আরমান ভূঁইয়া

  ০২ অক্টোবর, ২০২২

রাজধানীর মিরপুরে কিশোর গ্যাংয়ের দাপট, ঘুম হারাম

রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের দাপটে অনেকের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হয়েছেন অনেক বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী।

মিরপুর-১১ নম্বর, সেকশন বি-ব্লকের আটকে পড়া পাকিস্তানি নেতা মো. মোস্তাক, লিটন; মিল্লাত ক্যাম্পের সাইমা, শাহজাহান ও রাজিবেরও রয়েছে কিশোর বাহিনী। মিরপুর-১১ নম্বর, সি-ব্লকে মানিক গ্রুপ। মিরপুর-১০ নম্বর, সেকশন এ-ব্লকের পিন্টু, গুড্ডু ও নূর-এ-আলমের রয়েছে কিশোর গ্যাং। মিরপুর-১২ নম্বর, সেকশন ই-ব্লকের আকলিমা বেগম রিনার একটি কিশোর গ্যাং এবং রূপনগর এলাকায় যুবলীগ নেতা অপু ওরফে ছোট অপুর রয়েছে আরেকটি কিশোর গ্রুপ। প্রত্যেক গ্রুপে ১০-১২ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে।

পুলিশের তথ্যে আরো কয়েকটি বাহিনীর নাম উঠে আসে। মিরপুর-১২ নম্বর, ডি-ব্লকে সুমন-ইব্রাহীম বাহিনী, রাজন বাহিনী, দিপু-বাবু বাহিনী, বাবু ওরফে গ্যাং বাবু বাহিনী এবং জনি বাহিনী। মিরপুর-১২ নম্বর ক্যাম্পের মাথায় সজীব বাহিনী এবং শাকিব-আপন বাহিনী। মিরপুর-১০ ও ১১ নম্বর এলাকায় পাগলা নূরু বাহিনী ও রাকিব বাহিনী অন্যতম। ভাষানটেক থানাধীন মিরপুর-১৪ নম্বরের কয়েকটি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে বাগানবাড়ি বস্তির সোহেল গ্রুপ। তার নেতৃত্বে জয়, আদ্বিপ, শুকুর ও রাকিবসহ ১০-১২ জনের একটি গ্যাং গড়ে উঠে। এ গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। তাদের বিরুদ্ধে ওই এলাকায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

কাফরুল থানাধীন রবিন গ্রুপের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় চুরি, ছিনতাই, মাদক সেবন ও বেচাকেনার অভিযোগ রয়েছে। রনির নেতৃত্বে রাব্বি, জীবন, আকাশ মাহমুদ ওরফে রফিক, সাগর, রনি ও রুদ্রসহ ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে।

রূপনগর থানাধীন চলন্তিকা ও ট-ব্লকের এলাকায় সক্রিয় রয়েছে রুবেল গ্রুপ। এ গ্যাংয়ে ১২-১৫ জন সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে ফারুক, মিরাজ, চলন্তিকা বস্তির নীরব ও আকবর অন্যতম। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও মারামারি করার অভিযোগ রয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী সোহেল রানা এ গ্রুপকে ব্যবহার করে গার্মেন্টের ঝুট ব্যবসার ঝামেলায় মারামারিতে ব্যবহৃত করেন। এ বিষয়ে তার বক্তব্য নিতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

এছাড়া চলন্তিকা বস্তি এলাকায় ইয়াসিন গ্রুপ নামে আরো একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। এ গ্রুপে সজল, সাইফুল, নুরনবী, আল হাসান ও কাওছারসহ ১২-১৫ জন সদস্য সক্রিয় রয়েছে।

রূপনগর আবাসিক এলাকায় কিশোরদের নিয়ন্ত্রণ করে ইমন গ্রুপ। ইমনের নেতৃত্বে সাইফুল ইসলাম লিমন, সেলিম ওরফে ডন সেলিম, তায়েব, তোতা, তুষার ও তপু অন্যতম। তাদের বিরুদ্ধে মারামারি, মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের কাছে। এ গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উঠে আসে ৬নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কর্মী সুমন মোল্লার নাম। মঙ্গলবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

মিরপুর মডেল থানাধীন কল্যাণপুর এলাকার রাজত্ব করে কিশোর গ্যাং অপু গ্রুপ। ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তার দলে রয়েছে ১২-১৫ জন সক্রিয় সদস্য। অপু গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক সন্ত্রাসী রিপন ওরফে দাদা রিপন।

কল্যাণপুর নতুনবাজার এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডে আধিপত্য রয়েছে আব্বাস গ্রুপের। লিটন ওরফে হোন্ডা চোরা লিটন ওরফে দাঁতভাঙা লিটন, তাজ উদ্দিন ওরফে তাজু, তানজিল, আরিফ ও রাকিবসহ ২০ জনের অধিক সদস্য এ গ্রুপে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মাদক কারবারির অভিযোগ রয়েছে।

