নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বাজল পূজার ঘণ্টা মহালয়ায় সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হচ্ছে আগামী ১ অক্টোবর থেকে। হিন্দু আচার অনুযায়ী মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আশ্বিন মাসের এই শুক্ল পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের শুরু হয় যে অমাবস্যায়, সেদিন হয় মহালয়া। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় কাত্যায়নী মুনির কন্যারূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সারা দেশের মন্দিরে-মণ্ডপে শুরু হয় মহালয়ার আচার। ঘট স্থাপন ও পূজার মধ্য দিয়ে চলেছে ‘মহাশক্তি, মহামায়া, দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে নেমে আসার আবাহন।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহালয়ার মূল আচার শুরু হয় রবিবার সকাল ১০টায়। এ সময় দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। মন্দিরের পুরোহিত বরুণ চক্রবর্তী বলেন, মহালয়ায় প্রথমে চণ্ডীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। এ সময় মঙ্গলঘট স্থাপন করে তাতে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে করা হয় পূজা। এ ছাড়া সারা দিনই বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা থাকে মহালয়ায়।

দেবীপক্ষের আগের পক্ষ হলো পিতৃপক্ষ। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোক বা যমলোকে বাস করেন। আর এই পিতৃলোকের অবস্থান স্বর্গ ও মর্ত্যরে মাঝামাঝি স্থানে। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যু দেবতা যম। তিনি সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। এরপর পরের প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে আগের প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন। একই সঙ্গে পরমাত্মায় বা ঈশ্বরে বিলীন হন। এ কারণে মহালয়ায় হিন্দুরা তাদের পূর্বে মারা যাওয়া তিন প্রজন্মের ব্যক্তিদের স্মরণ বা তর্পণ করে থাকেন। এ দিন শ্রদ্ধানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি দেন তারা।

হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিন শুক্লপক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব। রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামেও পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকালবোধন।

শাস্ত্র বলছে, মহাসপ্তমীর দিন রবিবার হওয়ায় তিনি আসবেন হাতিতে। শাস্ত্রমতে, গজ দেবীর উৎকৃষ্টতম বাহন। তাই দেবীর আগমন বা গমন হাতিতে হলে মর্ত্যলোক ভরে উঠে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে; পূর্ণ হয় ভক্তদের মনোবাঞ্ছা। পরিশ্রমের সুফল পায় মর্ত্যলোকের অধিবাসীরা। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি নয়, ঠিক যতটা প্রয়োজন ততটা বর্ষণ।

আগামী ৫ অক্টোবর বুধবার পড়েছে বিজয়া দশমী। মা দুর্গা পুত্র-কন্যাসহ কৈলাশে ফিরবেন নৌকায় চেপে। শাস্ত্রমতে, সপ্তমী বা দশমী বুধবার হলে দেবীর আসা বা যাওয়া নৌকায়। ফল ‘শস্য বুদ্ধিস্তথাজলম’ অর্থাৎ প্রবল বন্যা ও খরা দেখা যায়। নৌকায় মনোকামনা পূর্ণ হওয়া সূচিত হয়। ধরিত্রী হয়ে ওঠে শস্য-শ্যামলা। কিন্তু সেই সঙ্গে অতিবর্ষণ বা প্লাবনের আশঙ্কাও দেখা যায়।

দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতায় মুখর হয়ে উঠেছে মন্দির-মণ্ডপ; শেষ মুহূর্তে দেবী দুর্গা, স্বরসতী-লক্ষ্মী-গণেশ প্রতিমা রাঙিয়ে তোলায় ভীষণ ব্যস্ত সময় যাচ্ছে প্রতিমা শিল্পীদের। এ বছর সারা বাংলাদেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি পূজামণ্ডপে উদযাপন করা হবে শারদীয় দুর্গোৎসব; যা গত বছরের চেয়ে এবার পূজার সংখ্যা বেড়েছে ৫০টি। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের থেকে ৬টি বেশি।

গত বছর শারদীয় দুর্গোৎসবে কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ দেশের নানা জেলায় মন্দিরে-মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুরসহ নানা সহিংসতার ঘটনায় সরকার এবার নিরাপত্তা ইস্যুটিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কঠোর নজরদারি জারি করা হয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ গুজব রটালে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close