প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ঘরে ঘরে ‘চোখ ওঠা’ রোগ

দেশের বিভিন্ন জায়গায় চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থীও রয়েছে। তবে এ রোগে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে বলছেন। সতর্ক না হলে এ রোগ থেকে কর্নিয়ার আলসার ও অন্ধত্বের মতো গুরুতর অবস্থাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, ‘চোখ ওঠা’ রোগকে কনজাংকটিভা বা চোখের প্রদাহ বলা হয়। এদিকে চোখ ওঠা রোগে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ অন্য শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ার ব্যাঘাত ঘটছে। সিলেট, সিরাজগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থেকে প্রতিনিধিরা এসব খবর জানাচ্ছেন।

সিলেট : তিন সপ্তাহ থেকে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিটি ঘরেই চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। প্রথম দিকে সংক্রমণের হার কম থাকলেও বর্তমানে ব্যাপক হারে বাড়ছে এ রোগীর সংখ্যা। ‘চোখ ওঠার’ সঙ্গে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ভুগছেন অনেকে। বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় করছেন তারা। তবে বেশিরভাগই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সংক্রমণের পর সিলেটজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সিলেট নগরীর তাঁতিপাড়া এলাকার বাসিন্দা সামিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে হালকা জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত হই। পরদিন থেকেই চোখ জ্বালাপোড়া শুরু হয়। তিন দিন পর আমার কমলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। একে একে সবাই আক্রান্ত হয়েছে।’

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথমে স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে এ রোগটি দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে বাড়ির প্রতিটি ঘরে বিভিন্ন বয়সিরা আক্রান্ত হয়। সবাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছে।’

গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মুয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘ঘরের সবাই এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কেউ কেউ তিন দিনে ভালো হয়েছে। তবে একই এলাকার অনেকে এক সপ্তাহেও ভালো হননি।’

জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নন্দন কুসুম দাস বলেন, এটি একটি সিজনাল ও ভাইরাসজনিত রোগ। প্রতি বছর দু’বার এমনকি তিনবারও এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।

তিনি বলেন, যদিও চোখ ওঠা রোগটি অত্যন্ত সংক্রামক। তবে কারো চোখের দিকে তাকালেই সংক্রমিত হয় না। যদি কোনো সংক্রমিত রোগী চোখ স্পর্শ করে এবং সে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে না ধুয়েই যদি কোনো কিছুতে স্পর্শ করে, তবে ভাইরাস ওই বস্তুতে চলে যায়। এখন যদি অন্য কেউ ওই বস্তু স্পর্শ করে এবং হাত না ধুয়ে চোখ স্পর্শ করে, তাহলে তার চোখও সংক্রমিত হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বললে বা একসঙ্গে কাজ করলে তার থেকে সংক্রমিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ডা. নন্দন কুসুম বলেন, কখনো কখনো চোখণ্ডওঠা রোগীদের সেকেন্ডারি ইনফেকশন থেকে রক্ষা করতে তাদের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপের প্রয়োজন হয়। তবে বেশিরভাগ রোগী বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে যায়। সাধারণত এটি ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে কমে যায়।

তিনি বলেন, এ রোগকে একেবারে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। কখনো কখনো এটি চোখের কর্নিয়ায় ছড়ায়। এতে কর্নিয়ার আলসার এমনকি অন্ধত্বের দিকে চলে যেতে পারে। কর্নিয়ায় ‘ইনফেকশন’ হলে সুস্থ হতে দুই-তিন মাস সময় লাগতে পারে।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক আরো বলেন, স্কুলগামী শিশুদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের উচিত তাকে স্কুলে না পাঠিয়ে বাসায় রাখা। আর এসএসসি পরীক্ষার্থী কেউ আক্রান্ত হলে তাকে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। কোনোভাবে যাতে তার ব্যবহৃত কোনো খাতাণ্ডকলম অন্য পরীক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে না পারে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সচেতনতাও জরুরি।

জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম আবদুল আহাদ বলেন, হাসপাতালে শতকরা ১৫ শতাংশ রোগী আসছেন চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়ে। তিনি বলেন, এ রোগে আক্রান্তদের আমরা ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকি। এটি সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণের কারণে ঘটে। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগ?ঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১০০-এর বেশি রোগী আসছেন চোখ ওঠার চিকিৎসা নিতে। ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে হাজারের বেশি কনজাংটিভাইটিস আক্রান্ত রোগী সেবা নি?য়ে?ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগই একই পরিবারের সদস্য।

এ বিষয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুল হক বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চোখের মণি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক এবং এন্টিভাইরাল দিয়ে থাকি।

সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় বলেন, এই রোগে করণীয় নিয়ে প্রত্যেকটি হাসপাতালে নির্দেশনা দিয়ে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ফ?রিদ শেখ বলেন, ‘চোখ ওঠার সমস্যাটি ঋতু পরিবর্তনের সময় হয়ে থাকে। তবে এ বছর সংক্রমণের সংখ্যা বেশি। তিনি কালো চশমা ব্যবহারের পরামর্শে দিয়েছেন।’

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজার কমলগঞ্জে এক সপ্তাহে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন উপজেলার দুই থেকে তিন হাজার মানুষ। হাসপাতালে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে।

চিকিৎসকরা জানান, কনজাঙ্কটিভাইটিসের লক্ষণ হলো চোখের নিচের অংশ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে ব্যথা বা অস্বস্তি। প্রথমে এক চোখ, পরে অন্য চোখও আক্রান্ত হয়। চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে। চোখের নিচের অংশ ফুলে ও লাল হয়ে যায়। আলোয় চোখে অস্বস্তি বাড়ে।

উপজেলা সদর ছাড়াও গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কিছু নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার কথা বলেন তিনি।

চিকিৎসকরা বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহারের রুমাল, তোয়ালে, গামছা, বালিশ অন্যরা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া এটি বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাবান পানি দিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই হাত পরিষ্কার করতে হবে। চোখ ভেজা থাকলে টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিয়ে অবশ্যই ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিতে হবে। হাত দিয়ে চোখে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ধুলাবালি ও ধোঁয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে ড্রপ ও ঔষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া জানান, করোনায় যে রকম স্বাস্থ্যবিধি ঠিক অনেকটাই ওই রকমই মানতে হয়। তবে ড্রপ ব্যবহারের আগে এর মান ও মেয়াদ সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close