মিরপুর-২ নম্বর ও পীরেরবাগ এলাকায় সক্রিয় ইমন গ্রুপ। এ গ্যাংয়ে ইমন, জয়, মিরাজ, ইমন, মো. ফারুক, আবিদ, মোবারক, সাদিক ও সিয়ামসহ অন্তত ১৫ জন সদস্য রয়েছে। ইমন ও পিয়াস গ্রুপের মদদদাতা নাজিমুর রহমান রুবেল, স্বপন।

৬০ ফিট মসজিদ ও দক্ষিণ পীরেরবাগ এলাকায় সক্রিয় হ্যাপি গ্রুপ। আবির হোসেন হ্যাপির নেতৃত্বে রুবেল, জাকির, আসাদ ও সাগরসহ ২০-২৫ জন সদস্য সক্রিয় রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাই ও মাদক কারবারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে পুলিশের কাছে।

মিরপুর কলওয়ালাপাড়া, ধানখেত মোড় এবং আশপাশ এলাকায় সক্রিয় ভাস্কর গ্রুপ। তার নেতৃত্বে অয়ন, রাজু, শাকিল, মাসুদ, ফয়সাল ও সজীবসহ ১২-১৫ জন সদস্য রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক অভিযোগ। ভাস্কর ডিএনসিসি ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন টিটুর ভাগিনা। অভিযোগ রয়েছে টিটুর ছত্রছায়ায় ভাস্কর গ্যাং পরিচালনা ও এলাকায় উৎপাত করছে। এ বিষয়ে টিটু বলেন, ‘ভাস্কর বিয়ে করেছে। সে এখন এলাকাতেই থাকে না। সে কীভাবে কিশোর গ্যাং পরিচালনা করবে! তাছাড়া এই এলাকায় কোনো কিশোর গ্যাং নেই। এসব অভিযোগ মিথ্যা।’

দারুসসালাম থানাধীন লালকুঠি তৃতীয় কলোনি এলাকার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কিশোর গ্যাং ‘এলকে ডেভিল’ গ্রুপ। গ্যাং লিডার রাব্বির নেতৃত্বে অভি, নিশাত, শাহরিয়ার মাহমুদ, শাকিল, তানিফ, পাইটু, রিজন ও রাফসানসহ অন্তত ২০ জনের অধিক সদস্য রয়েছে। গ্রুপের বেশির ভাগ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ বলছে, এলকে ডেভিল গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের। এ ব্যাপারে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি, বসুপাড়া এবং খালেক সিটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে পটেটো রুবেল গ্রুপ। রুবেল ওরফে পটেটোর নেতৃত্বে জনি, রকি, ইমরান, মাসুদ রানা, সাব্বির, কসাই লিটন, আল-আমিন ও বিপ্লবসহ ১৫ জনের অধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছে। এ গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য মাদকাসক্ত। এলাকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

ইব্রাহিমনামা, মতিননামা, তিনতলা মসজিদ ও এর আশপাশ এলাকায় শফিকুর ইসলামে ওরফে অতুলের নিয়ন্ত্রণে গড়ে উঠে ‘অতুল গ্রুপ’। তার নেতৃত্বে শান্ত, কাউসার, রাকিব, স¤্রাট, আনিছ, মিন্টু মিয়া, শাহ আলম, রাহিতুল ওরফে রিংকু, রিয়াজুল, সুমন, আলামিন, রনি, অরিন ও আহম্মেদ বাদলসহ ২৫-৩০ জন সদস্য রয়েছে। পুলিশ জানায়, এরা মারামারি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে জড়িত।

অতুল গ্রুপের লিডার শফিকুর ইসলাম ওরফে অতুল ও শান্তর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে দারুসসালাম থানায়। অভিযোগ রয়েছে, এ গ্রুপের সদস্যরা তুচ্ছ কারণে এলাকায় মারধর এবং হট্টগোলে জড়ায়। পুলিশের তালিকায় এ গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উঠে আসে ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি সাইদুর রহমান ওরফে বাপ্পি ও রায়হান। এ ব্যাপারে তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

শাহ আলী থানাধীন গুদারাঘাট, কাজী ফরী স্কুল, বাজার ও আশপাশের এলাকায় সক্রিয় জুয়েল গ্রুপ। জুয়েলের নেতৃত্বে বিপুল, বাবু ওরফে রোহিঙ্গা বাবু, আরিফ, রেজা, মেহেদী, মিন্টু ও মনিরসহ এ গ্রুপে ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা বাবু শাহ আলী থানা ছিন্নমূল হকার্স লীগের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে ফুটপাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। জুয়েল গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অভিযোগ রয়েছে থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে সেন্টু।

কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ ও মদদদাতাদের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দীন মোল্লা বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা সব সময়ই কাজ করছি। বিশেষ করে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি থানা পুলিশ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close