নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় পরিচয়পত্রে ফের দিতে হবে আঙুলের ছাপ
চার আঙুলের ছাপ দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্রধারী (এনআইডি) নাগরিকদের ফের ১০ আঙুলের ছাপ দিতে হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিতে যাচ্ছে। আগামী বছরই এ কার্যক্রম শুরু করবে কমিশন।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের ত্রৈমাসিক সভায় এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর এই তথ্য জানান। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। তবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, আমরা সেবা দিই। কিন্তু গতি বাড়াতে না পারলে নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অনেস্টি, সিনসিয়ারিটি যদি থাকে, তাহলে আমরা পারব। অতীতের চেয়ে গতি বেড়েছে, কিন্তু আরো বাড়াতে হবে। বর্তমানে যে হালানাগাদ করা হচ্ছে, এই ভোটার তালিকা দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। সুতরাং অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনোভাবেই কেউ যেন বাদ না পড়ে এবং কেউ যেন দ্বৈত ভোটার হতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যোগ করেন তিনি।
এনআইডি মহাপরিচালক বলেন, আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে চাই। ভুয়া ভোটার শনাক্ত ও নির্ভুল ভোটদানের সুযোগ দিতে বিদ্যমান এনআইডিতে নেওয়া ভোটার নাগরিকের ফিঙ্গার প্রিন্ট আপডেট করা প্রয়োজন। যারা এরই মধ্যে স্মার্টকার্ড নিয়েছেন; সঙ্গে দিয়েছেন ১০ আঙুলের ছাপ তাদের আর নতুন করে এটা দেওয়া লাগবে না। যারা দিতে পারেননি কিংবা দেননি তাদের এটা দিতে হবে। ডিজি বলেন, আমরা কমিশনের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা করেছি। চলমান হালনাগাদ শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের (আগামী বছরের ২ মার্চ) পরপরই এই কার্যক্রমে যাব। এ সময় তিনি কর্মকর্তাদের ভোটার তালিকা হালনাগাদের ক্ষেত্রে বেশকিছু দিক-নির্দেশনা দেন।
এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, যারা নতুন ভোটার, তাদের এসএসসি, পিএসসি, জেএসসি প্রয়োজনে জন্মনিবন্ধন দেখে নিচ্ছি, যাতে ভুল না হয়। একটি বিষয় সতর্ক থাকতে বলবো, যারা বয়স্ক ব্যক্তি তাদের যেন সচেতনভাবে যাচাই-বাছাই করে ভোটার করা হয়। ঢাকায় নানা ধরনের মানুষ বসবাস করেন। আফ্রিকা থেকে ল্যাটিন আমেরিকার লোকজন বসবাস করেন। কাজেই তারাও ভোটার হতে চাইতে পারেন। পরিপূর্ণ তথ্য না দিলে ভোটার করবেন না। তিনি বলেন, বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিজীবী রেশন তোলার জন্য তিন-চার বছর পর একজন স্ত্রীর নাম দিয়ে থাকেন। এখন সত্যিকার যখন বিয়ে হয়, তখন যার সঙ্গে বিয়ে হয়; সে নামের সঙ্গে ওই আগের নামের মিল থাকে না। পেনশনে জটিলতা সৃষ্টি হয়। তখন সংশোধনের জন্য আসেন। আবার জন্মসনদ দুটো, তিনটা কার্যকর থাকে। আপনারা এসব ক্ষেত্রে খুব সতর্ক হবেন। যদি বয়স্ক কেউ ভোটার হন, দুটো জন্ম সনদ থাকে, তবে ধরে নেবেন- ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’। আর যদি একেবারে নতুন ভোটার হন তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদ তো রয়েছে। সেটা ফলো করতে হবে। ওয়ারিশান সনদটা ভালো করে দেখে নিয়েন, যেন ছোট ভাই, বড় না হয়ে যান। এসব বিষয় খেয়াল রাখবেন। এমনও দেখা যায় যে, ড্রাইভিং লাইলেন্স আছে, দেখা গেল সেটা ৫৯ বছরে পেয়েছেন। ৬০ বছর বয়সে চাকরি পেয়েছেন। কাজেই এনআইডিটা করে দিলে চাকরিটা তিনি করতে পারবেন কি-না ৩০-৪০ বছর? বিদ্যুতের লাইনম্যানের ক্ষেত্রেও এমন বিষয় আসে।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রবাসীদের ভোটার করার ক্ষেত্রে সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। তাদের জন্য একটা পৃথক ডেস্ক খুলেছি। তার অর্থ এই নয়, রোহিঙ্গার দ্বিতীয় জেনারেশন সৌদি আরব থেকে যেন এসে ভোটার হয়ে যাবে।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, আমাদের চারপাশে দালাল শ্রেণি আছে। প্রতিনিয়ত আপনাকে-আমাকে বিক্রি করছে। এদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলবেন না। পত্রিকায় এসেছে যে, দিনাজপুরে নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে কান্না করতেছে যে, আমাকে একটু জীবিত করে দেন, আমি মরি নাই। তখন আমরা আপনাদের সফটওয়্যার দিয়ে দিলাম, সেখান থেকে এখন সেটা ঠিক করতে পারছেন। আমরা এবার ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত নিচ্ছি। আগামী বছর বয়স হয়তো আরো পেছনে যাব, এভাবে হয়তো ফাইভ পাস করলেই এনআইডি কার্ড দেব।
"