গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ছয় সংকটে থমকে আছে পায়রা বন্দরের কাজ

ছয় ধরনের সংকটে থমকে আছে পটোয়াখালীর পায়রা বন্দরের কার্যক্রম। এর জন্য পুরোপুরি গতি আনতে পারছে না বন্দরটি। এখন দরকার সরকারের সদিচ্ছা, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। বন্দর-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সংকট সমাধান ছাড়া গভীর সমুদ্র বন্দরের তকমা পাবে না এ বন্দরটি। তারা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ তৈরিতে পদ্মা সেতু যে সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে, নানা সংকটে বন্দরটি ততই পিছিয়ে পড়ছে। তাই বন্দরটির আধুনিকায়নে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, উন্নয়নের কাছাকাছি পৌঁছেও সুফল না পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সংকটগুলো হচ্ছে- পায়রা বন্দরের প্রকল্পের তুলনায় অপ্রতুল বরাদ্দ; কাজ সম্পন্নের জন্য দ্রুত বরাদ্দ ছাড় আবশ্যক, বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ শেষে পূর্ণাঙ্গ বন্দর চালুর লক্ষ্যে বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত ফরিদপুর-কুয়াকাটা মহাসড়কটি ন্যূনতম চার লেনে উন্নীত করা, বন্দরকে আরো গতিশীল, সাশ্রয়ী মূল্যে এবং নিরবচ্ছিন্ন পণ্য পরিবহনে ভাঙ্গা-পায়রা রেল সংযোগ নির্মাণ করা, বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং পর্যটকসহ যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে পায়রা বন্দর এলাকায় বিমান সুবিধা যোগ করা, বন্দরের কাজের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জনবল বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষার জন্য নিজস্ব ড্রেজিং সক্ষমতা ও দক্ষ ড্রেজিং টিম গঠন করা। তবে নানামুখী সংকট সত্ত্বেও এ বন্দরের সুযোগ ও সম্ভাবনা কিছুটা বেড়েছে। এর মাধ্যমে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। কারণ বন্দর থেকে উপার্জিত রাজস্বে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ।

বন্দরটিকে ঘিরে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনার মধ্যে প্রাথমিকভাবে চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৮৯০টি জাহাজ নিরাপদে বন্দরে ভিড়েছে; যার মধ্যে দেশি ৬৪৪টি ও বিদেশি ২৪৬টি। নোঙর হওয়া এসব জাহাজ থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৫৮১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা এবং আগামী বছর বন্দরের প্রথম টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হলে রাজস্ব আয় আরো বাড়বে।

রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় পায়রা বন্দরের সমস্যা ও সম্ভাবনা-সংক্রান্ত উপস্থাপিত কার্যপত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

কমিটির ৪৩তম বৈঠকের সিদ্ধান্তে দেখা গেছে, পায়রা বন্দর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৫ হাজার ২২৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ হয়েছে এ বন্দরে। যার মধ্যে ভূমি একোয়ার করার জন্য ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭৮৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যার মধ্যে আর্থিক অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর পায়রা বন্দরের ডিটেইলড মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের ক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি ৭৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ওই কাজের ৮৭ শতাংশ।

এ ছাড়া বন্দরের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার কারণে সাড়ে ৩ হাজার পরিবার পৈতৃক ভূমি হারিয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন করতে হয়েছে সরকারকে। এ পুনর্বাসনে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৯০৫ কোটি টাকা। বাকি ২ হাজার ৫৩৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকার মধ্যে চার লেনের ৫.২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ৩০৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয় হয়।

এ ছাড়া বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৮টি সহায়ক জলযান ক্রয় বাবদ ২৮০ কোটি ৭৭ লাখ বিনিয়োগ করা হয়; যা ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সরকারের রাজস্ব আয় হচ্ছে। বাকি বরাদ্দ থেকে বন্দরের উন্নয়নে ক্যাপিটাল ও মেইনটেনেন্স ড্রেজিং এবং মূল বন্দরের টার্মিনাল, ইয়ার্ড, সার্ভিস জেটি, ওয়্যারহাউস ইত্যাদিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ চলছে। এটির কাজ সম্পন্ন হলে রাজস্ব আয় আরো বাড়বে বলে প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে।

নথির তথ্য মতে, পায়রা বন্দরটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতেও নানা ধরনের সুবিধা সংযোজন কাজ চলছে। এর মধ্যে কাস্টমস সেবা, ইমিগ্রেশন, পোর্ট হেলথ, এমএমডি ও কোয়ারেন্টাইন সেবা বন্দর এলাকায় নিশ্চিত করা। মূল বন্দরের সঙ্গে রাজধানীর ঢাকার আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতিকল্পে পায়রা বন্দর-ভাঙ্গা মহাসড়কটি এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নতীকরণ, ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগের নিমিত্তে পায়রা বন্দর-ভাঙ্গা ব্রডগেজ রেললাইন স্থাপন, পায়রা বন্দরের কম্পোনেন্ট হিসেবে অত্র অঞ্চলে একটি কার্গো এয়ারপোর্ট নির্মাণ করা। পায়রা বন্দরের রামনাবাদ চ্যানেল থেকে ঢাকা পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌপথকে নিয়মিত ড্রেজিং করে ৫ মিটার বা তদূর্ধ্ব ড্রাফটের লাইটার জাহাজ চলাচলের উপযোগী করার মাধ্যমে বন্দর থেকে রাজধানী ঢাকা, মুক্তারপুর, পানগাঁও ও আশুগঞ্জ কনটেইনার ডিপোসহ সমগ্র বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিভাগে একাধিক শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং আন্তর্জাতিক সেমিনার ও ট্রেড ফেয়ারে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম ও সম্ভাবনা তুলে ধরা।

এই সম্ভাবনাগুলো অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে আটকে আছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ চাইছে দ্রুত সরকার এ সংকট উত্তরণে হস্তক্ষেপ করুক। যার মাধ্যমে বন্দরটি স্বাভাবিক গতিতে ফিরবে। স্বাভাবিক বাণিজ্য কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে বন্দরটি। একই সঙ্গে বাড়ছে সরকারের রাজস্ব আয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close