নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ডেঙ্গুর বিস্তার থেমে নেই, আশ্বিনেও আক্রান্ত ৪৮২

বর্ষাশেষে শরতের দ্বিতীয় মাস আশ্বিনেও থেমে নেই ডেঙ্গুর বিস্তার। প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করছেন এমন একজন কীটতত্ত্ববিদ আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতি আরো তিন সপ্তাহ থাকতে পারে। বর্ষায় পানি জমলে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তারের সমস্যা এবার হওয়ার কথা ছিল না। কারণ, এবার বৃষ্টি ঝরেনি সেভাবে, জল জমাটের সমস্যাও ছিল না এ কারণে যে, যতখানি পানি ছিল, তা তীব্র রোদে শুকিয়ে গেছে অনায়াসে। এমন আবহাওয়াতেও ডেঙ্গুর বিস্তার কিন্তু থেমে নেই। দুই সপ্তাহ আগে রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা তমা রহমান আক্রান্ত হন ডেঙ্গুতে। হাসপাতালে ছিলেন ছয় দিন। এখন সুস্থ, তবে ধকল রয়ে গেছে গায়ে।

তমা রহমান বলেন, ‘বাসায় ছোট সন্তান থাকায় গাছ বা পানি জমে থাকার মতো কিছু ঘরে রাখি না। তবুও কীভাবে আক্রান্ত হলাম জানি না। খুব ভুগিয়েছে এবার। জ্বর, বমি থেকে শুরু করে প্লাটিলেট কমে প্রায় ২০ হাজার হয়ে যায়। অনেক কষ্টের পর সুস্থ হয়েছি।’

বর্ষায় পানি জমলে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তারের সমস্যা এবার হওয়ার কথা ছিল না। কারণ, এবার বৃষ্টি ঝরেনি সেভাবে, জল জমাটের সমস্যাও ছিল না এ কারণে যে, যতখানি পানি ছিল, তা তীব্র রোদে শুকিয়ে গেছে অনায়াসে।

কত রোগী : ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরো ৪৮২ নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং একই সময়ে ডেঙ্গুতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরো ৪৮২ জন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩২৮ জন এবং ঢাকার বাহিরে সারা দেশে ১৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বর্তমানে সারা দেশে সর্বমোট এক হাজার ৬৯২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজার ২৯৪ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে ৩৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ১৪ হাজার ৩৬২ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ১১ হাজার ৭১ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট তিন হাজার ২৯১ জন।

একই সময়ে সারা দেশে ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ১২ হাজার ৬১৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা মোট ৯ হাজার ৭৫১ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা মোট দুই হাজার ৮৬৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৫৩ জন মারা গিয়েছেন।

গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৮ হাজার ২৬৫ জন এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১০৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হিসাব বলছে, এবার মোট ৪৫টি জেলায় রোগী পাওয়া গেছে। গত বছর সংখ্যাটি ছিল ৫৮, তার আগের বছর ৬৪ জেলার প্রতিটিতে ছড়ায় রোগী। সে বছর সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।

ঢাকার পর এবার রোগী বেশি কক্সবাজারে। এই পরিস্থিতির জন্য ঘনবসতিপূর্ণ রোহিঙ্গা শিবির ও তাদের অসচেতনতাকে দায়ী করা হচ্ছে।

প্রকোপ আর কত দিন : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে। এখন মনে হচ্ছে এটি আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত থাকতে পারে।

তিনি জানান, তাপমাত্রা, লেগরেইন ফল (১৫ দিনের বৃষ্টি) আদ্রতা, ডেঙ্গু রোগীর ঘনত্বসহ কয়েকটি বিষয় বিশ্লেষণ করে একটি মডেলিং করে ডেঙ্গুর বিস্তার সম্পর্কে পূর্বানুমান করেন তারা।

অধ্যাপক কবিরুল বলেন, পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে যদি হটস্পট ম্যানেজমেন্ট চালু করতে না পারি। হটস্পট ম্যানেজমেন্ট বলতে যেসব হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে সেখান থেকে রোগীর বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের বাড়ির আশপাশের ৫০০ গজের মধ্যে ফগিং করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলা। এতে যারা সুস্থ আছে তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে।

কী করছে নগর কর্তৃপক্ষ : এডিস মশার যে প্রকৃতি, তাতে এগুলোর জন্ম ও বংশবিস্তার প্রধানত মানুষের বাড়িঘর বা কার্নিশ অথবা ছাদে হয়ে থাকে। নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদে জমে থাকা পানিও একটি বড় সমস্যা তৈরি করছে এ কারণে যে, প্রায়ই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা একটি বড় সময় ধরে কর্মস্থলে থাকে না। এই সময় এডিস মশা জন্ম নেয়। নগর কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর ধরে নগরবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি শাস্তির ব্যবস্থাও করছে। শাস্তি হিসেবে প্রধানত জরিমানা করা হচ্ছে, কোথাও কোথাও গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছি। এর মধ্যে আমরা ড্রোনের মাধ্যমে ছাদবাগানগুলো দেখছি। সেখানে পানি জমে থাকলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close