে দেখা গেছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, পুতিন ‘উল্টোপাল্টা বললেও’ রাশিয়া ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে যাচ্ছে, মস্কোকে এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো দেখেনি।

শুক্রবার ইউক্রেনের ৪ অঞ্চলকে ভূখণ্ডভুক্ত করে নেওয়ার অনুষ্ঠানে ৬৯ বছর বয়সি পুতিনকে ইউক্রেনের মস্কোপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের হাত মুঠোতে নিয়ে ‘রাশিয়া, রাশিয়া’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নতুন যুক্ত হওয়া অংশগুলো পরিচালনায় এ নেতাদের ওপরই ভরসা করছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close